কলকাতা: যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অশান্তির আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যে। জায়গায় জায়গায় বাম ছাত্র সংগঠন SFI এবং তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন TMCP-র মধ্যে সংঘর্ষ, অশান্তি শুরু হয়েছে। মারামারি, ধাক্কাধাক্কি কিছু বাদ নেই। কিন্তু এই সংঘর্ষ, অশান্তি লোকদেখানো বলে মন্তব্য করলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর দাবি, BJP-কে রুখতে CPM-কে তোল্লাই দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাতে রাজ্য রাজনীতিতে তারা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। (Sukanta Majumdar)
বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। SFI-TMCP সংঘর্ষ তারই উপলক্ষ মাত্র বলে মত সুকান্তর। তাঁর কথায়, “এখন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতেই এটা হবে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় SFI-কে হাইপ দিতে চাইছেন, CPM-কে হাইপ দিতে চাইছেন উনি। BJP-কে রুখতে উনি SFI-কে হাইপ দিচ্ছেন।” (SFI-TMCP Clash)
সুকান্তর বক্তব্য, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখার পর, পশ্চিমবঙ্গে সরস্বতী পুজো বন্ধ হওয়ার পর, রাজ্যের হিন্দুরা বুঝে গিয়েছেন যে আগামী দিনে বাংলাদেশ পার্ট ২ অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য। মমতা সেটা বুঝে গিয়েছেন। তাই হিন্দু ভোটকে ভাগ করতে হবে। কারণ BJP সব হিন্দু ভোট পেলে…আর ৪ শতাংশ ভোট পেলেই সরকারে চলে আসবে BJP. হিন্দু ভোট ভাগ করতে তাই CPM-কে তোলা হচ্ছে।”
বিভিন্ন জেলায় এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তার গোটাটাই সাজানো বলে ইঙ্গিত সুকান্তর। তাঁর কথায়, “CPM এখন সামনের দিকে এগোবে, SFI-এর সঙ্গে সংঘর্ষ হবে, হামলা হবে ওদের নেতাদের উপর, দলীয় কার্যালয়ে। রাজনীতিতে কেউ প্রাসঙ্গিক হলে হামলা হয়। CPM প্রাসঙ্গিক ছিল না”, নেই। তাই হামলাও হচো না। এখন হামলা চালিয়ে প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু বাংলার মানুষ বুঝে গিয়েছেন, CPM-কে ভোট দেওয়ার অর্থ পক্ষান্তরে তৃণমূলকে সাহায্য় করা।”
ছাত্র সংসদের নির্বাচন করার দাবি থেকে সপ্তাহান্তে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অশান্তি দেখা দেয়, বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়, শিক্ষাঙ্গনে তা ছড়িয়ে পড়েছে। SFI-এর ধর্মঘটের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে TMCP। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে SFI-TMCP সংঘর্ষ, SFI সমর্থককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারের ঘটনা সামনে এসেছে। মারধরে মুখ ফাটল এসএফআই সমর্থকের। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান AIDSO-র সদস্যরা। TMCP-র সদস্যরা চড়াও হলে দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সংঘর্ষে AIDSO-র দু’জন আহত হয়েছেন বলে দাবি। পরে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গেটে পোস্টার লাগানোকে ঘিরে উত্তেজনা বাধে। AIDSO-কে দেয় TMCP. পোস্টার খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট খোলে পুলিশ। পাঁশকুড়া বনমালী কলেজেও ধুন্ধুমার বাধে। AIDSO এবং TMCP-র সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এক ছাত্রীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া মাটিতে। AIDSO-র দাবি, তাদের চারজন আহত হয়েছেন। যাদবপুরকাণ্ডের প্রতিবাদে এদিন বনমালী কলেজের গেটের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করছিল AIDSO. অভিযোগ, তখনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। SFI-এর ধর্মঘট ঘিরে মেদিনীপুর কলেজে তুলকালাম বাধে। সংঘর্ষে জড়ান SFI এবং TMCP-র সদস্যরা। কলেজের ১ নম্বর গেটে SFI-এর অবস্থান চলাকালীন সেখানে চড়াও হন TMCP-র সদস্যরা। SFI সদস্যদের মারধর করে, টেনে-হিঁচড়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে তাঁরা পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছে বাম ছাত্র সংগঠন। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ বার বার ক্যাম্পাসে ঢুকছে বলে তাদের অভিযোগ। SFI-এর অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নেতৃত্বে বহিরাগতরা নিয়ে হামলা চালানো হয়। কয়েকজন SFI সদস্য জখম হয়েছেন বলে দাবি। যাদবপুরকাণ্ডের প্রতিবাদে DSO-র কর্মসূচি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অশান্তি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে DSO-র কর্মসূচিতে বাধা পুলিশের। টেনে-হিঁচড়ে DSO সমর্থকদের তোলা হয় পুলিশ ভ্যানে। SFI বনাম TMCP-র সমর্থকদের মধ্যে মারপিট হয় কোচবিহারে।
আরও দেখুন