‘কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের…’, বিস্ফোরক দাবি মদনের !
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : ‘তৃণমূলে ব্যাপক টাকার লেনদেন হচ্ছে। কেউ রাতারাতি একশো কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন !’ দিনকয়েক আগেই বিস্ফোরক মন্তব্য় করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। কিন্তু তৃণমূলে মন্ত্রী বা দলের অন্যান্য পদ দেওয়ার বিনিময়ে টাকা চায় কারা ? নতুন করে ফের ‘বোমা’ ফাটালেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা।
এদিন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথমেই কামারহাটির বিধায়ক স্পষ্ট করে দেন, “সবার আগে একটা কথা বলি, আমি যদি ৫ মিনিট বা ৪ মিনিট বক্তব্য রেখে থাকি, তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কোথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও নাম ছিল না। আমার সেই ঔদ্ধত্য নেই। অজান্তে, যদি কোনও কথা রূপক অর্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পর্শ করে থাকে আমার ঔদ্ধত্য, তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ-নামীদামি ছেলের কাছেও আমি শুনেছি, কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এই এজেন্সির ছেলেদের দিয়েছে।”
মদন মিত্র বলেন, “আমাদের পার্টিতে এসব কিছু ছিল না। টাকা-পয়সা, লেনদেন। এই একটা এজেন্সি আমাদের পার্টিতে ঢুকল। অনেকগুলো এজেন্সি। ভোটকুশলী সংস্থা তারা নাকি জিতিয়ে দেবে। কামারহাটিতে আমাকে শেখানো হচ্ছে, সকালে উঠে কীভাবে ব্রাশ করবে। তারপর ডানদিকে তাকাবে, না বাঁদিকে তাকাবে। এরা শুরু করল। বিভিন্ন জায়গা থেকে নাম সংগ্রহ করে। এরাই গোটাটা করেছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজান্তে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ-নামীদামি ছেলের কাছেও আমি শুনেছি, কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ দিয়েছেন। এই এজেন্সির ছেলেদের দিয়েছে। আইপ্যাকই হবে…আইপ্যাকই ছিল। তাঁরা কেউ নমিনেশন পাননি। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছেন না। এত বড় বড় নাম তাঁদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টে বলেছেন, যে টাকা দিচ্ছেন, যে কাটমানি নিচ্ছেন, যে কেনার চেষ্টা করছেন, তৃণমূলের শিরদাঁড়া বিক্রি হয় না। তৃণমূল টাকার কাছে বিক্রি হয় না। এ তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা।”
তৃণমূল বিধায়কের আরও বক্তব্য, “অনেকে আমাকে বলছেন, তোমার কথার মানেটা মনে হচ্ছে যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছে। কিন্তু, এই আইপ্যাক আসার আগে আমাদের এরকম টাকারও দরকার হত না। আমাদের এত সাজানো মঞ্চ…এত..কিছুই দরকার হত না। মমতা যে সাতবার জিতেছেন, তখন আইপ্যাক কোথায় ছিল ? আমরা যে আগে কামারহাটিতে জিতেছি তখন আইপ্যাক কোথায় ছিল ? এখন যে পরপর বিধানসভা নির্বাচনগুলো জিতছি, আইপ্যাক কোথায় ছিল ? ঠিক আছে, আইপ্যাক এসেছে। তারা তাদের কাজ করেছে। সাধ্যমতো কাজ করেছে। আমার কোনও ব্যাপার নেই। পার্টি থেকে যদি ইনপুট করা হয়ে থাকে, তারা করবে। আমার সঙ্গে কোনও বিবাদ নেই। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে যদি কোনও চক্রান্ত হয়, মদন মিত্র কিন্তু চুপ করে বসে থাকবে না। বরদাস্ত করবে না।”
তখন এবিপি আনন্দের প্রতিনিধি তাঁর কাছে জানতে চান, আপনি যেটা বলছেন মন্ত্রী হতে গেলে কেউ ১০ কোটি টাকা দিচ্ছেন, অনেকে দিচ্ছেন…একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে উপরের স্তর পর্যন্ত একটা টাকার খেলা চলছে…এই গোটা প্রক্রিয়াটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজান্তে হয়েছে ? করছে কারা ?
মদনের জবাব, “একেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজান্তে, মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাসই করতে পারেননি। গুজরাত, বিহার…বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজন…তাঁরা এখানে ধরে আমাদের লোকগুলোকে বস করেছেন। একটা কলেজ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট কে হবে তার জন্য ১৮ বার রিসার্চ হয়েছে। এর থেকে ২টো নাম নেয়, ওর থেকে ২টো নাম নেয়…কিচ্ছু হবে না। ওই তো হেরে গেল ক’দিন আগে। কী এসে গেল ? ঝড়ে কাক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে।”
টাকা তোলার প্রক্রিয়াটার সঙ্গে ভোটকুশলী সংস্থা যুক্ত ? তৃণমূল বিধায়কের দাবি, “আমার কাছে লোকে তাই বলছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার শরীর কেমন আছে জানার জন্য আমাকে ডাকলেন… পিঠে হাত দিয়ে কথা বললেন। সেই ছবিটা পোস্ট হল..পরের দিন ৪টি ছেলে এসে বলল, আমার মাথায় একটু হাত দিন। মা বড় অসুস্থ। তার আগে বলল, মদন মিত্রর প্রচুর সোর্স। চাকরি দেবে…কথা বলেছে. ..টাকা দাও। যার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী একমাস চেষ্টা করব… সেল্ফি দেওয়ার সময়ও নিজেকে সতর্ক রাখতে।”
আরও দেখুন