মহারাষ্ট্র, দিল্লির পুনরাবৃত্তি বাংলায়? ’২৬-এর আগে ভুয়ো ভোটার নথিভুক্তির অভিযোগ

কলকাতা: মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে অভিযোগ উঠেছিল আগেই। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে একই অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গেও। পশ্চিমবঙ্গেও ভুয়ো ভোটারের নাম নথিভুক্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। একদিন আগেই এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ভুয়ো ভোটারের নাম নথিভুক্ত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। এ নিয়ে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে শোভনদেব বলেন, “এক-দু’দিনের মধ্যে মিটিং ডাকছি আমি। নিজে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যাব। চিঠিও দেব। পরিষ্কার বক্তব্য, তথ্য যাচাই না করে, একটি ভোটারের নামও সংযুক্ত হবে না। নাম নথিভুক্ত হবে না অনলাইন মাধ্যমে। যদি হয় আমরা মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামব, বিক্ষোভ দেখাব। পশ্চিমবঙ্গকে দিল্লি-হরিয়ানা করতে দেব না। কমিশনকে জানাব অনলাইন করলে হবে না। যাচাই করতে হবে, হিয়ারিং হবে, তবে নাম উঠবে ভোটের তালিকায়। একজায়গা থেকে ইশারা এল আর নাম উঠে গেল, হবে না। আমরা সতর্ক প্রহরী, সেই কাজই করব।”
গতকাল এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মমতাও। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “অনলাইন ভোটার তালিকার নামে নির্বাচন কমিশনের সাহায্য় নেওয়া হচ্ছে। ইডি-সিবিআই পাঠানো হচ্ছে। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু ভুতুড়ে রাজনৈতিক দল এই কাজ করছে। ওদের নামও নিতে চাই না। ওরা ভুতুড়ে রাজনৈতিক দল। বিহারের লোকেদের নাম তুলছে অনলাইনে। কেন অনলাইন হবে? ভোটার কার্ড, আধার কার্ডে নাম তুলতে গেলে সশরীরে যেতে হয়। বিজেপি, মহারাষ্ট্রে ৪০ লক্ষ ভোট বাড়ল কী করে? দিল্লিতেই বা কী করেছিলেন? একদিন না একদিন বেরোবেই। অঙ্কটা কেউ দেরিতে কষে, কেউ আগে কষে। অঙ্কটা কষতে জানতে হয়। আমরা অঙ্ক কষে দেখে নিয়েছি। এখানে বাবুরা বসে রয়েছেন। প্রত্যেক বিধানসভায় ২০ থেকে ৩০ হাজার বাইরের লোকের নাম ঢোকাবে। আর নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট দেওয়াবে। তারা গার্ড দেবে। বাইরের লোক, যারা বাংলার ভোটারই নয়, তারা এসে ভোট দেবে। আপনাদের এই পরিকল্পনা কিন্তু আমরা ভেস্তে দেব। চুরিটা ধরে ফেলেছি।”
যদিও এ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, “পদ্ধতিটা কী? ওঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কোনও কাণ্ডজ্ঞান আছে? ১৪ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী আছেন। ইলেক্টোরাল রোলে রেজিস্ট্রেশন অফিসার কে? জেলাশাসক। ওঁর কোনও কাণ্ডজ্ঞান আছে? ১৬ লক্ষ ডুপ্লিকেট ভোট আমরা বের করে দিয়েছি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ডিলিট করাব।”
নির্বাচনে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র (EVM) বিকৃতি করার অভিযোগ বরাবরের। সম্প্রতি সেই নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে কড়া নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচন মিটে গেলেও EVM০-এর তথ্য মোছা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তথ্য পরখ করে দেখার কথাও বলেছে আদালত। সেই আবহেই ভোটার তালিকায় হেরফের ঘটানোর অভিযোগ উঠছে একাধিক রাজ্য থেকেই। এমনকি বিজেপি-কে জেতাতে নির্বাচন কমিশন নিজেই ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা।
মহারাষ্ট্রে ভুয়ো ভোটার যুক্ত করে বিজেপি জিতছে বলে একযোগে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে), ন্য়াশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শরদ পওয়ার)। সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল গাঁধী জানান, ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচন থেকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে ভোটার তালিকায় ৩২ লক্ষ নয়া ভোটারের নাম ওঠে। অথচ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে বিধানসভা নির্বাচন, মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে আরও ৩৯ লক্ষ নয়া ভোটারের নাম যুক্ত করা হয়। মাত্র পাঁচ মাসে এত নতুন ভোটার এল কোথা থেকে প্রশ্ন তোলেন রাহুল।
শুধু তাই নয়, মহারাষ্ট্রের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার চেয়ে ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি বলেও দাবি করেন রাহুল। তিনি জানান, মহারাষ্ট্রের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ৯ কোটি ৫৪ লক্ষ। অথচ ৯ কোটি ৭০ লক্ষ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে দেখানো হচ্ছে। বাড়তি ভোট বিজেপি-র কাছে গিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। শিবসেনা (উদ্ধব) কোনও রকম রাখঢাক না করেই ভুয়ো ভোটার ঢোকানোর অভিযোগ তুলেছে। আগামীতে ওই বাড়তি ৩৯ লক্ষ ভোটার বিহারে পাঠানো হবে বলেও মন্তব্য করেন সঞ্জয় রাউত। বিজেপি ভোটে জিততেই ভোটার তালিকায় হেরফের করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনেও ভুয়ো ভোটারের প্রসঙ্গ ওঠে। নির্বাচনের আগে থেকেই সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে আম আদমি পার্টি। অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজে জানান, বিজেপি-র তরফে সাত সাংসদকে ভুয়ো ভোটার জোগাড়ের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। দিল্লিতে পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশন বিজেপি-র হয়ে ভোটে লড়াই করেছে বলেও অভিযোগ তোলে আম আদমি পার্টি।
আরও দেখুন