‘মমতার এটাই শেষ, ’২৬-এ বিজেপি বাজেট পেশ করবে’, বিধানসভা থেকে বেরিয়ে ঘোষণা শুভেন্দুর

কলকাতা: সর্বদল বৈঠকে যোগ দেয়নি। বাজেট অধিবেশন থেকেও ওয়াকআউট করল বিজেপি। বাজেটের বিরোধিতা করে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে আসেন বিজেপি বিধায়করা। তাঁদের নেতৃত্ব দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে, রাজ্য সরকারের এবারের বাজেটই তার প্রমাণ। এই বাজেট বেকার-বিরোধী বাজেট। রাজ্যের ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন মমতা। শুভেন্দুর দাবি, এই বাজেট মমতার শেষ বাজেট, ‘২৬ সালে বিজেপি পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে এবং বেকার পরিবারক একটি করে চাকরি দেওয়া হবে। (Suvendu Adhikari)
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হল বুধবার। কিন্তু শুভেন্দুর দাবি এটাই শেষ বাজেট মমতা সরকারের। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শেষ বাজেটে বেকারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। এটা তৃণমূল সরকারের ১৫তম এবং শেষ বাজেট। তারা ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ২০১১ সালের আগে যে মুখ্যমন্ত্রী বেকারদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এই বাজেটে একটিও কর্মসংস্থানের কথা নেই। উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল এবং সুন্দরবন বিরোধী বাজেটও এটি।” (West Bengal Budget 2025)
এবারের বাজেটে একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা করেছে রাজ্য। নদী কেন্দ্রিক মানুষের উন্নয়নের জন্য ‘নদী বন্ধন’ প্রকল্প। আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল ফোন দিতে ২০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য বাজেটে নদী ভাঙন রোধে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যেমন, তেমনই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন মমতা। কিন্তু শুভেন্দুর বক্তব্য, “এই বাজেটে সমগ্র উত্তরবঙ্গে নদী ভাঙন, সেচ প্রকল্প, পাহাড়ের উন্নয়ন, চা বাগানের উন্নয়ন, চা শ্রমিকদের জন্য় প্রকল্প, মালদা থেকে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের জন্য কোনও প্রস্তাব নেই। এই বাজেট কৃষক বিরোধী। কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। শস্যবিমায় কোনও ঘোষণা নেই, সার, বিদ্যুতে ভর্তুকি নেই, প্রবীণ কৃষকদের জন্য ভাতা, দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষরা যেখানে পানীয় জলটুকু পান না, চিকিৎসার সুযোগ পান না, তাঁদের জন্য নেই প্রস্তাবনা।”
পাহাড়ের গোর্খা জনজাতি, ভুটিয়া, তামাং, রাই, রাজবংশী, নমশূদ্র, কুড়মি সমাজ, মতুয়াদের জন্য কোনও পরিকল্পনা বাজেটে রাখা হয়নি বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন কোনও পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি। অসত্য বাজেট। এরা সাগরে ব্রিজ করবে, অমুক করবে, জাতীয় জলপথের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া করা যায় না ব্রিজ। নির্বাচনের আগে একটি কাজও শেষ করতে পারবে না। এমনকি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য এক ডেসিমিল জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি। জমি অধিগ্রহণ হয়নি যেখানে, বরাদ্দ খাতায়কলমে থাকবে, নির্বাচনের আগে গালভরা প্রতিশ্রুতি হয়ে থাকবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প কিছু নেই বাজেটে। ৬ লক্ষ কোটি যে ঋমের বোঝা মাথায়, তা থেকে বেরিয়ে আসার কথা নেই। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলে মাত্র ৬০ লক্ষ বরাদ্দ। এই টাকায় উন্নয়ন হয় না। ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে এক বিধায়ক ৫ কোটি টাকা পান এলাকা উন্নয়নে। এখানে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। “
বাজেটে আইসিডিএস, আশাকর্মীদের যে স্মার্টফোন দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, স্মৃতি ইরানি যখন মন্ত্রী ছিলেন কেন্দ্র ২০০ কোটি দিয়েছিল, মাথাপিছু ১০০০০. তিন বছর ধরে ওই টাকা অ্যাকাউন্টে রেখে, সুদ খেয়ে…এখন কেন্দ্র যখন টাকা ফেরত দিতে বলেছে, স্মার্টফোন দেওয়ার ঘোষণা হল বাজেটে। শুভেন্দু বলেন, “সর্বোপরি এই বাজেটে নারী সুরক্ষা, আর জি করের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কোনও কথা নেই। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পেও বরাদ্দের কথা নেই, যেখানে ওড়িশায় বিজেপি-র সরকার বছরে এককালীন ৫০০০০ টাকা দিচ্ছে, মহারাষ্ট্রে এককালীন মাসে ২০০০ দিচ্ছে, হরিয়ানায় মাসে ২১০০ দিচ্ছে, দিল্লিতে বিজেপি-র সরকার ২৫০০ দেবে, সেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়নি।” সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা নিয়েও রাজ্যকে একহাত নেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এখনও রাজ্যের সরকারি কর্মীদের DA-তে বিস্তর ফারাক। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য অন্য়ায় করেছে বলে দাবি শুভেন্দুর। ২০২৬ সালে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি-র সরকার পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি। জানান বিজেপি ক্ষমতায় এলে, প্রত্যেক বাড়িতে, যেখানে চাকরি নেই, তাদের একটি করে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
আরও দেখুন