উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : ফের সংবাদের শিরোনামে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। গতকাল তাঁর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি কবে তৃণমূলে যাচ্ছেন ? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তর গতকাল উড়িয়ে দিয়েছিলেন আইএসএফ বিধায়ক। আজ এবিপি আনন্দর-প্রতিনিধির মুখোমুখি হয়ে কী বললেন তিনি ?
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি তাঁকে প্রশ্ন করেন, কবে যাচ্ছেন ?
উত্তরে নওশাদ হাসিমুখে বলেন, “এটা নিয়ে মনে হয় আপনি এধাকিকবার একাধিক সময়ে আপনি আমায় প্রশ্ন করেছেন। গতকাল একজন প্রশ্ন করেছেন, আপনি তৃণমূলে কবে যোগদান করছেন ? আপনি কোথায় যাওয়া কথা বলছেন ?”
তখন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি তাঁকে বলেন, আপনি তো নিজেই বললেন যে প্রশ্ন করেছে, তৃণমূলে কবে যাচ্ছেন ? কোনও তারিখ ঠিক হয়েছে ?
উত্তরে নওশাদ বলেন, “আমি একটা দলের চেয়ারম্যান। এই দলটা করতে গিয়ে ১৩টা মামলা খেয়েছি। আমার ৪জন ছেলে শহিদ হয়েছে এই দলটার জন্য। প্রায় ১০ হাজার মামলা খেয়েছে। তাঁদের ডুবিয়ে দিয়ে আমি অন্য কোনও জায়গায় যেতে পারি না।”
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : এগুলো তো সব অতীত। কিন্তু বর্তমান হচ্ছে, আপনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ মিনিট বৈঠক করলেন। সাম্প্রতিক কালে কোনও বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেছেন ?
নওশাদের বক্তব্য, “কার সঙ্গে করেছেন কী করেননি বলতে পারব না। আমার সঙ্গে ২০ থেকে ২২ মিনিট করেছেন এবং এটা বলছি অন ক্যামেরা, আমি যে ব্যাপারটা নিয়ে গিয়েছিলাম, তিনি মনোযোগ সহকার শুনেছেন।”
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি : গতকাল বিধানসভায় অভিযোগ করেছেন যে, বিরোধী দলের বিধায়কদের টাকা খরচ করতে দেওয়া হয় না। সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ। তারপর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আপনি ২২-২৩ মিনিট মিটিং করলেন (আপনার কথা অনুযায়ী)? একটু অন্য রকম লাগছে কী ?
নওশাদের বক্তব্য, “আপনারা অন্যভাবে দেখতে পারেন। আমি আমাদের রাজ্যের অভিভাবিকার কাছে আমার সমস্যা, ভাঙড়ের সমস্যা নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছি। তাঁকে জানিয়েছি। বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এটা আমাদের সঙ্গে অবিচার হচ্ছে। জানিয়ে এসেছি। এবার দেখার বিষয়, ওঁকে জানিয়েছি। উনি কী পদক্ষেপ নেন। “
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি: ভাঙড় নিয়ে এর আগে যত রকম সমস্যা হয়েছে একবারও মুখ্যমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলেছে ?
নওশাদের বক্তব্য, “না, আমি একবার গিয়েছিলাম। তখন ওঁর মূল্যবান সময় দেননি। “
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি: হঠাৎ কেন ভোটের এক বছর আগে কেন তিনি মূল্যবান সময় দিতে শুরু করলেন ?
নওশাদের বক্তব্য, “সেটা আপনি মুখ্যমন্ত্রীকে আপনি জিজ্ঞাসা করুন। তখন কেন দেননি সেটাও জিজ্ঞাসা করুন। আর গতকাল কেন দিল সেটাও আপনারা জিজ্ঞাসা করুন। তবে, একটা কথা বলে গিয়েছিলাম, যদি সময় না দেন আমি ওখানে প্রয়োজনে বসে থাকব। ওঁর যখন মূল্যবান সময় হবে তখন আমি দেখা করব।”
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি: বিষয়টা তো এমন নয় যে আপনি নবান্নে গেলেন, মুখ্যমন্ত্রী সময় দিলেন। বিষয়টা আগে থেকে ঠিক করা ছিল যে আপনি যাবেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গেলেন, তিনি আপনার কথা শুনলেন , ভাঙড় নিয়ে আলোচনা হল…কী আলোচনা হল আমরা জানতে চাই না…কিন্তু মানুষ বলছে আপনি কি সরাসরি দলে যোগ দেবেন, নাকি আইএসএফ আসন সমঝোতায় যাবে ?
নওশাদের বক্তব্য, “এখানে ১১টায় সাংবাদিক বৈঠক করার পরেই আমরা ওদিকে রওনা হব শোনার পরেই, আমি গতকালও বলেছি, আজও বলছি …শাসকদলের কোনও এক বিধায়ক আমাকে ডাকেন, আমার কথাটা শোনেন। না এটা অন্যায় হয়েছে, এটা দিদিমণি চান না। আমি বললাম, যদি চান না, তাহলে আমার কথা বলার ব্যবস্থা করুন। নাহলে আমি যাব ওখানে বসে থাকব। বাংলা দেখবে যে একটা বিধায়ককে সময় দিচ্ছে না। তখন ব্যবস্থা করেছেন।”
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী আপনার উপর এতখানি ভরসা রাখছেন ?
নওশাদের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী আমার উপর ভরসা রাখছেন কি না বলতে পারব না। একজন বিধায়ক ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গতকাল অন-ক্যামেরা বলেছি, আজ অন-ক্যামেরা বলছি। “
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি: আজও যদি অন-ক্যামেরা দাবি করেন, তাহলে মুখ্যমন্ত্রী আপনার সঙ্গে বসবেন ?
নওশাদের বক্তব্য, “সেটা বলতে পারব না। আমাকে সময় দেবেন কি দেবেন না।”
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি: বিজেপি বলেছে, নওশাদ সিদ্দিকি তিনি তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন, তাতে কিছু যায় আসে না।
নওশাদের বক্তব্য, “তৃণমূল তো আজও বলে বেড়াবে, আজও দেখুন, যে আমি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আছি। যেসব বমপন্থীরা বলছেন, তাঁরা বামপন্থীর নামে ধান্দাপন্থী। প্রকৃত বামপন্থীকে স্যালুট করি। ধান্দাপন্থীদের আমি স্যালুট করি না। একজন বিধায়ক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে গতিবিধি খারাপ বলছেন যে ধান্দাপন্থীরা তাঁকে বলছি। “
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি: আজকের দিন দাঁড়িয়ে কী বলবেন, মুখ্যমন্ত্রী ভালো ?
নওশাদের বক্তব্য, “আমি গিয়েছি। আমার কথাটা এতটুকু শুনেছেন। ইতিপূর্বে গিয়েছিলাম, সময় দেননি। গতকাল সময় দিয়েছেন। আমার যে অভিযোগ তাঁকে জানিয়েছি। আমি এক সপ্তাহ অপেক্ষা করব, আমার যে দাবি ছিল সেগুলো পূর্ণ হল কি না।”
আরও পড়ুন ; নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ২৫ মিনিট বৈঠক, ‘কবে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন ?’ উত্তরে যা বললেন নওশাদ…