
মহাকাশের ‘নির্বাসন’ পর্ব কাটিয়ে ফিরে এসেছেন পৃথিবীতে। এতদিন পর কাটল নিভৃতবাসও। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সতীর্থ ব্যারি বুচ উইলমোর।

মহাকাশ থেকে ফিরেই সঙ্গে সঙ্গে পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে যাওয়া যায় না। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে দীর্ঘদিন থাকার ফলে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনই অজানা ব্যাকটিরিয়া বা রোগ বয়ে আনার ঝুঁকিও থাকে।

ফলে মহাকাশচারীদের কিছু দিন নিভৃতবাসে থাকতে হয়। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যেমন, আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চলে শারীরিক প্রশিক্ষণ, কসরত। মার্চ মাসে পৃথিবীতে ফেরার পর এতদিনে সেই পর্ব শেষ হল সুনীতা এবং ব্যারির।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছেন ব্যারি। তাঁর বক্তব্য, “ফির আসার পর রিহ্যাব-পর্ব শেষ হল। প্রথম প্রথম মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব অনুভব করে বিরক্তি জন্মায়। এক একজনের ক্ষেত্রে সময়টা এক এক রকমের হয়। তবে স্নায়ুর ভারসাম্য সংক্রান্ত সমস্যা একসময় কেটে যায়।”

সুনীতা বলেন, “একটা ঝড় গেল যেন! যাঁদের সঙ্গে কাজ করছি, তাঁদের প্রতি দায়বদ্ধতাও আছে আমাদের।” সুনীতা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক হতে সময় লাগছিল তাঁর। সবসময় ক্লান্তি গ্রাস করছিল। বিশেষ করে, সেরে ওঠার শেষ লগ্নে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। এমনিতে সকাল সকাল উঠে পড়ার অভ্য়াস থাকলেও, তা হচ্ছিল না। তবে সপ্তাহ খানেক আগে থেকে ফের চাঙ্গা বোধ করতে শুরু করেন। সুনীতার কথায়, “আবারও সকাল ৪টের সময় উঠে পড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। মনে হল, আহা, নিজেকে আবার ফিরে পেলাম।”

ব্যারি জানিয়েছেন, মহাকাশে যাওয়ার আগে থেকেই পিঠ এবং ঘাড়ের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মাথা ঘোরাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। কিন্তু মহাকাশে সেই সব দূর হয়ে যায়। সেখানে শরীর হালকা মনে হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু পৃথিবীতে ফেরার পর আবারও যন্ত্রণা গ্রাস করে। এমনকি যেদিন পৃথিবীতে ফেরেন, মহাকাশযান আটলান্টিকের জল ছোঁয়ামাত্রই যন্ত্রণা ফিরে আসে বলে জানান।

গত বছর আট দিনের অভিযানে Boeing Starliner-এর মহাকাশযানে চেপে পৃথিবী ছাড়েন সুনীতা এবং ব্য়ারি। কিন্তু মহাকাশযানটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ঘরে ফেরা হয়নি তাঁদের। আটদিনের অভিযান ন’মাসের ‘নির্বাসনে’ পরিণত হয় কার্যত।

দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার অর্থ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব থেকে দূরে থাকা। এর ফলে হাঁটাচলার অভ্যাস যেমন চলে যায়, শরীরের কার্যক্রমও বিঘ্নিত হয়। ফলে পৃথিবীতে ফিরে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

মহাকাশচারীদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তাই বিশেষ পরিকল্পনা থাকে। অন্তত পক্ষে ৪৫ দিনের নিভৃতবাসে কাটাতে হয় মহাকাশচারীদের। সেখানেই আবার মহাকাশচারীদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনা হয় একটু একটু করে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-ও সুনীতা এবং ব্যারির জন্য তেমন বন্দোবস্ত করেছিল।

নিভৃতবাস কাটিয়ে বেরনোর আগে শারীরিক শক্তি পরীক্ষা হয়েছে সুনীতা এবং ব্যারির। দিনে অন্তত পক্ষে দু’ঘণ্টা শারীরিক কসরত বাধ্য়তামূলক ছিল তাঁদর জন্য। সর্বক্ষণ তাঁদের উপর নজরদারি চালাচ্ছিল চিকিৎসকদের দল।

তবে Boeing Starliner-এর আগামী অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুনীতা। তাঁর মতে, ওই সংস্থার যানে চাপিয়ে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর আগে, সবদিক পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
Published at : 29 May 2025 09:10 PM (IST)
আরও জানুন বিজ্ঞান
আরও দেখুন