স্বরূপ দত্ত

মাঝে-মাঝেই খানিকটা সময় কাটাই যুবরাজ সিং নামটা নিয়ে। তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার নিয়ে। তাঁর জীবন নিয়ে। আর অবশ্যই তাঁর বাবা যোগরাজ সিংকে নিয়ে। যুবরাজ এখন আর দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেন না। খুব একটা সম্ভাবনাও দেখি না, ভারতীয় দলে তাঁর ফিরে আসার। ধোনি কিংবা বিরাট কারওরই খুব একটা যুবরাজ প্রীতি কোনওদিন ছিল না। বরং, যোগরাজ তো সরাসরি ধোনির দিকে কতবার তোপই দেগেছেন, যুবরাজকে দল থেকে বাদ পড়ার জন্য। প্রশ্ন, যুবরাজকে নিয়ে এত ভাবার কী আছে? আমার পাঁচ বাক্যের উত্তর। কেন? কেন কাটাই এতটা সময় যুবরাজকে নিয়ে?

১) ভারতীয় সিনেমায় হাজারো ‘নায়ক’ এসেছেন। কিন্তু হৃত্বিক রোশনের মতো ‘এন্ট্রি’ কারও নেই। না, নেই। আপনার ‘কহো না প্যার হ্যায়’ জঘন্য সিনেমা মনে হতে পারে। কিন্তু সেই সিনেমাটা ১০০টা পুরস্কার পাওয়া! আসমুদ্র হিমাচলকে ‘সাঁকো নাড়ানোর মতো করে নাড়িয়ে দিয়েছিল যেন’। ক্রেডিট হৃত্ত্বিককে দিতেই হবে। যুবরাজও এ দেশের ক্রিকেটে হৃত্ত্বিকের মতোই এন্ট্রি নিয়েছিলেন। মনে করে দেখুন।

২) একটা টি২০ বিশ্বকাপ। একটা একদিনের ম্যাচের বিশ্বকাপ। দুটো বিশ্বকাপজয়ী দলের ক্যাপ্টেনের নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু ওই দুই বিশ্বকাপে যুবরাজের পারফরম্যান্স ছাড়া কে জেতাতেন বিশ্বকাপ ভারতকে?

৩) এ দেশের ক্রীড়াজগতকে ক্যানসার বলে যে মারণরোগ নাড়িয়ে দিয়েছিল দুজনকে। তাঁর দুজনই অন্য ধাতুতে গড়া। একজন লিয়েন্ডার। একজন যুবরাজ। বিশ্বের যাঁরা এঁদের সমালোচনা করেন, তাঁরা আর কী করতে পারেন বলুন তো? কাউকে নিয়ে আলোচনা বা প্রশংসা করতে গেলেও যে নিজেদের যোগ্যতা লাগে।

৪) দেশের কোন বলিউড হিরোইন যুবরাজের প্রেমে পড়েননি! দীপিকা পাড়ুকোন থেকে কিম শর্মা। বিরাটের যেমন অনুষ্কা। রবি শাস্ত্রীর যেমন অমৃতা সিং। আজাহারউদ্দিনের যেমন সঙ্গীতা বিজলানী। তেমন যুবরাজের সঙ্গে কত কত সুন্দরী! এত মেয়ে কোনও পুরুষের পিছনে দৌড়লে, অন্য পুরুষদের বুক জ্বলবে। তাই ফের সমালোচনা করবেন। কিন্তু মেয়েরা, সেই পুরুষদের সঙ্গ না দিয়ে ঠিক যুবরাজের মতো পুরুষই খুঁজে নেবেন।

