কলকাতা: পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি বার বার শোনা গিয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মুখে। এবার রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গকে দেশের উত্তর-পূর্বের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানালেন। শুধু দাবি জানানোই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদনও জানিয়ে এসেছেন তিনি। সুকান্তর দাবি, উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের অন্তর্ভুক্ত করলে এলাকার উন্নয়ন হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আরও বেশি পাওয়া যাবে। এতে রাজ্য সরকারেরও আপরত্তি থাকার কথা নয় বলে দাবি তাঁর। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এর কড়া জবাব দিয়েছেন। সুকান্তর এই দাবির নেপথ্যে আসলে বাংলাভাগের চক্রান্ত রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। (Sukanta Majumdar)
অরুণাচলপ্রদেশ, অসম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা, এই সেভেন সিস্টার্স স্টেট এবং ব্রাদার স্টেট সিকিমের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে শামিল করার দাবি জানিয়েছেন সুকান্ত। উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে সুকান্তর বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে প্রস্তাব তুলে দিয়ে এসেছি, যাতে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের কী কী মিল, কীভাবে উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেই প্রেজেন্টেশন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেটির বিচার করবেন এবং তাতে আগামী দিনে যদি উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যুক্ত হয় উত্তরবঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গের অংশ হিসেবেও যদি যায়, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, এলাকার উন্নয়ন হবে। আমার মনে হয় এতে রাজ্য সরকারের আপত্তি থাকবে না, তাদের সহযোগিতা পাব আমরা।” (North Bengal)
সুকান্তর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁর বক্তব্য, “মন্ত্রী হিসেবে সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়েছিলেন। এই দাবি সংবিধানের পরিপন্থী। উত্তরবঙ্গ বলে আলাদা কোনও ভূখণ্ড ভারতে নেই। যে আটটি জেলাকে উত্তরবঙ্গ বলা হচ্ছে, সেগুলি পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ৪০টি নতুন রাজ্যের দাবি পড়ে রয়েছে। আগে সেগুলি নিয়ে বিবেচনা করুন, তার পর বাংলা নিয়ে ভাববেন।”
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: লোকসভায় B-U-D-G-E-T ব্যাখ্যা অভিষেকের, সৌমিত্র-কল্যাণ দ্বৈরথ, স্পিকারের সঙ্গেও চলল সংঘাত
তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বলেন, “ওরা প্রথম থেকে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে দার্জিলিংয়ে চুক্তিবদ্ধ ছিল। অমিত শাহের সঙ্গে দিল্লিতে এসে কথাও হতো গোর্খাল্যান্ডের সপক্ষে। এখন উত্তরবঙ্গ নিয়ে ওই দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমার মনে হয়, উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে বিজেপি-র, ওদিকে চলে গেলে, সেটুকুও থাকবে না। বাংলাকে বিভাজন করার প্রচেষ্টা চলছে। প্রথম থেকে এটাকে রুখে আসছি। সুকান্তর এই কথা আমরা সমর্থন করি না, তীব্র ভাবে এর প্রতিবাদ করছি।”
এর পাল্টা বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “সর্বভারতীয় বিজেপি মনে করে, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান ভৌগলিক সীমারেখা অটুট রেখেই, সেখানে সার্বিক আর্থসামাজিক উত্তরণ এবং উন্নয়ন সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি যাঁরা সৃষ্টি করেছেন, সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, এনসি চট্টোপাধ্যায় রমেশচন্দ্র মজুমদার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রানি জ্যোতির্ময়ী, মেঘনাদ, এঁদের প্রত্যেকের আবেগ জড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। পরিস্থিতির বাধ্যককতায় ১৯৪৭ সালের ২০ জুন জ্যোতি বসুরাও এর পক্ষে ভোট দেন। আমরা বাংলাভাগের পক্ষে নই, এটা অপপ্রচার। তবে বঞ্চিত, অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া উত্তরবঙ্গের স্লোগান দিয়েছিলেন সব রাজনীতিক। মুখ্যমন্ত্রী কাঞ্চনকন্যা তৈরি করেছেন, কিন্তু বাজেট বরাদ্দ যা তাতে চিঁড়ে ভেজে না। জল গলম করা যায় না। যে টাকা ধার্য করেন তিনি, একবারই তা থেকে সর্বোচ্চ ৪২ শতাংশ খরচ হয়েছে। ওখান থেকেও টাকা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।”
তবে শমীক এই দাবি করলেও, বাংলাভাগের দাবি তুলে বিজেপি-র অস্বস্তি বাড়িয়েছেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বিজেপি সাংসদ অনন্ত মহারাজের। তাঁর দাবি, উত্তর-পূর্বের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে যুক্ত করা নিয়ে আগেই কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু পৃথক গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য আগে করতে হবে, তার পর উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যুক্ত করা হোক পশ্চিমবঙ্গকে। পৃথক গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র, দাবি অনন্তের। ফলে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চরমে উঠেছে। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, “কেন্দ্র ওঁর সঙ্গে গোপনে কী প্রেমালাপ করেছে, তা আমাদের জানার কথা নয়। যেভাবে ওঁরা বলছেন, তা মস্তিষ্ক বিকৃতির পরিচয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী কথাবার্তাকে সামনে রেখে নিজেদের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছেন আসলে। এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা কী আছে! আলাদা রাজ্য চান বলতেই পারেন! আর সুকান্ত মজুমদার যদি এতই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন চাইতেন, তাহলে বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো উত্তরবঙ্গের জন্য স্পেশ্যাল প্যাকেজ চাইতে পারতেন মোদির কাছে! এসব কথা না বলে ধানাইপানাই করে মানুষকে ভাঁওতা দিচ্ছেন।”
আরও দেখুন