কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সৌমিত্র রায়, শিবাশিস মৌলিক: লোকসভা নির্বাচনের পর নয় নয় করে চার মাস পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও কেন্দ্রের মন্ত্রী, সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতির পদ সামলে চলেছেন সুকান্ত মজুমদার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র পরবর্তী রাজ্য সভাপতি কে হবেন, সেই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও, এখনও পর্যন্ত সমাধানসূত্র মেলেনি। আর সেই আবহেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম প্রস্তাব করলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি, গেরুয়া শিবিরের বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায়। শুভেন্দু পারফর্মার, তাই তাঁকেই রাজ্য সভাপতি করা হোক বলে দাবি তুলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, যেভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্য সভাপতির পদে রয়েছেন সুকান্ত, তা দলের নীতির পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করলেন। (Sukanta Majumdar)
শুভেন্দুর হাতে অবিলম্বে রাজ্য় বিজেপি-র ব্য়াটন তুলে দেওয়ার পক্ষে জোরাল সওয়াল করলেন তথাগত। বার বার ক্ষমতা দখলের ডাক দিয়েও২০১৬, ২০২১ সালের বিধানসভা এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে অভীষ্ট লক্ষ্য়ে পৌঁছতে পারেনি বিজেপি। লক্ষ্য অনেক দূরেই থামতে হয়েছে তাঁদের। তাই বার বার প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি-র সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে। আর এই পরিস্থিতিতেই তথাগত মনে করছেন শুভেন্দুকে রাজ্য় বিজেপি-র সভাপতি না করলে বিজেপি-র পক্ষে এগনো সম্ভব নয়। (West Bengal BJP)
শুভেন্দুর পক্ষে সওয়াল করে তথাগত বলেন, “আমি চাই শুভেন্দু অধিকারী সভাপতি হোন। শুভেন্দু একজন পারফর্মার, অর্থাৎ করে দেখাতে পারেন। নানা রকম সাংগঠিক সমস্যা আছে বিজেপি-র। শক্ত হাতে সেগুলির সমাধান করতে হবে। তাই একজন মজবুত সভাপতি দরকার রাজ্য বিজেপি-র। যতক্ষণ না একজন পূর্ণ সময়ের সভাপতি হচ্ছেন…আমার মতে শুভেন্দুই হতে পারেন। সেটা যতক্ষণ না হচ্ছে, বিজেপি এগোতে পারবে না।”
বর্তমানে বিজেপি-র রাজ্য় সভাপতি সুকান্ত। বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় রয়েছেন শুভেন্দু। দিলীপ ঘোষ বেশ কিছুদিন হল রাজ্য় বিজেপি-তে কোণঠাসা, যার আমলে বিজেপি লোকসভায় বাংলা থেকে সর্বোচ্চ আসন পেয়েছিল। দিলীপকে দায়িত্বে ফেরানোর পক্ষে অনেকে সওয়াল করলেও, তথা গত শুভেন্দুর হয়ে ব্যাট ধরলেন। তাঁর কথায়, “ময়দানে নেমে কিছু করে দেখাতে হবে। এই জিনিসটা শুভেন্দুর মতো কেউ করে দেখাতে পারেননি। তাছাড়া শুভেন্দু ঠিক পথে চলছেন।”
শুভেন্দু যদিও বা বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি হন, সেক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা কে হবেন? তথাগতর বক্তব্য, “বিরোধী দলনেতা অন্য কেউ হবেন না। একজনও ফুল টাইম প্রেসিডেন্ট নেই। সুকান্ত দিল্লিতে আছেন। তিনি মন্ত্রিত্ব সামলাবেন, না এখান সামলাবেন?” তাঁর সাফ বক্তব্য, “ফর্মুলা এক হওয়া উচিত। সুকান্তকে সরিয়ে শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি করা হোক।” কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “উনি যেহেতু দিলীপ ঘোষকে সহ্য করতে পারেন না, তাই আর একজনের হয়ে ব্যাট করছেন। আসলে বিজেপি-র মধ্যে সেই অর্থে সাম্প্রতিক কালে তপন শিকদারের পর দিলীপ ঘোষই সফল। দিলীপকে সবাই মিসে দুর্গাপুর পাঠিয়ে হারিয়ে গিল। তবে এটা ওঁদের নিজস্ব আকচাআকচি, গোষ্ঠী সমীকরণ।”
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর বিজেপি-র একাধিক বড় নেতাকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তথআগত। ‘কামিনী কাঞ্চন’ মন্তব্য শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। আবার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে তৃণমূলের ‘সেটিং’ রয়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এবার সরাসরি সুকান্তর পরিবর্তে শুভেন্দুকে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি করা হোক বলে দাবি তুললেন। তথাগতর এই প্রস্তাব অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের মনঃপুত হয় কি না, তা-ই এখন দেখার। তবে এই প্রথম নয়, আগেও শুভেন্দুর সমর্থনে এগিয়ে আসেন তথাগত। জুলাই মাসে দলীয় বৈঠকে ‘জো হমারে সাথ, হম উনকে সাথ’ বলে যখন তুমুল বিতর্কে জড়ান শুভেন্দু, সুকান্তও যখন সেই মন্তব্য থেকে দূরত্ব বাড়ান, সেই সময়ও শুভেন্দুকে সমর্থন করেন তথাগত। শুভেন্দু যা বলেছেন, তা অগণিত বিজেপি কর্মীর মনের কথা বলে দাবি করেন।
আরও দেখুন