উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, শিবাশিস মৌলিক,কলকাতা: বিধানসভা ভোটের এখনও এক বছর বাকি। তার আগেই বঙ্গ রাজনীতিতে ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে তুঙ্গে তরজা। আর এর মধ্যেও ঢুকে পড়েছে ধর্ম। মুখ্য়মন্ত্রী বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছিলেন, বাংলার লোক যাতে ভোট দিতে না পারে, সেজন্য় একই এপিক নম্বরে ভিনরাজ্যের লোকের নাম তোলা হচ্ছে। তার পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
আহা ভূত, বাহা ভূত, কিবা ভূত, কিমভূত, বাবা ভূত, ছানা ভূত, খোঁড়া ভূত, কানা ভূত। ভূতের কী বাহার। কিন্তু রোগা ভূত, মোটা ভূত অবধি শোনা গেলেও, হিন্দু ভূত, মুসলমান ভূতের কথা আগে শোনা যায়নি!বঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলির সৌজন্য়ে ঘুরপথে ভূতের মধ্য়েও কার্যত ধর্ম ঢুকে গেল। গতকাল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, ধরুন একটা নাম মুর্শিদাবাদের রানিনগরে বাড়ি মহম্মদ শাহিদুল ইসলাম, এর এপিক কার্ড নম্বর যেটা আছে পশ্চিমবঙ্গে, তাঁর সঙ্গে নাম যুক্ত করেছে সোনিয়া দেবী। তাঁর বাড়ি কোথায়, তাঁর বাড়ি হচ্ছে হরিয়ানা। মহম্মদ আলি হোসেন, রানিনগরে বাড়ি তাঁর সঙ্গে নাম তুলেছে কার,মনজিৎ, তাঁর বাড়ি হরিয়ানা। বানেরা বিবি, রানিনগর তাঁর সঙ্গে নাম তুলেছে কার, দীপক। বাবার নামও আছে। বাড়ি কোথায়? হরিয়ানা।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আমরা হিন্দু এবং জনজাতিদের ভোটে জিতেছি। আমি ওকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) হারালাম কী করে? একটা বড় অংশের, ৬৫ শতাংশ হিন্দু আমাকে ভোট দিয়েছে বলে। একটা লোকের নাম বাদ দিলে, যে ভাষায় কথা বলুক। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিতে এমনিতেই বাংলায় এখন কোণঠাসা সিপিএম। এখন ভূতুড়ে ভোটারদের মধ্য়েও যদি মেরুকরণ হয়, তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সওয়াল করে আসা কমিউনিস্টরা করবেটা কী? সিপিএমের রাজ্য় সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, সিঁধেল চোররা যদি চুরি করতে গিয়ে মারা যায় তাহলে না কি চোরাচুন্নি ভূতে পরিণত হয়।আর ভূতুড়ে ভোটার মানেও সেই একপ্রকার চুরিই। অর্থাৎ ভূত-ভবিষ্যৎ সব মিলেমিশে একাকার।
গতকাল মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছিলেন একই এপিক নম্বরে বাংলার ভোটারের যেখানে নাম আছে, সেখানে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার, সব নাম ঢুকিয়েছে।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিম, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভোট এখনও বহু দূরে।কিন্তু শাসক-বিরোধী সবার মুখে মুখে ভূতুড়ে ভোটারের প্রসঙ্গ! এখন ভোটের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে কে ভূতুড়ে ভোটার ঢুকিয়েছে আর কত ঢুকিয়েছে, তা নিয়েই বিতর্ক! বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের মেগা সাংগঠনিক সভার বক্তৃতার একটা বড় অংশ ভুতুড়ে ভোটার প্রসঙ্গে ব্য়ায় করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
আরও পড়ুন, ছাব্বিশের আগে বিজেপির কড়া নজর কোথায় ? কোন দূর্গ রক্ষার প্রস্তুতি নিতে চাইছে তৃণমূলও?
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, একই এপিক কার্ডে, একই এপিক কার্ডে কোথাও হরিয়ানা, কোথাও গুজরাত, গঙ্গারামপুর তো ঢেলে করেছে। মুর্শিদাবাদও ঢেলে করেছে। গঙ্গারামপুরে সব ঢুকিয়েছে গুজরাত, আর হরিয়ানা। আমেদাবাদ থেকে এখানে ভোট দিতে আসবে। মজাটা বুঝুন। সব জেলাতেই আছে। প্রত্য়েকটা দেখতে হবে কিন্তু। ছেড়ে দিলে চলবে না। হরিয়ানা ভর্তি। ভোটার লিস্ট নিয়েছে, ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনলাইন দিল্লি থেকে করছে। নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে বসে।মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
আরও দেখুন