# Tags
#Blog

ফিরে দেখা ২০২৪, বাংলাকে কাঁদিয়ে বিষাদ-পথে পাড়ি দিয়েছেন যেসব নক্ষত্র…

ফিরে দেখা ২০২৪,  বাংলাকে কাঁদিয়ে বিষাদ-পথে পাড়ি দিয়েছেন যেসব নক্ষত্র…
Listen to this article


কলকাতা :  তারাদের দেশে তারারা। এবছর বিষাদের পথে পাড়ি দিয়েছেন বাংলার অনেক নক্ষত্র। যাঁদের জীবন-সংগ্রাম, সাফল্য অগুনিত মানুষকে পথ দেখিয়েছে। তাঁদের চলার পথ অনুপ্রাণিত করেছে। এমনই বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ও প্রথিতযশা বাঙালিকে আমরা হারিয়েছি ২০২৪-এ।   

উস্তাদ রাশিদ খান-

এক নিঃশ্বাসে যিনি গেয়ে যেতে পারতেন সুদীর্ঘ লাইন, সেই উস্তাদই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯ জানুয়ারি। কলকাতার বুকেই থামে উস্তাদ রাশিদ খানের সুরেলা সফর। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ২২ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন শিল্পী। প্রস্টেট ক্যান্সারে ভুগছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাশিদ খান। গত বছরের ২১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় পিয়ারলেস হাসপাতালে। ৯ জানুয়ারি থেমে যায় তাঁর লড়াই। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য মুগ্ধ করেছিল গোটা দেশকে। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।

শ্রীলা মজুমদার-

২৭ জানুয়ারি প্রয়াত হন অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও নিজের অভিনয় প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন শ্রীলা মজুমদার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন শ্রীলা মজুমদার (Sreela Majumdar)। একটি নাটকের মহড়া থেকে সিনেমার জগতে তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন স্বনামধন্য পরিচালক মৃণাল সেন। ১৯৮০ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত পরশুরাম ছবির মাধ্যমেই চলচ্চিত্র জগতে তাঁর হাতেখড়ি।

ইদ্রিশ আলি-

দীর্ঘদিনই শারীরিক কষ্টে ছিলেন। একাধিক রোগে ভুগছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। অনেকদিনই কাজকর্ম করতে অপারগ ছিলেন। বাড়ি থেকেও বেরোতে পারতেন না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক ইদ্রিশ আলি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বসিরহাট লোকসভার প্রাক্তন সাংসদও ছিলেন ইদ্রিশ আলি। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু কংগ্রেসে। তাঁর রাজনীতিতে আসা কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রর হাত ধরে। ২০১১ সালে তিনি ভোটে লড়েন তৃণমূলের হয়ে। সেবার জয় পাননি।  ২০১৪ সালে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিনি জয়ী হয়ে সাংসদ হন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি ভগবানগোলা আসনে জিতে বিধায়ক হন।  

পার্থসারথি দেব-

২২ মার্চ প্রয়াত হন অভিনেতা পার্থসারথি দেব। প্রায় চার দশকের অভিনয় জীবনে বহু নাটক-সিনেমা-সিরিয়ালে নিজের প্রতিভায় দর্শকদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ‘লাঠি’, ‘প্রেম আমার’, ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’ থেকে শুরু করে ‘রক্তবীজ’, পার্থসারথি দেবের ফিল্মোগ্রাফিতে সিনেমার সংখ্যা দু’শোরও বেশি।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ফুসফুসের সমস্যা বা COPD-তে ভুগছিলেন। লড়াইটা আর চালিয়ে যেতে পারেননি। এবছর ৮ অগাস্ট প্রয়াত হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজ্যে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০১-২০১১, টানা ১১ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রথমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর। ত্রয়োদশ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ১৮ মে, ২০০১-এ। ১৮ মে, ২০০৬-এ চতুর্দশ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন বুদ্ধদেব। ১৯ মে, ২০১১-য় পঞ্চদশ বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান হয়। 

