জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: প্রথম ছবিতেই পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। কিন্তু সেই জাতীয় পুরস্কারের পরেও বলিউডে নাম পেতে যথেষ্ট স্ট্রাগল করতে হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীকে (Mithun Chakraborty)। ফুটপাতে দিন কেটেছে, নাম পরিবর্তন করে নেচেছেন হেলেনের পিছনেও। সোমবার ছিল অভিনেতার ৭৫তম জন্মদিন। দশকের পর দশক মিঠুন প্রমাণ করেছেন, তিনি শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি বলিউডের ডান্সিং কিং, যিনি ১৯৮০-এর দশকে “আই অ্যাম এ ডিস্কো ডান্সার” গানে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
শুরুর লড়াই: জাতীয় পুরস্কার, কিন্তু কাজ নেই
১৯৭৬ সালে মিঠুন তাঁর প্রথম ছবি মৃগয়ার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। ছবির পরিচালক ছিলেন মৃণাল সেন। কিন্তু এই সম্মান তাঁর কেরিয়ারে বিশেষ সাহায্য করেনি। এক সাক্ষাৎকারে মিঠুন বলেন, “আমার জাতীয় পুরস্কারটাকেও অনেকেই সিরিয়াসলি নেয়নি। আমি এমনকি খলনায়কের চরিত্র করতে রাজি ছিলাম, কারণ অনেকে আমার চেহারা নিয়ে উপহাস করত।”
আরও পড়ুন- Sunjay Kapur Company’s Future Owner: স্ত্রী-সন্তানেরা নন, করিশ্মার প্রাক্তন সঞ্জয়ের ১০৩০০ কোটির সম্পত্তি সামলাবেন…
ডান্সার থেকে সুপারস্টার: ‘ডিস্কো ডান্সার’
মিঠুন একসময় নিজের নাম বদলে রানা রেজ রেখে হেলেনের নৃত্যদলে ব্যাকআপ ডান্সার হিসেবে কাজ করতেন। হেলেন তার নাচে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তাকে একবার ৩০ মিনিটের জন্য স্টেজে একক পারফরম্যান্সের সুযোগ দেন। তার কেরিয়ারের মোড় ঘুরে যায় ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবি দিয়ে। এটি ছিল বলিউডের প্রথম ১০০ কোটি টাকার হিট সিনেমা। বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গীত আর মিঠুনের নাচ দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। সিনেমাটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে অনেকেই শুধু নাচ দেখার জন্যই বারবার হলে যেতেন। যদিও ছবিতে এমন কিছু দৃশ্য ছিল যেগুলো এখন ‘ক্রিঞ্জ’ বলে মনে হতে পারে—যেমন, একটি গিটারের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নায়িকার মা মারা যান। কিন্তু সেসময় এরকম কনটেন্ট ছিল একেবারেই নতুন এবং এক ধরনের দৃষ্টিনন্দন অভিজ্ঞতা দিত, কারণ তখন তো ইউটিউব বা মিউজিক ভিডিও ছিল না।
সুপারস্টার থেকে হোটেল ব্যবসায়ী
ডিস্কো ডান্সারের পর একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন মিঠুন। ৮০-এর দশকে তিনি বছরে গড়ে ১০-১২টি ছবি করতেন এবং ১৯৮৬ সালে দেশের সবচেয়ে বেশি কর দেওয়া অভিনেতা হন। কিন্তু এই ছবিগুলোর মান খুব একটা ভালো ছিল না। ৮০ দশকের শেষে গোবিন্দা, জ্যাকি শ্রফ, অনিল কাপুর, এরপর সলমান ও আমির আসতেই মিঠুনের তারকা সময় ধীরে ধীরে শেষ হতে থাকে। তখন মিঠুন এক বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নেন—তিনি উটি-তে গিয়ে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এবং ৪ কোটি নিজের টাকা দিয়ে একটি হোটেল তৈরি করেন। দক্ষিণী সিনেমার শ্যুটিং ও পর্যটকদের ভিড়ে এই ব্যবসা জমে ওঠে। তবে এই সময়ে তিনি বি-গ্রেড সিনেমার অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হতে থাকেন। সেই ‘ট্যাগ’ তার সঙ্গে লেগে থাকে অনেক বছর।
আরও পড়ুন- Haryana Model Murder Case: শ্যুটে গিয়ে মারধর ‘বিবাহিত’ প্রেমিকের! ২ দিন বাদে খাল থেকে উদ্ধার মডেলের গলাকাটা দেহ…
ছোটপর্দায় নতুন পরিচয়
২০০০-এর দশকে ডান্স ইন্ডিয়া ডান্সে মিঠুন নতুনভাবে ফিরে আসেন মানুষের মনে। এখানেই অনেকে বুঝতে পারেন, এই মানুষটা আসলে একজন আইকনিক পারফর্মার ও নৃত্যশিল্পী। মিঠুন চক্রবর্তী যদি ৭০-এর দশকে তার প্রথম হিট পেতেন, তবে হয়তো অমিতাভের প্রতিদ্বন্দ্বী হতেন। আর ৯০-এর দশকে এলে গোবিন্দার সঙ্গে টক্কর দিতেন নাচে। তবুও, বলিউড এবং বাংলা—দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই তিনি তার যোগ্য সম্মান পেয়েছেন। যে ইন্ডাস্ট্রি আজ তাকে সম্মান জানায়, তারাই একসময় তার প্রতিভাকে ঠিকমতো ব্যবহার করেনি। কিন্তু মিঠুন কখনও হাল ছাড়েননি, আর সেটাই তাকে সত্যিকারের ‘ডান্সিং সুপারস্টার’ করে তুলেছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)