স্বরূপ দত্ত
নরেন্দ্র মোদি এই যে গত ৮ নভেম্বর ঘোষণা করে দিলেন যে, ৫০০ টাকা এবং হাজার টাকার নোট বাতিল। তারপর থেকে তিনি কত কী বলছেন। বিরোধীরা একেবারে উল্টো সুরে কথা বলছেন। আর দেশের মানুষ বুঝতে পারছেন আসলে ঠিক কে। অথবা কেউ কিছু বুঝতে পারছেন না। যা বোঝার বুঝছে একমাত্র ‘সময়’। তাঁর থেকে বেশি জ্ঞাণী এই সৌরজগতে আর কে আছে! তবে, একটা কথা ঠিক। সে মোদীই হন অথবা বিরোধীরা। সবাই বেরিয়েছেন ‘চোর’ ধরতে।
পরের জিনিসে না বলে হাত দিতে নেই। বিদ্যাসাগরের যে বই পড়ে আমাদের অক্ষরজ্ঞাণ হয়, সেখান থেকেই কথাটা আমাদের শেখানো হয়। তারপর বাড়ির বাবা-মা এবং গুরুজনরা শেখান ছোট ছোট জিনিস দিয়ে। না বলে অন্যের জিনিসে হাত দিতে নেই। অন্যের চিঠি পড়তে নেই। অন্যের ডায়রির পাতা খুলতে নেই। উদাহরণগুলো আলাদা-আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু শেখার পরামর্শ ‘কমন’। অন্যের অনুমতি ছাড়া, তাঁর ইচ্ছে ছাড়া, তাঁর জিনিস তোমার ভেবে নেওয়াটা ভদ্রতা বা সভ্যতা আরও বেশি করে সততা শেখায় না।
এসব শিক্ষা পৃথিবীর প্রায় শুরুর দিন থেকেই ছিল। আর সেই প্রায় শুরুর দিন থেকেই ছিল চোরেরাও। অন্যেরটা না বলে নিয়ে যাওয়ার থেকে মজার আর কিছু হয় নাকি! আর সেই মজাটাই বীরত্বে পরিণত হয়ে যায়, যখন অন্যের জিনিস জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া যায়। চোরেরই তো বড়দা ডাকাত। কোহিনুর চুরি আর হবে কী করে! সে তো লুঠ। ডাকাতি।
আজ পুরনো নোট বাতিলের পর থেকে লোকের বাড়ির বাথরুম, পুকুরের জল, রাস্তায় পড়ে থাকছে লাখো-লাখো নোট। নতুন নোট সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে একটাও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ, সেই নতুন নোটই লোকের বাড়ির বাথরুম থেকে পাওয়া যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার। ভাবছিলাম পৃথিবীর সেরা চোর কে? কত কত নাম এলো মনে। আমাদের কোহিনুরই হোক। অথবা কোনও বিজ্ঞানীর সারা জীবনের গবেষণার পেপারই হোক। কিংবা কোনও দেশের কোনও গুপ্ত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া। কত কত উদাহরণ। আপনি নিজেই মিনিট দশেক ভাবুন। মাথাটা এতটাই ঘেঁটে যাবে যে, এক কাপ চা ছাড়া আর মাথা যন্ত্রণা কাটবে না। সব শেষে সুকুমার রায়ের মতোই চোরের উপসংহারে এলাম – পাউরুটি আর ঝোলাগুড়ের মতো।
পৃথিবীর সর্বকালের সবথেকে নিকৃষ্ট চোরদের জন্ম এই আমলেই। এই শতাব্দীতেই। কম্পিউটার, ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে। চোর এখানে আধুনিক! ইনজিরিতে কেতাদুরস্ত নাম তার। ‘হ্যাকার’। ভাবছিলাম। চোর-ডাকাতের মান সম্মান আর এরা রাখলো না এতটুকুও। না হলে কোনও আত্মসম্মানবোধ ধাকা চোরও হ্যাকার হতে পারে! অন্যের জিনিসটা নিজের বলে পকেটে ঢুকিয়ে নেওয়া নয়। তার জিনিস নিজের মতো করে ব্যবহার করা। অনেকটা, অন্যের মনের মধ্যে ঢুকে পড়া! সেই হ্যাকার বা চোর নামক মানুষটার অস্তিত্ব কোথায় এই পৃথিবীতে? সে তো নিজের মনেই বাঁচতে চায় না। চায়, লোকের মনে বাঁচতে!
এই বিষয় নিয়ে লেখার বা বলার অনেক কিছু। একটা উপন্যাস শেষ করতে কটা দিনই বা লাগবে। এখন দরকার নেই। পরে কখনও হবে। আপাতত, এটুকুই বলার। মানুষ চোরকে চিরকাল ঘেন্নার চোখেই দেখেছে। কিন্তু এই হ্যাকার সম্প্রদায় চোরদের চোখেও বড় নিচে নেমে গিয়েছে! চোররাই কোনওদিন হ্যাকারদের মেনে নেবে না, চোর বলে। এতে চোরদের সম্মানহানি হবে। আপনি কী বলেন? পারবেন, আপনার নিজের মনকে বিসর্জন দিয়ে অন্যের মনে ডেরা বাঁধতে? ভেবে দেখুন। পারলে জানাবেন। ভালো লাগবে।
(এই লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত। এর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ডট কম একমত হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।)