কলকাতা : ‘তেনুঘাটা থেকে আচমকা ও বিশাল পরিমাণে ডিভিসির ছাড়া জলেই ভাসছে বাংলা। এটা ম্যান মেড পরিস্থিতি।’ এমনই অভিযোগ তুলে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনিয়ে তিনি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেছেন বলে জানান। যদিও ডিভিসি জানিয়েই জল ছেড়েছে, খাল সংস্কার করেনি কেন রাজ্য সরকার, এই প্রশ্ন তুলে পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপি। 

একদিকে প্রবল বৃষ্টি, অন্যদিকে ক্রমশ জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াচ্ছে ডিভিসি। যার ফলে ভাসছে বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়ার দামোদর তীরবর্তী অঞ্চল। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে রাজনীতির পারদও।

এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ DVC-কেই কাঠগড়ায় তুলছে নবান্ন। রবিবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘এখনই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনজির সঙ্গে কথা বললাম। তাঁর সঙ্গে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তেনুঘাটা থেকে হঠাৎ ও প্রচুর পরিমাণে জল ছাড়া নিয়ে কথা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই জল বাংলা বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে। আমি ওঁকে বলেছি যে, ঝাড়খণ্ডের জল বাংলায় বন্যা নিয়ে এসেছে। এটা ম্যান-মেড ! আমি ওঁকে এ ব্যাপারে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। এর মধ্যে আমি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছিলাম। দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের সংশ্লিষ্ট সব জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। জেলাশাসকদের নির্দিষ্টভাবে নজরদারি চালাতে বলেছি। আগামী ৩-৪ দিন তাঁদের বিপর্যয় সংক্রান্ত সমস্যায় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যাতে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে সেজন্য তাঁদের আগাম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

 

ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক বৃষ্টির জেরে, মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ে কেন্দ্রের অধীনস্থ DVC। সেই জল এসে জমা হয় দুর্গাপুর ব্য়ারাজে। এই পরিস্থিতিতে, দুর্গাপুর ব্য়ারাজ থেকে জল ছাড়তে বাধ্য হয় রাজ্য়ের সেচ দফতর। ফলে বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অত্য়ন্ত উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

এনিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘বাজেটে বন্যা ত্রাণের জন্য পশ্চিমবঙ্গকে এক টাকাও দেওয়া হয়নি। অন্যান্য রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে। সাবধান না করে DVC-র হঠাৎ জল ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে কূ-পরিকল্পনা থাকতে পারে, যেন বন্যা হয়। ওপর থেকে নির্দেশ আসতে পারে। আমি আশ্চর্য হব না যে, ডিভিসির ওপর স্বয়ং নরেন্দ্র মোদির নির্দেশ যদি থাকে। ম্যানমেড ফ্লাডের ব্যবস্থা করার জন্য ওপর থেকে যদি নির্দেশ আসে আমি আশ্চর্য্য হব না। এরমধ্যে একটা ষড়যন্ত্রের রূপরেখা আছে।’

পাল্টা বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার জবাব, ‘ডিভিসি সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেই জল ছেড়েছে। আর যদি জল না ছাড়ে, ওপরে বর্ষা হচ্ছে, তাহলে কি বাঁধ ভেঙে দিতে চায় ? বাঁধ ভেঙে গেলে কত বড় ক্ষতি হবে ! সারা দক্ষিণবঙ্গ ভেসে যাবে। সমস্যার সমাধান না করে শুধু রাজনীতি করছে। সারা বছর কী করে ? সারা বছর একটিও খাল সংস্কার করেছে ? একটিও নদী সংস্কার করেছে?’

প্লাবন পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতির টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। কিন্তু, বছর বছর এই দুর্ভোগের কবল থেকে কবে রেহাই পাবে গ্রাম-বাংলার মানুষ?

আরও দেখুন





Source link

Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *