ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধের পরেও স্কুলমুখী হচ্ছেন না চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আরও একটা রাত কাটালেন শহিদ মিনার চত্বরে খোলা আকাশের নীচে। বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন চাকরিহারারা। নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গেছিলেন অনেক আশা নিয়ে। যোগ্য-অযোগ্য বিতর্কে রাজ্য সরকারের অবস্থান এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ কী, সে সম্পর্কে স্পষ্ট দিশা না মেলায় যথেষ্টই হতাশ চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা। এমনই দাবি তাঁদের মধ্যে অনেকের।
এক চাকরিহারা এদিন বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম, কিছু নির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া নিয়ে। আমরা দিশেহারা। আমরা কোনও সঠিক দিশা দেখতে পাইনি তাঁর বক্তব্যে। আমরা দেখেছি, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন প্রথমে যোগ্যদের যে করে হোক বাঁচানো হবে। কী পদ্ধতি-এ, বি, সি, ডি, ই সেটা তো আমরা জানি না। পদ্ধতি কী আছে আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। বারবার বলছেন, যোগ্যদের বাঁচাতে হবে, যোগ্যরা চাকরি ফিরে পাবেন। টার্মিনেট করা হবে না। বেতন পাবেন। আবার পরবর্তীতে বলছেন, যদি সুপ্রিম কোর্টে নেগেটিভ কিছু হয়, তাহলে দুই-তিন মাসের মধ্যে একটা কিছু ব্যবস্থা করব। তাঁদের পুষিয়ে দেওয়া হবে। হোয়াট ডু ইউ মিন ? দুই মাসেরটা পুষিয়ে দেবেন মানে ? আমরা কি পোষানোর জন্য বসে আছি ? আমরা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী। আমরা পোষানোর জন্য বসে নেই। আমাদের পোষাতে হবে না। আমরা চাই, আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে। উনি এটাও বলেছেন, এখন যোগ্যদেরটা ভাবছি। পরে অযোগ্যদেরটা ভাবব। এটা কখনো মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন ? যে দুর্নীতি নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই জিনিসটা গোটা রাজ্য, দেশ, এমনকী বিশ্বব্যাপী জানে। সেখানে উনি আবার অযোগ্যদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন ? এটা হতে পারে না। ওঁর স্ট্যান্ড পয়েন্ট ক্লিয়ার হওয়া দরকার। যে, যোগ্যদের হয়ে উনি কথা বলবেন। অযোগ্যদের নিয়ে ভাববেন মানে উনি কি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন ? কারণ, রাজ্য সরকারের দুর্নীতির জন্য় আজ আমাদের এই অবস্থা। আজ রাজ্য সরকার-এসএসসি-পর্ষদ-শিক্ষা দফতর…সমস্তটাই দুর্নীতিতে জড়িত। সবাই জেলে ভর্তি। তাঁরা জেল থেকে জামিনও পেয়ে যাচ্ছেন। ভুগতে হচ্ছে শুধু আমাদের মতো চাকরিহারাদের।”
তাঁর সংযোজন, “আমাদের দুটো-তিনটে দাবি আছে। এগুলো মানতেই হবে। আমরা চরমপন্থী আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। স্কুলে তো আমরা যাবই না। প্রথমত, মিরর ইমেজ আপনার কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন, কোথায় আছে খুঁজে বের করুন। যে কোনও মূল্যে প্রোডিউস করুন। ওটা পারে আমাদের বাঁচাতে। দুই নম্বর, যোগ্য-অযোগ্য লিস্ট আলাদা করে সার্টিফাই করুক এসএসসি। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব নয়। এটা এসএসসির দায়িত্ব আলাদা করা। সেটা করে ওয়েবসাইটে এবং বিভিন্ন খবরের কাগজে পাবলিশ করা হোক। তৃতীয়ত, আমরা আর কোনও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব না। এটা আমাদের জন্য অসম্মানজনক। আমাদের কাছে ভলান্টারি সার্ভিস দেওয়াও অসম্মানজনক। আমার এগুলো করতে পারব না। আমরা চাই, যে কোনও মূল্যে আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”
আরও দেখুন