রাজীব চক্রবর্তী: বুধবার দিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকারা চাকরি হারালেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এদিন বিচারক জানান এতে গুরুতর অনিয়ম ও অবৈধ নিয়োগ হয়েছিল, যা সংবিধানের ১৪ ও ১৬ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। ফলে, সকলের নিয়োগ বাতিল করা হল। ঠিক কী কী রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে?
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখতে ফলো করুন Google News
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যা বলা হল-
* কোনও প্রতিকার বা সংশোধনীর প্রয়োজন আছে কিনা সেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল। প্রতারণার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী বা ‘tainted candidates’ চাকরি বাতিল করতে হবে এবং তাদের সমস্ত বেতন/পারিশ্রমিক ফেরত দিতে হবে—- হাইকোর্টের এই নির্দেশে হস্তক্ষেপ করার কোনও বৈধ কারণ বা ভিত্তি খুঁজে পাইনি আমরা। তাঁদের নিয়োগ জালিয়াতির ফলে হয়েছে, এটি প্রতারণার শামিল। তাই, এই নির্দেশ পরিবর্তনের কোনও যৌক্তিকতা আমরা দেখি না।
* নির্দিষ্টভাবে ‘দূষিত’ বা ‘tainted’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, তাদের ক্ষেত্রেও পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, এতে গুরুতর অনিয়ম ও অবৈধ নিয়োগ হয়েছিল, যা সংবিধানের ১৪ ও ১৬ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। ফলে, তাদের নিয়োগও বাতিল করা হলো।
* যেসব প্রার্থী ইতিমধ্যে কর্মরত ছিলেন, তাদের বেতন ফেরত দিতে হবে না, তবে তাদের চাকরিও বাতিল করা হবে।
*একইসঙ্গে, যেহেতু পুরো পরীক্ষা ও ফলাফল অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই কোনো প্রার্থীকে এই ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন- Federation vs Bidula Bhattacharya: বিদুলার কাজে বাধা দিতে পারবে না ফেডারেশন, তথ্য-সংস্কৃতি সচিবকে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের!
* যেসব প্রার্থী tainted নন, তারা পূর্বে যদি কোনো সরকারি দফতর বা স্বশাসিত সংস্থায় কাজ করতেন, তাহলে তারা তাদের আগের কর্মস্থলে পুনরায় যোগদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থাকে তিন মাসের মধ্যে এই আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে এবং তাদের পুনর্নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, তাঁদের চাকরি বাতিলের সময় থেকে পুনঃনিয়োগ পর্যন্ত সময়কে ‘সার্ভিস ব্রেক’ (service break) হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাঁরা তাদের পুরনো seniority ও অন্যান্য সুবিধা বজায় রাখতে পারবেন এবং ইনক্রিমেন্টও পাবেন। তবে, বিতর্কিত নিয়োগের অধীনে তারা যে সময় কাজ করেছেন, তার জন্য কোনো বেতন দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে, এই প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত পদ (supernumerary posts) সৃষ্টি করা যেতে পারে।
* নিম্ন আদালত একজন প্রতিবন্ধী প্রার্থী, সোমা দাসকে মানবিক কারণে চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা এই রায়ে হস্তক্ষেপ করব না।
*তবে, অন্যান্য প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা একই সুবিধা পাবেন না, কারণ এটি আইনের মূলনীতি ও শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী হবে। তবে, তাদের প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি বিবেচনা করে, তারা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত চাকরিতে থাকতে পারবেন এবং বেতন পাবেন।
* উল্লেখিত প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা যদি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চান, তাহলে তারা বয়সসীমা ছাড়সহ অন্যান্য বিশেষ সুবিধা পাবেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News LIVE Update: ‘যারা চাকরি হারিয়েছে, তাদের বয়সে ছাড় দেওয়া হবে, ফের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে’- মুখ্যমন্ত্রী
*একইসঙ্গে, ননটেন্টেড প্রার্থীরাও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বয়স ছাড়ের সুবিধাসহ অংশ নিতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত ও সমতা নিশ্চিত করবে, কারণ এটি এই প্রার্থীদের জন্য পুনরায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে।
*আমাদের পর্যবেক্ষণ ও রায় কোনো ফৌজদারি মামলার উপর প্রভাব ফেলবে না।
*আমরা নিম্ন আদালতের পুরো নিয়োগ বাতিলের রায় বহাল রাখছি, তবে কিছু নির্দেশনায় পরিবর্তন এনেছি। এই আপিল মামলাগুলো উপরের শর্তাবলীর ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হলো।
* তবে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দায়ের করা আপিল সংক্রান্ত বিশেষ বিষয়টি আমরা আলাদাভাবে শুনব। এটি সুপারনিউমারারি (অতিরিক্ত) পদ তৈরির সিদ্ধান্ত ও সেই বিষয়ে সিবিআই তদন্ত সংক্রান্ত। এই বিষয়ে বিশেষ অনুমতি আবেদন (SLP) আগামী ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হলো।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)