জি ২৪ ডিজিটাল ব্যুরো: ভারত-পাকিস্তান (India Vs Pakistan) সংঘর্ষের সময় শয়তান দেশকে সশস্ত্র ড্রোন এবং অপারেটর সরবরাহ করেছিল তাদের মিত্র দেশ তুর্কিয়ে। এরপরেই তুর্কিয়ে বয়কটের ডাক উঠেছে দেশ জুড়ে (Boycott Turkey)। যে যে ভারতীয় তুর্কিয়ে এবং আজারবাইজান ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত বদল করতে শুরু করেছেন। একাধিক বুকিং ওয়েবসাইট জানিয়েছে যে, ভূরি ভূরি বুকিং বাতিল হচ্ছে।
তুর্কিয়ে পুরোপুরি বয়কট করলে কিন্তু ভয়ংকর সর্বনাশ ডেকে আনবে ভারত। রাতারাতি অচল হয়ে যাবে দেশ। বলা ভালো ভারতের সিংহভাগ উড়ানই মুখ থুবড়ে পড়বে। তুর্কিয়ে জয়েন্ট-ভেঞ্চার কোম্পানি সেলিবি এভিয়েশন। তারা দিল্লি, মুম্বাই এবং চেন্নাই-সহ দেশের ৯টি ভারতীয় বিমানবন্দরে উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তার কাজে যুক্ত। প্রতি বছরে ভারতে ৫৮০০০ ফ্লাইট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সেলিবি এভিয়েশন!
আরও পড়ুন: তুর্কিয়ে বয়কটেই ভয়ংকর সর্বনাশের ইশারা! রাতারাতি অচল হবে ভারত, সব রেখে এখনই পড়ুন…
সেলেবি এভিয়েশন মূলত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, কার্গো ম্যানেজমেন্ট এবং এয়ারসাইড অপারেশনসের কাজগুলি করে। বিমানবন্দরের পরিবেশ কিন্তু সংবেদনশীল এবং নিয়ন্ত্রিত প্রকৃতির। এখানেই শেষ নয়, মাথায় রাখতে হবে তা সরাসরি বিমানের সঙ্গেই যুক্ত। যে কারণেই তা উচ্চপর্যায়ের হিসেবে ধরা হয়। সেলেবি কর্মীরা এয়ারসাইড জোনে কাজ করেন, যা বিমানবন্দরের হাই-সিকিউরিটি জোন। সেলেবি কর্মীরা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত জিনিসপত্র সহ কার্গো লজিস্টিক এবং যাত্রীদের লাগেজও পরিচালনা করেন। সেলেবির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বলছে, তারা ভারতে প্রতিবছর ৫৮,০০০ এরও বেশি ফ্লাইট এবং ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টনেরও বেশি পণ্য পরিবহন করে। সেলেবির কর্মী সংখ্যা ৭৮০০ জন।
তবে সেলেবিকে অবিলম্বে ভারত থেকে উত্খাত করার ডাক দিলেন ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর সিনিয়র ফেলো সুশান্ত সারিন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘সেলেবি একটি তুর্কি কোম্পানি এবং তাদের ছুড়ে ফেলার জন্য এটাই যথেষ্ট কারণ। তুর্কিরা সন্ত্রাসীদের সমর্থন করে, তারা মোটেই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ নয়। তুরস্ক ভারতবিরোধী, প্রতিকূল প্রচারণায় জড়িত এবং ভারতীয় মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার উস্কানি দেয়। ভয়াবহ কার্যকলাপে জড়িত। ভারতীয়রা তুর্কিয়েতে নিরাপদ নয় এবং এই সন্ত্রাসীদের ভারতে ব্যবসা করার কোনও কারণ নেই। পাকিস্তানে যান এবং সেই দেউলিয়া দেশ থেকে যা পারেন তা নিয়ে যান।’
শিবসেনা নেতা মুরজি প্যাটেলের নেতৃত্বে, মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক প্রতিনিধিদল সেলেবির পরিষেবা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। তুর্কি বয়কটের দাবি আরও তীব্রতর হচ্ছে। বিমান চলাচল পরামর্শদাতা সঞ্জয় লাজ়ার উল্লেখ করেছেন যে, ২৬/১১-এর পরে, ইউপিএ আমলে সেলেবিকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল এবং তখনও ট্রেড ইউনিয়নগুলির বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তারপর থেকেই ভারত-তুর্কিয়ে সমস্যার কারণে যখনই বিষয়টি সামনে এসেছে, তারা তাদের তুরস্কের মালিকানা ঢাকার চেষ্টা করেছে!
রাষ্ট্রপতি রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের অধীনে তুরস্ক ইসলামিক মোড় নিয়েছে এবং কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। ২০২৩ সালে সেই দেশে বিশাল ভূমিকম্প হয়েছিল। এরপরই তুরস্ককে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছিল ভারত। নাম ছিল-‘অপারেশন দোস্ত’। তবে, ইস্তানবুল ড্রোন পরিচালনার জন্য কর্মী সরবরাহ করেছিল এবং ভারত আক্রমণে সাহায্য করেছিল। সেলিবির রক্ষাকবচ হয়ে দাড়িয়েছেন প্রাক্তন নাটো ইন্টেলিজেন্স অফিসার হারুন রেসিত আইদিন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে সুশান্তকে পালটা দিয়ে লেখেন, ‘যদি কিছু বলতে চান, তাহলে অন্তত কিছু সঠিক তথ্য জানুন। সেলেবি এভিয়েশন এর্ডোয়ানের কোনও কন্যার মালিকানাধীন নয়। এটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এক সুপরিচিত বহুজাতিক কোম্পানি। যার প্রতিষ্ঠাতা আলী কাভিত সেলেবিওগলুর পরিবারের অন্তর্গত এবং বিশ্বব্যাপী প্রধান বিমানবন্দরগুলি পরিচালনা করে।’
সেলেবিই একমাত্র তুর্কি প্রতিষ্ঠান নয়, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভারতের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইন্ডিগো, টার্কিশ এয়ারলাইন্স এবং কোরেন্ডন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোড শেয়ার চুক্তি এবং তুর্কি সংস্থাগুলি থেকে বিমান ভাড়া নেওয়ার জন্য প্রবল জনরোষের মুখে পড়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসও ফেব্রুয়ারিতে তার বোয়িং ৭৩৭ বহর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টার্কিশ টেকনিকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেও সমালোচিত হয়েছে। সেলেবি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের সাথে ভারতে প্রবেশ করেছিল। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা প্রদানের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
এক বছরের মধ্যে সেলেবি আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতে তার কার্যক্রম দু’টি সংস্থার অধীনে নিবন্ধিত করে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর জন্য সেলেবি এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস ইন্ডিয়া এবং নতুন দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো পরিষেবার জন্য সেলেবি দিল্লি কার্গো টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট ইন্ডিয়া চালু করে। গত এক দশকে এই দুই প্রাথমিক স্টেশন ভারত জুড়ে ন’টি বিমানবন্দরের নেটওয়ার্ক প্রসারিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুম্বই, দিল্লি, কোচি, কান্নুর, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, গোয়া, আহমেদাবাদ এবং চেন্নাই।
আরও পড়ুন: গগনভেদী গর্জন করেছে ‘সুদর্শন চক্র’, এবার ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্রের ত্রিফলা! DRDO একাই ১০০
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)