সন্দীপ সরকার, কলকাতা: চিকিৎসকদের নিয়ে এবার নজিরবিহীন পদক্ষেপ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের। পাঁচ বছর অন্তর চিকিৎসকরা যে রেজিস্ট্রেশন নম্বরের পুনর্নবীকরণ করান, এখন থেকে তা করাতে গেলে অন্তত পক্ষে ৩০ ঘণ্টা ক্রেডিট পয়েন্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হল। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হতে শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। (West Bengal Medical Council)
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হল। বলা হয়েছে, পাঁচ বছর অন্তর রেজিস্ট্রেশন নম্বর পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে ৩০ ঘণ্টার ক্রেডিট পয়েন্ট বাধ্যতামূলক। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের পুনর্নবীকরণ হবে না। (Doctors’ Registration Renewal)
এই ৩০ ঘণ্টার ক্রেডিট পয়েন্ট চিকিৎসকদের কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিভিন্ন মেডিক্যাল কনফারেন্সে যোগ দিতে হয় চিকিৎসকদের। সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন তাঁরা। প্রতি কনফারেন্স পিছু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশনে নির্দিষ্ট মাত্রার ক্রেডিট পয়েন্ট যোগ হয়।
রেজিস্ট্রেশন নম্বর পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে এবার সেই ক্রেডিট পয়েন্টকে মাপকাঠি করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। অর্থাৎ কর্মরত অবস্থায় পাঁচ বছরে বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগ দিয়ে ৩০ ঘণ্টার ক্রেডিট পয়েন্ট অর্জন করতে হবে চিকিৎসকদের। তবেই তাঁদের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের পুনর্নবীকরণ হবে।
কিন্তু রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন চিকিৎকদের একাংশ। তাঁদের মতে, গ্রামেগঞ্জে, মফঃস্বলে, জেলায় এমনকি শহর কলকাতাতেও এমন অনেক চিকিৎসক আছেন, যাঁরা কনফারেন্সে যাব না। বয়স্ক চিকিৎসরাও রয়েছেন এই তালিকায়। রেজিস্ট্রেশন নম্বর পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে তাঁরা কী ভাবে ক্রেডিট পয়েন্ট দেখাবেন, উঠছে প্রশ্ন। ৩০ ঘণ্টার ক্রেডিট পয়েন্টকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর পুনর্নবীকরণের মাপকাঠি করা হল কোন যুক্তিতে, প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
রাজ্যে সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “নির্দিষ্ট ভাবে জানানো হোক কোন কোন সেমিনারের উপর পয়েন্ট দেওয়া হবে। নইলে দলীয় স্বার্থে এটাকে কাজে লাগানো হতে পারে। হয়ত শাসকদলের পুষ্ট কনফারেন্সকে পয়েন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে মাপকাঠি ধরা হল। বিরুদ্ধ মত পোষণকারী চিকিৎসকদের পয়েন্ট না দেওয়া হতে পারে। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হতে পারে কিন্তু।”
সম্প্রতি আর জি কর কাণ্ডের পর আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বার বার সংঘাত দেখা দেয় রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হন চিকিৎসকদের একাংশ। সেই চিকিৎসকদের অন্যত্র বদলি নিয়েও সম্প্রতি বিতর্ক দেখা দেয়। এখন আবার মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আরও দেখুন