নয়াদিল্লি: প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা থেকে বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে কটাক্ষ, দেশের রাজনীতিতে বার বার উল্লেখ শোনা যায় পাকিস্তানের। মতপার্থক্য ঘটলে পাকিস্তান চলে যেতে বলা হয় কাউকে, তো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাকে পাকিস্তান বলে উল্লেখের চল রয়েছে। সেই নিয়ে এবার কড়া নির্দেশ দিল দেশের সুপ্রিম কোর্ট। দেশের কোনও অংশকে, কেউ পাকিস্তান বলে উল্লেখ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। (Supreme Court)
একটি মামলার শুনানিতে বুধবার এই মন্তব্য করে সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “দেশের কোনও অংশকে, কেউ পাকিস্তান বলতে পারেন না। এমন মন্তব্য দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পরিপন্থী। আদালতে যা কিছু ঘটে, তা কিছুই গোপন রাখা উচিত নয়। মানুষের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়।” (Supreme Court on Pakistan Remarks)
কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি বেগব্যাসাচর শ্রীষনন্দার একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক বাধে। সেই বিতর্ক ঘুরেফিরে দেশের শীর্ষ আদালতে এসে পৌঁছয়। জানা যায়, বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটের বিবাদ নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি শ্রীষনন্দা বেঙ্গালুরুর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাকে পাকিস্তান বলে উল্লেখ করেন। এক মহিলা আইনজীবীকে নিশানা করে তিনি নারীবিদ্বেষী মন্ত্বব্যও করেন। সেই নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নেন। কিন্তু মামলাটি উচ্চ আদালতে পৌঁছয়।
বুধবার সেই মামলারই শুনানি চলাকালীনই দেশের যে কোনও জায়গাকে পাকিস্তান বলায় আপত্তি জানান প্রধান বিচারপতি। পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কর্নাটক হাইকোর্টের ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া যদিও বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু প্রধান বিচারপতি জানান, বিচার ব্যবস্থার স্বার্থে, বিচারব্যবস্থার মর্যাদার প্রশ্নেই এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতির ওই মন্তব্য সংক্রান্ত মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই হস্তক্ষেপ করেছিল শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি, বিচার পতি এস খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি এস কান্ত এবং বিচারপতি এইচ রায়কে নিয়ে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গঠিত হয়। আদালতে বিচারপতিরা কী ধরনের মন্তব্য করতে পারেন, তা নিয়ে নির্দেশিকা তৈরির কথাও বলে শীর্ষ আদালত।
আজ শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন, “হালকা চালে কোনও মন্তব্য করা হলেও, তা কোনও বিশেষ সম্প্রদায় বা লিঙ্গের মানুষের প্রতি ব্যক্তিগত পক্ষপাত ইঙ্গিত করে। এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষ সম্প্রদায় বা বিশেষ লিঙ্গের মানুষের প্রতি এমন মন্তব্যে আমরা উদ্বিগ্ন, বিষয়টিকে নেতিবাচক ভাবেই দেখা উচিত।” বর্তমান দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা যেখানে অপরিসীম, আদালতের শুনানিও যেখানে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে, সেখানে বিচারব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষা হচ্ছে কি না, তা দেখা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
আরও দেখুন