কলকাতা: বাংলাদেশে অশান্তির আবহে, এরাজ্য়ে তসলিমা নাসরিনের লেখা উপন্য়াস অবলম্বনে নাটক বন্ধের অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ‘লজ্জা’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি নাটকের মঞ্চস্থ হতে না দেওয়ার অভিযোগ। সোশাল মিডিয়া পোস্টে এই অভিযোগ তুলেছেন লেখিকা স্বয়ং। যদিও, উদ্য়োক্তাদের দাবি, এক শিল্পী অসুস্থ থাকায় নাটক মঞ্চস্থ করা যায়নি। (Taslima Nasrin)
সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তসলিমা লেখেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার ‘লজ্জা’ নাটকটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ করলেন। গোবরডাঙা এবং হুগলির পাণ্ডুয়া নাট্যোৎসবে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। দু’মাস যাবৎ বিজ্ঞাপন যাচ্ছে নাটকের। আর আজ বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এসে জানিয়ে দিল, সব নাটক মঞ্চস্থ হবে, শুধু ‘লজ্জা’ ছাড়া। নবপল্লী নাট্যসংস্থা দিল্লিতে নাটকটি তিনবার মঞ্চস্থ করেছে। তিন বারই প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ ছিল’। (Kolkata News)
তসলিমার বক্তব্য, ‘পুলিশ জানিয়েছে, ‘লজ্জা’ মঞ্চস্থ হলে মুসলিমরা না কি দাঙ্গা বাধাবে। মুসলিমরা দাঙ্গা বাধাবে এই অজুহাত দেখিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে লেখা আমার মেগাসিরিয়াল ‘দুঃসহবাস’, যেটি টেলিভিশনের আকাশ ৮ চ্যানেলে সম্প্রচার করার কথা ছিল, সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ‘লজ্জা’র ঘটনা বাংলাদেশের। কী কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে দাঙ্গা বাধাবে আমার বোধগম্য নয়। মুসলিমরা দাঙ্গা বাধাবে এই অজুহাত দেখিয়ে আমাকে এক সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছিল’।
বাংলাদেশের অশান্তির আঁচ ইতিমধ্যেই এ রাজ্যে এসে পড়েছে। সেই আবহেই তাঁর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি নাটক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তসলিমা। জানা গিয়েছে, ২৫ ডিসেম্বর থেকে পাণ্ডুয়ায় একটি ক্লাবের উদ্যোগে নাট্যোৎসব শুরু হচ্ছে। ২৯ ডিসেম্বর ‘লজ্জা’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ‘লজ্জা’ নাটকটিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তসলিমা।
এবিপি আনন্দে তসলিমা বলেন, “লজ্জা নাটকটি করছে দিল্লির নবপল্লী নামের একটি নাট্য সংস্থা। পাণ্ডুয়ায় নাট্যমেলায় সেটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। গতকাল আমাকে জানানো হল। নাট্যমেলার উদ্যোক্তারা না কি জানিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন বলেছে নাটকটি হলে দাঙ্গা লাগবে। বন্ধ করতে বলা হয়েছে নাটকটি। গোবরডাঙাতেও না কি একই সমস্যা।”
যদিও পাণ্ডুয়ার ক্লাবের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দে এই অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের এক শিল্পীর শরীর অসুস্থ। আসতে পারছেন না। তাই এই নাটকটা পোস্টপোন করে আমরা অন্য নাটক দিয়ে দিয়েছি।” অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রশাসনের তরফে কিছু বলা হয়েছে কি না জানি না। তাঁদের যা বলা হয়েছে, সেটাই জানালেন।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি-র হুগলি সাংসঠনিক জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার বলেন, “কোনও রকম চাপ হয়ত এসেছে। রাজ্যের পক্ষে না হলে বিরোধিতা আসে। চাপসৃষ্টি করা হয় যাতে সেটা না হয়। কারণ মানুষ জেনে যাবে তো!” এর পাল্টা তৃণমূলের হুগলি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অসিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বলছেন, একজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাতিল করতে হয়েছে। তসলিমা নাসরিনকে অনুরোধ, ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন।” হুগলি জেলার পুলিশও জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি তারা। গোবরডাঙা নাট্যোৎসবের উদ্যোক্তা আশিস দাসও জানিয়েছেন, ১৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বরে ‘লজ্জা’ নাটক নেই। দ্বিতীয় ধাপে রাখা হয়েছে, ১ জানুয়ারি। এখনও ঘোষণা হয়নি। দ্বিতীয় ধাপের অনুষ্ঠান সূচি ঘোষণা করা হবে। এখানে নাটক বন্ধের কোনও ব্যাপার নেই।
আরও দেখুন