৫) যুবরাজের বাবা যোগরাজ। এই মানুষটার মুখ ঠিক মুখ নয় যেন। কামানের গোলা। তিনি যখন যা বলেন, সেটাই এ দেশের সংবাদমাধ্যমের পরের এক সপ্তাহের আলোচনার বিষয় হয়। আসলে যোগরাজ সিংয়ের বুকে বেশ কয়েকটা দাবানল আছে যেন। নিজে ‘যোগ্য’ ক্রিকেটার ছিলেন। অযোগ্য লোকেদের কলকাঠিতে সেভাবে উঠতে পারেননি। সেইজন্যই স্ত্রী শবনমের গর্ভে বানিয়েছেন একটা দমদার পুরুষকে। যে, চিরকাল দুজনের জন্য খেলবে। একটা তাঁর নিজের জন্য। আরেকটা তাঁর বাবার জন্য। যুবরাজের পারফরম্যান্সটা তাই অত বেশি দেখতে লাগে। আসলে ওটা যুবরাজের এবং যোগরাজের পারফরম্যান্স! বাপ-বেটার দুজনের পারফরম্যান্স বলেই না দুটো বিশ্বকাপ দেশকে উপহার।

সেই প্রিয় যুবরাজের সদ্য বিয়ে হল। হেজেল বেশ ‘লক্ষ্মী মেয়ে’। বলছি, কারণ, বিগ বসে হেজেলকে দেখেছি। বেশিদিন টিকতে পারেননি। এটাতেই বোঝা যায়, কতটা সরল, সাদাসিধে মেয়ে তিনি। যুবরাজকে ঠিক ভালো রাখবেন। তবে, এই লেখার আসল উদ্দেশ্য যুবরাজ একা নয়। তাঁর বাবা যোগরাজ সিং। তিনি আজ একটা কথা বলেছেন। সেটাতেই মনের ‘সাঁকোটা’ নড়ে উঠল। হেজেলের বিয়ের সময় ধর্মের কারণে, তাঁর নামটা বদলে দেওয়া হয়। হেজেল কিচের নতুন নাম হয়, গুরবসন্ত কৌর। আমরা সকলেই ব্যাপারটা জানি। কারণ, বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সেটাও তো আজ তিন সপ্তাহ হতে চলল। আমাদের কারও মনে কোনও প্রশ্ন জাগেনি। বরং, মনে হয়েছিল- হতেই পারে। এটা ওঁদের ধর্মের রীতি বোধহয়। এতে খারাপের তো কিছু নেই।

আজ বোমাটা ফাটালেন যুবির বাবা যোগরাজই। তিনি যা বলেছেন, সেটা আগে পড়ে নিন। যোগরাজের আজকের কথা – ‘হেজেলের নাম পাল্টানোটা বোকার মতো কাজ। আমার এসবে কোনও বিশ্বাস নেই। সেইজন্যই আমি ছেলের বিয়েতেও যাইনি। কোনও বাবা এসে বলবেন আর মেয়ের নাম পাল্টে ফেলতে হবে! এরকম বোকা-বোকা বিষয়ে আমার কোনও বিশ্বাস নেই। আমার কাছে হেজেল চিরকাল শ্রীমতি হেজেল যুবরাজ সিং-ই থাকবে।’ জানি না, আপনার কেমন লাগলো। আমার আজ যোগরাজের কথাগুলো বেশ লাগল। পরে আরও ভাববো। যেমন প্রায়ই যুবরাজের কথা ভাবি। আসলে যুবরাজদের দেওয়া বিনোদনটা শুধু উপভোগ করার নয়। আপনাকে জানতে হবে, যুবরাজ কোন ‘বিদ্যালয়ে’ তৈরি হচ্ছে। কীভাবে হয়েছে সেটা। তবেই না যুবরাজ সিংদের মতো করে নিজের ঘরেও একজন পরবর্তী যুবরাজ বা যুবরানি বানাতে পারবেন। আজ যোগরাজ সিংকে একটা স্যালুট। দম আছে লোকটার। সংস্কার মানেন না বলে, প্রিয় ছেলের বিয়েতেও থাকেন না। ভেবে দেখবেন। অত সোজা নয়। তাই তিনি যুবরাজ সিংয়ের বাবা। দেশকে দুটো বিশ্বকাপ জেতানো ক্রিকেটারের বাবা।

(এই লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত। এই মতের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ডট কম একমত হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।)





Source link

Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *