হাসপাতালে শুয়ে থাকা মানুষটার মৃত্যুকামনা হচ্ছে, এ কোন মানুষ আমরা?

Estimated read time 1 min read
0 0
Listen to this article
Read Time:12 Minute, 0 Second


স্বরূপ দত্ত

এই তো কিছুদিন আগের ঘটনা। নামটা শুনেই চমকে উঠেছিলাম। সিদ্ধার্থ ধর। বাঙালি। সে নাকি আবার আইসিসের একেবারে মাথায়! কত কত কথা হলো তারপর কয়েকদিন। রাজ্যের বিশিষ্টজনেরা বললেন, বাঙালি মানেই নরম-সরম। সৃষ্টিশীল। কল্পনাপ্রবণ। আবেগপ্রবণ। মায়া মাখানো। সেই বাঙালির এমন অধঃপতন হয় কীভাবে! আর খবরে নেই সিদ্ধার্থ ধর। আজ সকালবেলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বোলাতেই চমকে উঠলাম! মনে হল, কত কত সিদ্ধার্থ ধর তৈরি হয়ে গিয়েছে আমাদের বাঙালিদের মনে? কেন বলছি? গতকাল ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের অন্যতম তরুণ সাংসদ। সেই খবরের নিচে হাজার হাজার কমেন্ট মানে মতামত। উদাহরণ হিসেবে তার একটি এখানে উল্লেখ করলাম। কোনও একজন লিখেছেন, ‘রোজ যখন নেতাদের গাড়িগুলো হুশ করে বেরিয়ে যায়, তখনই ভাবি, আর যেন সেই গাড়ি ফিরে না আসে। আজ খবরটায় কী খুশি যে হয়েছি! এ মা, এখনও বেঁচে রয়েছে!’।

এটা সভ্য বাংলায় মতামত। বাকিগুলি লিখে জানানোর মতো নয়। সব গালাগাল। আর মৃত্যু কামনা! আর তাই কয়েকটা কথা বলবো ভাবলাম। তাতে যা বলে লোকে, সব শুনবো। আপনাদের মতামত সব পড়ব। কিন্তু তবুও এর বিরোধিতা করব। এগুলো হচ্ছেটা কী! আমরা বাঙালি? আমরা ভদ্র, সভ্য মানুষ! সক্কাল সক্কাল আর একজন মানুষের মৃত্যু কামনা করছি! এ শিক্ষা কোথথেকে পেলাম আমরা! ফুটবল খেলায় হামেশাই নজরে পড়েছে ব্যাপারটা। বিপক্ষ খেলোয়াড় আহত হলেই এক পক্ষের গ্যালারিতে রব ওঠে, ‘বলো হরি, হরি বোল’। ওই সংস্কৃতি ভালো লাগে না বলে, ফুটবল মাঠে যাওয়াটাই ছেড়ে দিয়েছি অনেককাল আগে। এত ঘৃণা মানুষের!

আমি, আপনি যে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক হতে পারি। আমাদের কিছু মানুষকে পছন্দ না হতেই পারে। আমরা রাজনৈতিকভাবে তাঁদের হারানোর চেষ্টা করতে পারি। বড় জোর সব সীমা ছাড়িয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি, অমুক নেতা পরের নির্বাচনে হেরে গেলে বেশ হয়। কিন্তু কারও মৃত্যুকামনা! কেন সে মরল না বলে আফশোস! আমরা এ কোন ভয়ঙ্কর সংস্কৃতির বিষ রোজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছি! কীসের এত হিংসা আর কীসের এত ঘৃণা যে, সামনের মানুষটার বেঁচে থাকারই অধিকার নেই, এমন মনে করে ফেলছি! তাও এক্ষেত্রে যে মানুষটাকে নিয়ে আলোচনা করছি, তিনি নির্ভয়া কাণ্ডের মতো ভয়ঙ্কর কিছুর সঙ্গে জড়িত নন। হেতাল পারেখের মতো কারও জীবন এভাবে নষ্ট করে দেননি। রাজনৈতিক নেতা। সাংসদ। আর পারিবারিক পরিচয়, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো। ধরে নিলাম, তাঁর অনেক কাজ, আরও বেশি অনেক মানুষের পছন্দের নয়। হলেই বা। তাঁর মৃত্যুকামনা করতে হবে! আমরা তো এরকম ছিলাম না। এ তো দেখছি, সবার মনেই সিদ্ধার্থ ধর (যারা অমন বলছেন)। হাতে মেশিন তুলে দিলে, তাঁরাও খুন করতে পারবেন!

আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে কত মানুষকেই তো আমাদের পছন্দ হয় না। আমরা তাঁদের এড়িয়ে চলি। অথবা, তাঁর নিন্দেও করি। আরও কত কত কী যে করি কে জানে। লেখাটা লিখতে লিখতেই মনে হল, কুশপুতুল পোড়ানোর কথা। সে রীতিও তো অনেকদিনের। এক্ষুনি ভাবছি না, এটা ঠিক নাকি ভুল। তবে, দুর্ঘটনায় কোনও মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়, এটা বলা যে, তাঁর এখনও মৃত্যু হয়নি, এটা মানুষের কাজ হতে পারে না। বাঙালি তো অনেক দূর। এরজন্য আমাকে বা আমার সঙ্গে সহমত হওয়া লোকদের কোনও রাজনীতি করতে হয় না। ব্যক্তিগতভাবে নিরপেক্ষ শব্দের ধারে কাছে আমি নেই। কোনও এক পক্ষ নিয়েই সমস্ত ভাবনা চিন্তার উপসংহারে আসি। যখন যে ভাবনার শেষ যেখানে করি, সেটাই আমার পক্ষ। এরজন্য আমি তৃণমূলি নই। আমি বাম নই। আমি নির্দল, বিজেপি বা কংগ্রেসও নই। মানুষ একজন।

সবাইকে ভালো বলি না। আবার সবার তো দূর, একজনেরও মৃত্যু চাই না। কিন্তু জাগতিক নিয়মেই জন্ম হলে মৃত্যু হয়। তেমনই মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা ঘটে। ওই খেলার মাঠ দিয়ে শুরু করেছিলাম। দেখবেন, খেলার মাঠে অন্তত ফুটবলাররা নিজেরা এমন করেন না কখনও। বিপক্ষের ফুটবলারকে অবৈধভাবে মেরে ফেলে দেওয়ার পরও হাত বাড়িয়ে দেন উঠে আসার জন্য। একটা মানুষ হাসপাতালে, তখনও তাঁর দিকে জীবনের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবো না, ‘গেট ওয়েল সুন?’ প্লিজ চলুন আমরা নিজেদের পাল্টাই। এত অসহিষ্ণুতা আমাদের পরের প্রজন্মকে ঠিক পথে নিয়ে যাবে না। ভাববেন প্লিজ। দুর্ঘটনায় আহত মানুষের মৃত্যুকামনাতে কোনও বীরত্ব নেই। আর এই লেখার জন্য আমায় তৃণমূলি ভাবতে যাবেন না। আমি মানুষ। মানুষ-মানুষের জন্যে, এটা শুনেই বড় হয়েছি আপনাদের মতে। মানুষ মানুষের মৃত্যুকামনার জন্য, এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে দমবন্ধ হয়ে আসছে। তাই কথাগুলো বললাম। শুধু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই নয়, কাল আর কারও সঙ্গেও এমন ঘটলে ফের বলবো। তিনি যেকোনও রাজনৈতিক দলের নেতাই হন অথবা অন্য কেউ। কামনা যদি করেনই, ভালো করুন। শান্তি পাবেন। আমাদের চারপাশটায় দরকার শুধু এটাই। শান্তি। আর ওটা পেতে গেলে, সবার আগে জীবনের পথে ফিরতে হবে। এই পৃথিবীতে কত কত মানুষ কত কত ভালো কাজ করছেন। হয়তো আমি-আপনি অতটা পারছি না। নাই পারতে পারি। কিন্তু চেষ্টা করলে একটু ভালো ভাবতে পারবো না সবাই মিলে? ঠিক পারবো। আপনিই পারবেন। আমি, আপনি, আমরা, আর কী চাই। শুধু এবার থেকে এই খারাপ সংস্কৃতিকে আর প্রশ্রয় দেওয়া নয়। এত হিংসার বিষ মানুষের মনে ঢালা ঠিক হবে না। নীলকণ্ঠ পান করতে চিরকাল শিবকে পাবেন না।

(এটা কোনও রাজনৈতিক লেখা নয়। মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য লেখা। প্লিজ ভাববেন। আমরা নিজেদের রাগ কমিয়ে একটু শান্ত হলে হয়তো পৃথিবীটা একটু শান্ত হবে। এই লেখা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মত। এর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ডট কম একমত হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।)





Source link

About Post Author

JagoronBarta

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
JagoronBarta http://www.jagoronbarta.com

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

You May Also Like

More From Author

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *