জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ক্রিকেট খেললেই মোটা টাকার জরিমানা এখানে! শুনেছেন কখনও? ইতালির শহর মনফ্যালকনে ক্রিকেট খেললে এটাই নিদান। এই শহরে কাউকে ক্রিকেট খেলতে দেখা গেলে তাকে ১০০ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯২৭২ টাকা প্রায়) জরিমানা দিতে হয়। ফলে পুলিস সিসিটিভির নজরদারিতে রেখেছে শহরের সব ছোট-বড় মাঠ, পাড়া ও গলিতে!
কেন ক্রিকেট নিষিদ্ধ? মনফ্যালকনে মোট জনসংখ্যা ৩০ হাজার। তাদের এক তৃতীয়াংশ অভিবাসী। যাঁদের অধিকাংশই বাংলাদেশি মুসলমান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি আবেগ অনেক বেশি। একথা সকলেরই জানা। নয়ের দশকের কথা। ক্রুজ জাহাজ তৈরির শ্রমিক হিসাবে কাজ করার জন্য় বাংলাদেশিদের এখানে আসতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁদের জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। তারা পথেঘাটে ক্রিকেট খেলতে শুরু করে দেন। প্রকাশ্য়ে নমাজও পড়েন।
আরও পড়ুন: দারিদ্র্যে জর্জরিত পাকিস্তান কি এবার গুপ্তধনের কল্যাণে নিজের পায়ে দাঁড়াবে?
এর ফলে স্থানীয়রা মনে করতে শুরু করেন যে, এভাবে চললে তাঁদের নিজেদের সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে যাবে অদূর ভবিষ্য়তে! এই পরিস্থিতিতে চরম ডানপন্থী লিগের নেতা আনা মারিয়া সিসিন এই ইস্য়ুতেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন। অভিবাসী বিরোধী অনুভূতির পটভূমিতে তিনি তাঁর শহরকে এই সমস্ত বিদেশি সংস্কৃতি থেকে বাঁচাতে এবং খ্রিস্টান মূল্যবোধকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মনফালকনের মেয়র মারিয়া সিসিন বিসিসি-কে জানিয়েছেন, এভাবে চললে তাঁদের ইতিহাস মুছে যাবে। তাই বাংলাদেশি মুসলিম এবং তাঁদের ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মনফ্যালকনে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে হালাল দোকান রয়েছে। শালওয়ার-কামিজ এবং হিজাবে মেয়েদের পথে দেখা যায়। প্রকাশ্য়ে, সাইকেল চলার রাস্তায় এবং যেখানে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাগম হয়, সেসব জায়গায় বেঞ্চ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুটি ইসলামিক সেন্টারে সম্মিলিত ভাবে নামাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেয়র জানিয়েছেন, এখানে ইসলামি মৌলবাদের প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। তাঁর প্রশ্ন,কেন বাংলাদেশিদের স্থানীয়দের মতো একই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে? বিনিময়ে তাঁরা তাঁদের কী দিচ্ছেন? ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, তাঁদের কাছে ক্রিকেট পিচ বানানোর টাকা বা জায়গা কোনওটাই নেই। ক্রিকেট বল বিপদ ডেকে আনে। কারণ এটি যে কাউকে আঘাত করতে পারে। মেয়র বলেছেন, বাংলাদেশিদের যদি ক্রিকেট খেলার এতই শখ থাকে, তাহলে তাদের উচিত এই শহরের বাইরে গিয়ে খেলা। এমন বক্তব্যের জেরে একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন মেয়র। তাই সরকার তাঁকে সবসময়ে পুলিসি নিরাপত্তায় মুড়ে রেখেছে।
বাংলাদেশিরা এখানে কীভাবে আসেন? ইটালির কাছাকাছি ফিনক্যান্টিয়েরি শিপইয়ার্ড রয়েছে। যা ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের অন্য়তম বড় শিপইয়ার্ডগুলির মধ্যে একটি। এর অপারেটররা জাহাজ নির্মাণের জন্য বিদেশি শ্রমিকদের উপর বেশি নির্ভর করে। কারণ স্থানীয়দের তুলনায় অনেক কম পয়সায় বেশি দক্ষ শ্রমিক পান। এই কারণে শিপইয়ার্ডে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশিদের নেওয়া হয়। শিপইয়ার্ডের অপারেটররা বলছেন, যে, তাঁরা ইউরোপে কাজের জন্য দক্ষ কারিগর পান না। আরও একটি বিশেষ কারণ হল, ইতালিতে জন্মহার সমগ্র ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত বছর পুরো ইতালিতে ৩ লাখ ৭৯ হাজার নবজাতকের জন্ম হয়েছে। এখানে নারী প্রতি জন্মহার ১.২।
বাংলাদেশিরা কী বলছেন? এসব নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশি সম্প্রদায়। তাঁরা বলছেন, এখান থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা চলে গেলে, এখানকার শিপইয়ার্ডে একটি জাহাজ তৈরি করতে পাঁচ বছর লেগে যাবে! কিন্তু এরপরেও মনফ্যালকনে তাঁদের গুরুত্ব কেউ বুঝতে পারছে না। তাঁরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অনেকে এও বলেছেন যে, তাঁদের কাজ শেষ হলেই তাঁরা দেশে ফিরে যাবেন।
আরও পড়ুন: যারা তোমাদের শান্ত হতে বলেছিল তারা চুপ করে থাকবে না, আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের হুঁশিয়ারি ইউনূসের
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)