‘যেন কোনও কুকুর-বিড়াল মারা গেছে…’,৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ডেথ সার্টিফিকেট পেল না অভয়ার পরিবার

সমীরণ পাল, কলকাতা : গত অগাস্টের ৯ তারিখ। আর জি কর হাসপাতালের বুকে ঘটে যায় নারকীয় হত্য়াকাণ্ড। কর্তব্য়রত তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ, খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে! সেই ঘটনার পর সাত মাস কেটে গেছে। কিন্তু এখনও মেয়ের ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পাননি আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবা। এনিয়ে ফের একবার প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তাঁরা। আর জি কর হাসপাতাল সূত্রে খবর, বিষয়টি সমাধানের জন্য়, শুক্রবারই স্বাস্থ্য় অধিকর্তাকে চিঠি লিখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার এবিষয়ে জানানো হবে।
এ প্রসঙ্গে নিহত নির্যাতিতার বাবা বলেন, “৩১ তারিখে আর জি করের MSVP-কে একটা আবেদন লিখে দিই। সুপারকে দেওয়া হলে তখন উনি বলেন, দুই দিনের মধ্যে আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ওখান থেকে তারপরে আর জি কর দিতে পারে না…। তারপরে সেখান থেকে বলেন যে, ১ নম্বর বোরো অফিস থেকে দেবে। বোরো অফিসে গেলে বলছে, এগুলো আমরা কী করে দেব। আর জি কর চত্বরে মারা গেছেন, আর জি কর হাসপাতালই দেবে। উনি গত পরশু দিন বলেছেন, চারদিন আমাকে সময় দিন। এরমধ্যে আমি স্বাস্থ্যভবন থেকে আলাদা অনুমতি নিয়ে এসে ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করছি। এমএসভিপি বলেছেন। কিন্তু, মূল সমস্যা হচ্ছে, আমার মেয়ের যে আর জি করে মৃত্যু হয়েছে, সেই যে ডিক্লেয়ারেশন সার্টিফিকেট …যিনি তখন মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন, সেই মেডিক্যাল অফিসার সার্টিফিকেটটা দেনইনি। ডেড ডিক্লেয়ারেশন সার্টিফিকেটটাই করেননি।”
তাহলে কী করে পোর্সমর্টেম হল ? এবিপি আনন্দর প্রতিনিধির এই প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিতার বাবা বলেন, “সেটাই তো আমাদের প্রশ্ন। আশ্চর্যের বিষয়। কতটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বিষয়টাকে। সেই জিনিসগুলো দিনদিন আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে। এরপরে যদি আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই, আমরা কি খুব অন্যায় করে ফেলব ?”
নির্যাতিতার মা বলেন, “পরে আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম যে এটা তো একটা প্রাতিষ্ঠানিক খুন। তার যাঁরা সিনিয়র ডাক্তার ছিলেন…আমরা কী করে জানব সেখানে কী করতে হয়….এখন শুনছি যাঁরা ইনডোর রোগী ভর্তি হন, তাঁদের ছাঁড়া আর জি কর দিতে পারে না। তার যাঁরা সহকর্মী ছিলেন, তাঁরা তাকে তো ডিপার্টমেন্টেই ভর্তি করিয়ে দিতে পারতেন। তার যে ভিপি, তিনিও কি এগুলো জানতেন না ? এইচওডি যিনি…তাঁদের কি কোনও দায় ছিল না আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য ? তার মৃত্যুর সময় থেকে তাকে ওখানে একটা কর্মরত ডাক্তারই মনে করা হয়নি। দেহ চুল্লিতে ঢোকানো পর্যন্ত মনে হয় যেন, কোনও একটা কুকুর-বিড়াল মারা গেছে। কোনওরকমে দায় সারতে পারলে বেঁচে যায়। সেরকম একটা বেআব্রু দশা সেদিন দেখতে পেয়েছিলাম। তার একটা প্রত্যক্ষ প্রমাণ হচ্ছে, আমরা ৭ মাস পরেও ডেথ সার্টিফিকেট পাচ্ছি না। ”
আরও দেখুন