হাজি নুরুল ইসলাম-

দীর্ঘদিন ধরে যকৃতের ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ শেখ হাজি নুরুল ইসলাম। ৬১ বছর বয়সে দত্তপুকুরের বহেরার বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বসিরহাট থেকে লোকসভা নির্বাচনে জিতে প্রথমবারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বার ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আসনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হন। এরপর ২০১৬ ও ২০২১ সালে হাড়োয়া আসন থেকে পরপর দু’বার বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন শেখ হাজি নুরুল ইসলাম। ২০২৪ সালে ফের তাঁকে বসিরহাট লোকসভা আসন থেকে দাঁড় করায় তৃণমূল কংগ্রেস। ৪ জুন ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে পরাজিত করে বসিরহাটে জয়ী হয়েছেন শেখ হাজি নুরুল ইসলাম।

মনোজ মিত্র-

অভিনেতা ও প্রবাদপ্রতিম নাট্য ব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রও অনন্তলোকে পাড়ি দিলেন এবছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধত্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ১২ নভেম্বর সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন তিনি। কলেজে পড়াকালীনই তাঁর কলমে ‘মৃত্যুর চোখে জল’। প্রথম লেখা নাটকই সবাইকে চমকে দিয়েছিল। তারপর বার বার। সাজানো বাগান, পরবাস, চাক ভাঙা মধু, নরক-গুলজার, রাজদর্শন, যা নেই ভারতে——একশোরও বেশি নাটক লিখেছেন। করেছেন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তপন সিংহের ছবি ‘বাঞ্চারামের বাগান’-এ তাঁর অভিনয় চিরদিনের জন্য জায়গা করে রেখেছে বাঙালির হৃদয়ে। সত্যজিৎ রায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বাসু চট্টোপাধ্যায়, তরুণ মজুমদার, শক্তি সামন্ত, গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকের বহু ছবিতে অসামান্য অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। 

উমা দাশগুপ্ত-

১৮ নভেম্বর প্রয়াত হন সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালির ‘দুর্গা’ উমা দাশগুপ্ত। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ছোটবেলা থেকেই থিয়েটার করতেন উমা দাশগুপ্ত। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর অভিনয় দেখেই সত্যজিৎ রায় তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন পথের পাঁচালির দুর্গার চরিত্রটির জন্য। প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই বাংলা সিনেমার ইতিহাসে জায়গা করে নেন তিনি। তবে সিনে-দুনিয়ার লাইম লাইট থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতেন উমা দাশগুপ্ত। কয়েক বছর আগে ক্যানসার হয়েছিল উমা দাশগুপ্তের। চিকিৎসা চলছিল। প্রাথমিকভাবে তিনি সাড়াও দিয়েছিলেন চিকিৎসায়। সুস্থ হয়ে ফের শুরু করে স্বাভাবিক জীবন যাপন। তবে কয়েক বছর আগেই আবার ফিরে আসে মারণ-রোগ। আর লড়াইয়ে পেরে ওঠেননি উমা। ক্যানসারের কাছে হার মানেন তিনি। প্রথম ছবির পরে আর রুপোলি পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে। রূপোলি পর্দা থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতেন অভিনেত্রী।

পঙ্কজ দত্ত-

গত ৩০ নভেম্বর প্রয়াত হন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত । বারাণসীর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বারাণসীর থিওজফিক্য়াল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ২৩ অক্টোবর বারাণসীতে বক্তৃতা দিতে গেছিলেন। বারাণসীর অনুষ্ঠানেই সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় পঙ্কজ দত্তর। বক্তৃতা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নাক-মুখ দিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। একমাসেরও বেশি সময় ধরে ভর্তি ছিলেন বারাণসীর হাসপাতালে। শেষমেশ থেমে যায় সেই দৃপ্ত কণ্ঠস্বর। কিন্তু প্রতিবাদী বাঙালি চোখ বুজলেই শুনতে পান তাঁর কথা, তাঁর প্রতিবাদের ভাষা। চেহারা শীর্ণকায় হলেও কণ্ঠের দৃঢ়তায় আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছিলেন তিনি। সোজা কথাকে সোজা করে বলতেন। শাসক হোক বা বিরোধী, রং দেখে নয়, অন্যায দেখলে কারও সমালোচনা করতে পিছপা হতেন না। তিনি পঙ্কজ দত্ত। রাজ্য়ের প্রাক্তন IG।

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।

আরও দেখুন



Source link

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Review Your Cart
0
Add Coupon Code
Subtotal