কলকাতা: রাজ্য বিজেপি-র নতুন সভাপতি হলেন শমীক ভট্টাচার্য। সেই উপলক্ষে এই মুহূর্তে উৎসবমুখর রাজ্য বিজেপি। কিন্তু এই সবকিছু থেকেই দূরে বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। একসময় নির্বাচনী রাজনীতিতে বিজেপি-কে দাঁড় করিয়েছিলেন যিনি, সেই দিলীপের সঙ্গে বিজেপি-র বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের সমীকরণে ছেদ পড়েছে বলে জল্পনা। আর সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতিদের সম্মান জানাতে উদ্যোগী হলেও, একবারও দিলীপের নাম শোনা গেল না তাঁর মুখে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি নির্বাচিত হলেন শমীক। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপি-কে তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। গতকাল যখন শমীক মনোনয়নপত্র জমা দেন, সেই সময়ও তাঁর পাশে ছিলেন শুভেন্দু। ছিলেন বিজেপি-র সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শমীকের হাতে রাজ্য বিজেপি-র দায়িত্ব তুলে দেওয়া হলে, সেখানেও তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সুকান্ত এবং শুভেন্দুর ভাষণে ফারাক ধরা পড়ল অনেকটাই।
এদিন বক্তৃতার শুরুতেই বিজেপি-র অতীতের কথা বলেন শুভেন্দু। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “অতীত যদি কেউ ভুলে যায়, তার ভবিষ্যৎ ভাল হতে পারে না। তাই আমি প্রাক্তন সভাপতি ত্রয়, বর্ষীয়ান অধ্যাপক অসীম ঘোষ, দাদা রাহুল সিনহা এবং সতীর্থ সুকান্ত মজুমদারকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই, অভিনন্দন জানাই।” উল্লেখ্য, সুকান্তর আগে রাজ্য বিজেপি-র রাশ দিলীপের হাতে ছিল। তার অনেক আগে ওই দায়িত্ব সামলান অসীম, ২০০০ থেকে ২০০২ সালে। তার পর আসেন তথাগত রায়, ২০০২-২০০৬। তথাগতর পর সত্যব্রত মুখোপাধ্য়ায়, ২০০৮-২০০৯, তার পর রাহুল, ২০০৯-২০১৫। তাই দিলীপকে টপকে শুভেন্দু রাহুল এবং অসীমের নাম কেন নিলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবেই কি তিনি দিলীপের নাম মুখে আনলেন না, উঠছে প্রশ্ন।
শমীককে স্বাগত জানাতে গিয়ে এদিন দিলীপের কথা উল্লেখ করেন সুকান্ত। জানান, চার বছর আগে, এভাবেই তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন বিজেপি-র তদানীন্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ। এবার তিনি বয়সে প্রবীণ শমীকের ‘নবীন বরণ’ করলেন। আগামী দিনে শমীকও হয়ত অন্যের হাতে দায়িত্ব সঁপে দেবেন। কিন্তু শুভেন্দু একেবারেই সেই রাস্তায় হাঁটেননি।
রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপের সঙ্গে শুভেন্দুর দ্বন্দ্বের খবর আজকের নয়। সেই নিয়ে দলের অন্দরেও বিভাজন। শুভেন্দু সেই নিয়ে কোনও কথা না বললেও, দিলীপ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তৃণমূল থেকে কয়েকজনের বিজেপি-তে আসা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর আপত্তিতেই তাঁদের দিল্লি গিয়ে দলে যোগ দিতে হয়। দিলীপের কেন্দ্রবদল থেকে দলে কোণ ঠাসা হয়ে পড়ার নেপথ্যেও শুভেন্দুর হাত দেখেন দিলীপের অনুরাগীরা।