নয়াদিল্লি: ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নিয়ে আরও একধাপ এগোল কেন্দ্র। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের আওতায় লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচন একই সঙ্গে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই প্রস্তাব বিলের আকারে পেশ করা হবে। (One Nation One Election)
দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিঠি গঠন করা হয়েছিল দ্বিতীয় মোদি সরকারের আমলে। একসঙ্গে সব নির্বাচন করানোর ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ জরুরি, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল। এ বছর মার্চ মাসে সেখান থেকে এ নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। বুধবার সেই নিয়ে এগনোয় অনুমোদন মেলে। (One Nation One Election Bill)
‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিজেপি-র তরফে তৎপরতা চোখে পড়ছিল। এমনকি এবছর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও বিষয়টির উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশে অবিলম্বে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তাঁর যুক্তি ছিল, দফায় দফায় নির্বাচনে উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হচ্চে। এর পর, চলতি সপ্তাহের শুরুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দেন, বর্তমান মোদি সরকারের আমলেই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নীতি কার্যকর হবে।
লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে প্রথম ধাপে বিধানসভা নির্বাচন এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০০ দিনের মধ্যে পৌরসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন করাই লক্ষ্য কেন্দ্রীয় সরকারের। সেই লক্ষ্যে ‘এর দেশ এক নির্বাচন’ নীতির প্রস্তাব এনেছে তারা। রামনাথ নেতৃত্বাধীন কমিটি যে রিপোর্ট দেয়, তাতে প্রথম ধাপে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনগুলি সেরে ফেলার এবং পরবর্তী ১০০ দিনের মধ্যে পৌরসভা, পঞ্চায়েত স্তরের রাজ্যের স্থানীয় নির্বাচন সেরে ফেলার সুপারিশ করা হয়। এতে অহেতুক খরচ বন্ধ হবে, দেশের শাসন কার্যে বিবর্তন ঘটবে এবং দেশ লক্ষ্যপূরণের পথে এগোতে পারবে বলে জানানো হয়।
বর্তমানে দেশে লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচন পৃথক ভাবে সম্পন্ন হয়। এক সরকারের কার্যকালের মেয়াদ পূর্ণ হলে, বা কোনও কারণে নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটলে, পুনরায় হয় নির্বাচন। একসঙ্গে দেশের সব নির্বাচনের সপক্ষে আগাগোড়া সওয়াল করে আসছেন মোদি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তেহারেও ‘এক দেশ এক নির্বাচনে’র প্রতিশ্রুতি ছিল। যদিও এর বিরোধিতা করছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু হলে, রাজ্যের স্থানীয় সমস্যাগুলি উপেক্ষিত থেকে যাবে। একসঙ্গে সব নির্বাচন হলে বড় দলগুলি যে পরিমাণ অর্থ খরচ করবে, তার সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না ছোট দলগুলি। পাশাপাশি, নির্বাচনের পর পর সরকার পড়ে গেলে, কী ঘটবে, সেই নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার উল্লেখ নেই বলেও দাবি বিরোধীদের।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ করানোর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। কেন্দ্রকে সেই নিয়ে চিঠিও দেন তিনি। তাঁর দাবি, এই নীতি চালু হলে দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এই নীতি ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী। মমতা প্রশ্ন করেন, “এক দেশsj ধারণাটা কী? ভারতীয় সংবিধান কি ‘এক দেশ এক সরকার’ নীতিতে চলে?” কংগ্রেস, সিপিএম-সহ অন্য বিরোধী দলগুলিও ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নীতিকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে উল্লেখ করে।
শুধু তাই নয়, ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে যে কমিটি গঠন করা হয়, সেই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কোবিন্দ ছাড়াও ওই কমিটিতে ছিলেন শাহ, রাজ্যসভায় প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা গোলাম নবি আজাদ, অর্থ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এনকে সিংহ, লোকসভা সেক্রেটারি জেনারেল সুভাষ সি কাশ্যম, বর্ষীয়ান আইনজীবী হরিশ সালভে, ভিজিলান্স কমিশনের প্রাক্তন প্রধান সঞ্জয় কোঠারি, যাঁরা মোটামুটি ভাবে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ফলে বিশেষ একটি দলের রাজনৈতিক স্বার্থ মাথায় রেখেই এই নীতি আনতে এত তৎপরতা বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা।
আরও দেখুন