মুর্শিদাবাদ: থমথমে সুতি, সামশেরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে গতকাল রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা। সকাল থেকে একাধিক জায়গায় মোতায়েন বিশাল পুলিশ বাহিনী. সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান মোড়ে পুলিশের সঙ্গে মোতায়েন রয়েছেন BSF-ও। গতকাল রাতে সামশেরগঞ্জের ডাকবাংলো ট্রাফিক গার্ডে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় আজিমগঞ্জের রেলের অফিসে। এখনও রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া বাইক-গাড়ি। সকাল হতেই সেই সব পোড়া গাড়ির অংশ সরানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন, ‘ওয়াকফ আইনকে সমর্থন করি না, রাজনীতির স্বার্থে দাঙ্গা লাগাবেন না..’, সংযত থাকার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
গতকালের হিংসার পরে আজ সামশেরগঞ্জে প্রায় সব দোকান বাজার বন্ধ। পুলিশের সঙ্গে জায়গায় জায়গায় মোতায়েন রয়েছে র্যাফ। একই অবস্থা সুতির সাজুরমোড়েও। সেখানেও একাধিক সরকারি বাস, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাজুরমোড়ে গুলিবিদ্ধ কিশোরের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। সামশেরগ়ঞ্জ ও সুতিতে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। সুতি ও সামশেরগঞ্জে অশান্তির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সব ধর্মের সবার আছে আবেদন, আপনারা দয়া করে শান্ত ও সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনও অ-ধার্মিক আচরণ করবেন না। প্রত্যেক মানুষের প্রাণই মূল্যবান, রাজনীতির স্বার্থে দাঙ্গা লাগাবেন না। মনে রাখবেন, এই আইন কিন্তু আমরা করিনি। উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রের কাছে চাইতে হবে। আমরা ওয়াকফ আইনকে সমর্থন করি না। যাঁরা উস্কানি দিচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেব। কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না, শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখুন, বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর।
টানা ১৩ ঘণ্টা বিতর্ক এবং ভোটাভুটির পরে বুধবার মধ্যরাতের পর লোকসভায় পাস হয় ওয়াকফ সংশোধনী বিল, ২০২৫। সংসদের দুই কক্ষে পাস হওয়ার পর সই করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আইনে পরিণত হল ওয়াকফ সংশোধনী বিল, ২০২৫। কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে সার্বিক ভাবে মুসলিমদের উন্নতি হবে। ক্ষমতায়ন হবে মুসলিম মহিলাদের। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, এর আইন ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতাকে খর্ব করে মুসলিমদের অধিকার হরণ করবে।
এ নিয়ে প্রথম থেকেই তীব্র বিরোধিতা করে আসছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, মোদি সরকারের এই উদ্যোগ ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতাকে খর্ব করে মুসলিমদের অধিকার হরণ করবে। এই প্রেক্ষিতে, শুক্রবার পার্ক সার্কাসে বিলের প্রতিবাদে সরব হয় জয়েন্ট ফোরাম অফ ওয়াকফ প্রোটেকশন। বিক্ষোভকারীরা পার্ক সার্কাস মোড়ে ব্যারিকেড সরিয়ে দিলে বাধা দেয় পুলিশ। শুরু হয় বচসা। বিক্ষোভ সভায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতা খিলাফত কমিটির চেয়ারম্যান মন্ত্রী জাভেদ খান সহ অনেকে।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন -দীর্ঘ সময়কালজুড়ে ওয়াকফ পদ্ধতিতে কোনও স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা ছিল না। তার জেরে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মুসলিম মহিলারা। এতকাল যাবৎ গরিব মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন ওয়াকফ আইনে স্বচ্ছতা আসবে। সুনিশ্চিত হবে মানুষের অধিকার।
আরও দেখুন