উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, আশাবুল হোসেন ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা : সামনের বছর বিধানসভা ভোটের আগে এটাই ছিল বর্তমান রাজ্য সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। স্বাভাবিকভাবেই, বাজেটে কী ঘোষণা করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল রাজ্যবাসীর। বাজেট শেষে দেখা গেল, গ্রামীণ এলাকায় উন্নতির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙন থেকে শুরু করে নদীবন্ধনের মতো বিষয়েও হয়েছে বরাদ্দ। বাড়ানো হল DA-ও। বাজেট পেশের একেবারে শেষদিকে ওয়াকআউট করে বিজেপি। বাজেটের বিরোধিতা করে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে আসেন বিজেপি বিধায়করা। তাঁদের নেতৃত্ব দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে, রাজ্য সরকারের এবারের বাজেটই তার প্রমাণ।
কী কী উল্লেখযোগ্য ঘোষণা হল এবার রাজ্য বাজেটে ?
রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়ল। ৪ শতাংশ DA বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাড়ল উপভোক্তার সংখ্যা। গ্রামীণ রাস্তায় বিপুল বরাদ্দের ঘোষণা। ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে গ্রাম বাংলা। গ্রামোন্নয়নের ওপরে জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশি ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে।
মোদি সরকারের বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগারে আয়কর ছাড়ের ঘোষণার পর, নজর ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার বাজেটে কী চমক দেন, সেদিকে। দিনের শেষে দেখা গেল, বাড়ি থেকে রাস্তা, নদীভাঙন, সেতুর মতো একেবারে গ্রামীণ ইস্যুর ওপরে জোর দেওয়া হল রাজ্য বাজেটে।
‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে অতিরিক্ত ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে এই প্রকল্পের আওতায় আনতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৩৭ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা তৈরির জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার।
মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার মতো জেলায় ভয়াবহ আকার নিয়েছে নদীভাঙনের সমস্যা। এবারের রাজ্য বাজেটে নদীভাঙন রোধে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। নদী ও বড় জলাভূমির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে মানুষের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে ‘নদী বন্ধন’ নামে নতুন এক প্রকল্পের ঘোষণা করা হল বাজেটে। বরাদ্দ করা হল ২০০ কোটি টাকা।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল সরকার। গঙ্গাসাগরে সেতুর জন্য ৫০০ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার ধান কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। এবার রাজ্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ধান কেনার জন্য নতুন কেন্দ্র তৈরির ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি ২০০ কোটি টাকা খরচ করে আরও ৩৫০টি ‘সুফল বাংলার’ স্টল তৈরির ঘোষণা রয়েছে বাজেটে। আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল ফোন দিতেও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।
বাজেটে ২০২৫-‘২৬ অর্থবর্ষের জন্য কৃষি ও কৃষি বিপণনে ১০ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যে ২১ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, উচ্চ শিক্ষায় ৬ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা, খাদ্য সরবহারে ৯ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা, স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতরে ১৪ হাজার ৮১৭ কোটি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে ১১ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়নে ৮৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি কবিতা পাঠ করে বাজেট ঘোষণা শেষ করেন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
আরও দেখুন