রুমা পাল, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, সৌমিত্র রায়, কলকাতা: ধর্ম নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে তরজা চলছেই। নিউটাউনের একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বললেন, ‘কে বলেছে, আমি আমার ধর্মকে শ্রদ্ধা করব না? আমরা প্রত্যেককে শ্রদ্ধা করি। সব সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করি। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা কটাক্ষ,’আপনাকে যে বলতে হচ্ছে আমি হিন্দু, আমি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের, খুব ভাল লাগছে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কে বলেছে, আমি আমার ধর্মকে শ্রদ্ধা করব না? ধর্ম যার যার আপনার, উৎসব কিন্তু সবার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, লাইনে এসে গেছেন আপনি। সুন্দর লাইনে এসে গেছেন। বছর ঘুরলেই যেখানে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু উন্নয়নের কথা দূরে সরিয়ে, এখন বিজেপি-তৃণমূলের মুখে শুধুই ধর্ম! যার সূচনা হয়েছে এবছর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো ঘিরে বেনজির ছবিগুলো। কোথাও পুলিশের পাহারায় করতে হয়েছে পুজো।
কোথাও নামাতে হয়েছে RAF. যার প্রতিবাদে গত সোমবার বিধানসভায় সরব হয় বিজেপি। মুলতুবি প্রস্তাব আনেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।প্রস্তাব পাঠের অনুমতি দিলেও আলোচনার দাবি খারিজ করে দেন অধ্যক্ষ। তারপরই শুভেনদু অধিকারীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। অধ্যক্ষের চেয়ারের দিকে কাগজ ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। এরপর ৩০ দিনের জন্য বিরোধী দলনেতা-সহ ৪ বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন অধ্যক্ষ।
সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘আমরা গর্বিত, হিন্দুদের জন্য বলতে গিয়ে সাসপেন্ড করেছে। যেহেতু, বিধানসভা থেকে আমাকে অবৈধ ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে, হিন্দুদের জন্য বলার জন্য। বাগদেবীর জন্য বলার জন্য। এই সরকার, মোল্লাদের সরকার। এই সরকার, মুসলমানদের সরকার।’ শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আবার বিধানসভায় স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস এনেছে সরকারপক্ষ।সেই সঙ্গে সরস্বতী পুজো নিয়ে বিরোধী দলনেতাকে পাল্টা জবাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন,’নাকি সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না বাংলায়! সব বাড়িতে বাড়িতে পুজো হয়েছে। সব স্কুলে পুজো হয়েছে। সব কলেজে পুজো হয়েছে। সব ক্লাবে পুজো হয়েছে। সব পাড়ায় পুজো হয়েছে। ৩-৪ কোটি পুজো হয়েছে সরস্বতী পুজো। তারাপীঠের মন্দির, ভোগঘর থেকে শুরু করে, তারাপীঠ উন্নয়ন কমিটি থেকে শুরু করে, মায়ের মন্দিরের সম্পূর্ণটা, রাস্তাটা, গেটটা কে করেছিলেন? আপনারা? এটা আমরা করেছিলাম।’
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, বৃহস্পতিবার নিউটাউনে একটি বেসরকারি হাসপাতালের শিলান্যাস করতে গিয়েও সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সব মানুষ মিলেমিশে একটা দেশ তৈরি হয়। এই দেশে তো একটা রাজ্য নয়, কত রাজ্য! এক একটা রাজ্যের এক একটা ভাষা, এক একটা রাজ্যের এক একটা শিক্ষা, এক একটা রাজ্যের এক একটা খাওয়াদাওয়া, এক একটা রাজ্যের এক একটা সংস্কৃতি। কিন্ত আমরা প্রত্যেককে শ্রদ্ধা করি। আমরা সব সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করি। আর তার জন্যই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য আমাদের ঐতিহ্য। এটা আমাদের উৎস, আমাদের দর্শন, আমাদের আদর্শ।’
পাল্টা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘যা খুশি বলে যাচ্ছেন ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট! আমি ব্যানার্জি, আমি ব্রাহ্মণ, খুব ভাল লাগছে। হিন্দুদের কাছে যে আপনি কোয়েশ্চন মার্ক হয়ে গেছেন। আপনাকে যে বলতে হচ্ছে আমি হিন্দু,আপনাকে যে বলতে হচ্ছে আমি ব্যানার্জি পরিবার, আপনাকে যে বলতে হচ্ছে আমি শিবঠাকুরের দিকে মাথা করে ঘুমাই, খুব ভাল লাগছে। খুব ভাল লাগছে।’
গত কয়েক বছর ধরে গোটা দেশে হিন্দু মুসলমানের রাজনীতি খুল্লমখুল্লা চলছে। কোনও রাখঢাক না রেখে। এবার বাংলাতেও কি তা শুরু হয়ে গেল? শুভেন্দু বলেন, ‘আপনি কত বড় সাম্প্রদায়িক সেটা নন্দীগ্রাম দেখিয়েছে। বিজেপি এমএলএরা মুসলিমদের ভোটে জিতিনি। হিন্দুদের ভোটে জিতেছি। আমরা দায়বদ্ধ।’ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘ও হচ্ছে তৎকাল হিন্দু। বেশি হিন্দুত্ব না করলে ও দলে পিছিয়ে পড়বে।’ বাংলায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্য়ে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি যখন তুঙ্গে, তখন এই পরিস্থিতির জন্য মূলত তৃণমূলকেই দায়ী করছে সিপিএম।
আরও পড়ুন, ‘সরকার থেকে বেরিয়ে আসার আগে আরও বিশ্লেষণের প্রয়োজন ছিল’, কার্যত আক্ষেপের সুর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির গলায় !
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেন,’এই ধর্ম নিয়ে বায়েনারি তৃণমূল-বিজেপি অনেকদিন ধরে করছে, নতুন কিছু নয়। ধর্ম সবাই করতে পারে, কিন্তু ওরা রাজনীতি করছেন। RSS-কে কে নিয়ে এসেছে, BJP-কে কে নিয়ে এসেছে?’ধর্ম নিয়ে যেভাবে তরজা চলছেন, তা দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে, এবার কি বাংলাতেও পুরোপুরি ভোট হবে ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে?
আরও দেখুন