জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: একটা সময় ক্যানসার মানেই ছিল ‘নো আনসার’। এই মারণ রোগ যার শরীরে বাসা বাঁধত, সে শুধুই দিন গুনত মৃত্যুর। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী জানাশোনা বৃত্তে তিনি তখন একটি গলগ্রহ। তাঁর আশেপাশে কেউ বা তার শ্রাদ্ধের মেনু ঠিক করছে, কেউ বা তার মৃত্যুর পর কী ভাবে টাকার ভাগ পাবে, সেই হিসেব করতে বসেছে। বেঁচে থেকেও সে মরে যেত প্রতি মুহূর্তে। যম এসে দরজায় দাঁড়িয়ে, প্রতিদিন তাকে ডাকত পরপারে যাওয়ার জন্য। এমনকি কোনও কোনও বাড়িতে প্রায়শ্চিত্তও করা হত তাঁদের জন্য।
কিন্তু দিনকাল সময়ে সব কিছুই বদলেছে। ক্যানসার এখন অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে মানুষের কাছে। তার একটাই কারণ ক্যান্সারের চিকিৎসা। যদি ওই চিকিৎসা অন্যান্য চিকিৎসা থেকে অনেকটাই ব্যয়বহুল তথাপি, বহু মানুষ এই মারণরোগকে কে জয় করে আবার জীবনের বাঁকে হাটতে পেরেছে বলেই, ক্যানসার জয়ীদের গল্প বীরগাঁথায় লেখা হয়। কিন্তু ক্যানসার জয় কি মুখের কথা?
আরও পড়ুন: Hoogly Co-operative Election: চারে চার! বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি মেরে জিতে গেল তৃণমূল, বিরোধীরা সবুজ ঝড়ে বেসামাল
আধুনিক প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য ব্য়বস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গেই, ক্যানসার জয়ীদের সামাজিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক দিকও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যানসারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্তন ক্যানসার। অধিকাংশ নারী মহিলা যুবতী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। বেহালার মানিনি রায়, স্কুল শিক্ষিকা, দুই কন্যা সন্তানের জননী ভাগ করে নিয়েছেন, তাঁর ক্যানসার যুদ্ধের গল্প। এক অসম লড়াইয়ে তিনি জয়ী হতে পেরেছেন তার পরিবারের সাপোর্টে, তা ডাক্তার এবং সর্বোপরি তার মানসিক জোরে। যে ক্যানসার একসময় তার জীবন বদলে দিয়েছিল, আত্মবিশ্বাস আর মনের জোরের সঙ্গে তিনি ক্যানসারের ক্ষত গর্বের সঙ্গে বয়ে নিয়ে চলেছেন। এখন হরমোন থেরাপির মধ্যে রয়েছেন কিন্তু ডাক্তারবাবুদের অপরিসীম মনোবল, এই রোগ জয় করতে তাকে সাহায্য করেছে। তার জীবনযাত্রার মধ্যে যেমন কোন পরিবর্তন আসেনি, ঠিক তেমনি ঘরে-বাইরে দুদিক সামলেও ওই শিক্ষিকা, এই যুদ্ধ সামলেছেন
২০২১ সালে গায়ত্রী চ্যাটার্জির স্তন ক্যানসারর ধরা পড়ে। তার ক্যানসার জয়ের গল্পে তিনি বলেছিলেন মনের জোর থাকলে ক্যানসারের থার্ড স্টেজ অবধি সারিয়ে ফেলা যায়। আসলে ক্যানসার একটি বহুমুখী লড়াই- অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পারিবারিক লড়াই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন ‘আমি ভয় করব না ভয় করব না…’ অর্থাৎ মৃত্যু যখন আসবে তাকে হাসিমুখে বরণ করবেন কিন্তু শেষ দিন অবধি লড়ে যাবেন। সোশ্যাল স্টিগমা বা সামাজিক ছুত্মার্গের ঊর্ধ্বে উঠে সমস্ত ক্যানসার জয়ী দের কে এগিয়ে যেতে হবে। এর জন্য সমাজের সব স্তর থেকে সহযোগিতা ভীষণভাবে দরকার।
আরও পড়ুন: Kalyani Horror: কল্যাণীতে কেলেঙ্কারি! উনিশের তরুণীকে লালসায় ছিঁড়েখুঁড়ে… রক্তমাখা জামা…
২০২২ সালে সুপর্ণা দত্তের সারভাইকাল ক্যান্সার অর্থাৎ শিড়দাঁড় আর সুষুম্নাকাণ্ডের মধ্যে ক্যানসারের মারণ রোগ বাসা বেঁধে ছিল। ঘর-সংসার সামলানো সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের সুপর্ণা দেবী প্রথমত খুবই ভেঙে পড়েছিলেন কিন্তু ডাক্তারদের অসম্ভব সহযোগিতা, ও মনের জোরে তিনি ক্যান্সার জয় করতে পেরেছিলেন। এখন তার শরীরে এই মারণ রোগের আর কোন কোষ নেই।
কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের ক্যানসার সেন্টারে এঁরা প্রত্যেকেই ‘ক্যান-উইন’ তকমা পেয়েছেন অর্থাৎ ক্যান্সার উইন অর্থাৎ ক্যান্সার জয়ী। এই ক্যান্সার জয়ীদের নিয়েই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল এই হাসপাতালের পক্ষ থেকে। এখানেই উঠে এলো বারবার একই কথা- অর্থাৎ ক্যান্সার জয় করা সম্ভব মনের জোরে, ভালোবাসায় সহযোগিতায়, এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)