কলকাতা : প্রয়াত রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত । বারাণসীর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বারাণসীর থিওজফিক্য়াল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ২৩ অক্টোবর বারাণসীতে বক্তৃতা দিতে গেছিলেন। বারাণসীর অনুষ্ঠানেই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় পঙ্কজ দত্তর।
বক্তৃতা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নাক-মুখ দিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। একমাসেরও বেশি সময় ধরে ভর্তি ছিলেন বারাণসীর হাসপাতালে।
বহু প্যানেলে পঙ্কজ দত্তের সহবক্তা তো ছিলেনই, ব্যক্তিগতভাবেও সুসম্পর্ক ছিল অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে। স্বভাবতই এই খবরে শোকপ্রকাশ করে অধ্যাপক বলেন, “পঙ্কজদা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবেন ভাবতে পারিনি। আমার বারবার মনে হচ্ছে, মানুষটা শেষ হয়ে গেল, না আমরা শেষ করে দিলাম। আমার বারবার মনে হচ্ছে, মানুষটাকে বোধহয় আমরা শেষ করে দিলাম। এই মানুষটা আরও সৎভাবে-সাহসের সঙ্গে বলবার আরও হয়তো সময় পেতেন। কিন্তু, সেই সময়টা আমরা দিলাম না তাঁকে। আমার বারবার মনে হচ্ছে, এই মানুষটা যে সততার সঙ্গে পুলিশ অফিসার হিসাবে কাজ করেছিলেন, যে সততার সঙ্গে তিনি সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যে সততার সঙ্গে তিনি তাঁর বক্তব্য সমাজে রাখতেন, সেটা হয়তো আরও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু, আমাদের সমাজ-ব্যবস্থা তাঁকে গলা টিপে মারল বলেই আমি মনে করি। ওই রকম একটা সৎ মানুষ, আমি যখন কো-প্যানেলিস্ট হিসাবে দেখতাম, একটা মানুষের যদি কর্মজীবনে ১০০ শতাংশ সততা না থাকে, তাহলে অত সততার সঙ্গে প্যানেলে বলতে পারেন না। চাপের কাছে মাথা নত করেননি। চাপে তাঁর নিরাপত্তারক্ষী পর্যন্ত সরে গেছেন। তাতেও তিনি মাথা নত করেননি। তিনি আইনের দ্বারস্থ হয়ে আবার দেহরক্ষী ফিরে পেয়েছিলেন। আমাদের সমাজে সততার সঙ্গে বাঁচাটা খুব কঠিন। মানুষটাকে আমরা সহবক্তা হিসাবে পেয়েছিলাম। তার জন্য গর্ববোধ করি।”
পঙ্কজ দত্তর অসুস্থতার জন্য সম্প্রতি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি ছিল, মমতার সমালোচনা বার বার সরব হয়েছেন পঙ্কজ। পুলিশের গাফলতি নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। সেই নিয়ে লাগাতার তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছিল। মমতার পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশও পঙ্কজের শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য দায়ী বলে অভিযোগ করেন শুভেন্দু। আর জি করের ঘটনার উল্লেখ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেন্দু লিখেছিলেন, ‘সম্প্রতি আর জি করের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের নিন্দা করেন পঙ্কজ দত্ত। এর পর বড়তলা থানায় তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। দিনভর তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়, এককাপ চা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। মমতার পুলিশ ওঁর স্বাস্থ্যের এই অবস্থার জন্য দায়ী। ওঁকে চূড়ান্ত মানসিক অশান্তিতে রাখা হয়েছিল। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা যে কোনও নাগরিকের গণতান্ত্রিক এবং অতি প্রয়োজনীয় অধিকার। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষের তা হজম হয় না’।
আরও দেখুন