আশাবুল হোসেন, সন্দীপ সরকার, কলকাতা : তিনিই দলের শেষকথা। ফের বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বিধানসভায় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে একাধিক বার্তা দিলেন তৃণমূলনেত্রী। অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালেও রোগী কল্যাণ সমিতির পদে রদবদল করল তৃণমূল। শান্তনু সেন, সুদীপ্ত রায়দের জায়গায় আনা হল অন্যদের।
মাত্র এক সপ্তাহ আগেই, কালীঘাটে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দলের সম্পূর্ণ রাশ এখনও তাঁরই হাতে রয়েছে। আগামী দিনেও থাকবে। দলের শৃঙ্খলারক্ষায় তিনটি স্তরে যে কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন, তার সব সদস্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্য়ন্ত ঘনিষ্ঠ, একেবারে ঘরের লোক বলে পরিচিত।এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার দলীয় বিধায়কদেরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, দলে এখনও তিনিই শেষ কথা।
এদিন বিধানসভায় দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সূত্রের দাবি, সেখানে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কে কী বলছেন, তা জানার দরকার নেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনিই। তিনিই দলের চেয়ারপার্সন। শেষ কথা বলবেন।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, তৃণমূলের যে দু’টি শাখা সংগঠনে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ছাপ আছে বলে রাজনৈতিক পর্বেক্ষকরা মনে করেন, সেই ছাত্র ও যুব সংগঠনের কাজে যে তিনি সন্তুষ্ট নন, এদিন সেই বার্তাও দিয়েছেন দলনেত্রী। সূত্রের দাবি, বিধায়কদের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ছাত্র-যুব সংগঠন ভালভাবে কাজ করছে না। এই দু’টো সংগঠন আমি নতুন করে সাজিয়ে দেব।
সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে অবিলম্বে উপ মুখ্য়মন্ত্রী করে তাঁর হাতে পুলিশ দফতরের দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন যে হুমায়ুন কবীর, এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনিও। সূত্রের খবর, তাঁর সামনেই দলনেত্রী বলেন, আজ যে মন্ত্রী, কাল সে বিধায়ক। অর্থাৎ বুঝিয়ে দেন, কারও জায়গায় নিশ্চিত নয়। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই শেষ কথা।
সূত্রের খবর, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, তিনি যেন অন্য বিধানসভা এলাকার বিষয়ে কথা না বলেন।
যদিও এই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া নিতে নারায়ণ গোস্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি।
বিধায়কদের সঙ্গে দলের সমন্বয় বাড়াতে, দলনেত্রীর নির্দেশে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। গ্রুপের অ্যাডমিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ। বিধায়কদের কোনও বিষয়ে দলকে জানানোর থাকলে, তা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানাবেন। প্রয়োজনে অ্যাডমিনরা তা দলনেত্রীর নজরে আনবেন।
কালীঘাটে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কেউ দলের শৃঙ্খলা ভাঙলে তাঁকে সর্বাধিক তিনবার শোকজ নোটিস পাঠানো হবে। তাতেও জবাব না দিলে, করা হবে সাসপেন্ড। সূত্রের দাবি, এদিন বিধায়কদেরও সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দলের শৃঙ্খলা কঠোরভাবে মানতে হবে। দলের বাইরে কোনও বেফাঁস মন্তব্য করা যাবে না। এমন কোনও কাজও করা যাবে না, যাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তা করলে সর্বাধিক তিনবার শোকজ করা হবে, উত্তর না দিলে সাসপেন্ড করা হবে।
এদিনের বৈঠকে দলের বিধায়কদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, কোনও সমীক্ষক সংস্থা থেকে কেউ যদি ফোন করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চান, তাহলে সেই তথ্য দেওয়ার দরকার নেই।
অতীতে তৃণমূলের অনেক নেতা আইপ্যাকের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এদিন নাম না নিয়ে আসলে আইপ্যাক সম্পর্কেই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
এরইমধ্য়ে বিভিন্ন সরকার হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতেও সোমবার বড় রদবদল হয়ে গেল। আর জি কর ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে ছেঁটে ফেলা হল, শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়কে। সুদীপ্ত রায়ের বদলে আর জি করে সরকারি প্রতিনিধি অতীন ঘোষ এবং কলকাতা মেডিক্যালে সরকারি প্রতিনিধি করা হল শশী পাঁজাকে। অন্য দিকে শান্তনু সেনের জায়গায় এনআরএস হাসপাতালে সরকারি প্রতিনিধি করা হল মানিকতলার তৃণমূল বিধায়ক সুপ্তি পাণ্ডেকে।
আরও দেখুন