NOW READING:
‘নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা নয়, থামিয়ে দেয় আদালত, তাহলে কেন সিদ্ধান্ত?’ রায় মানছেন না চাকরিহারারা
April 6, 2025

‘নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা নয়, থামিয়ে দেয় আদালত, তাহলে কেন সিদ্ধান্ত?’ রায় মানছেন না চাকরিহারারা

‘নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা নয়, থামিয়ে দেয় আদালত, তাহলে কেন সিদ্ধান্ত?’ রায় মানছেন না চাকরিহারারা
Listen to this article


কলকাতা: রামনবমী ঘিরে মাতোয়ারা গোটা রাজ্য। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের জীবনে বনেমে এসেছে দুঃস্বপ্ন। তাই গেরুয়া ধ্বজায়, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে গোটা শহর যখন ছেয়ে গিয়েছে, তাঁরা গুমরে মরছেন প্রতি মুহূর্তে। তাই রামনবমীর দিনেই রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী রাজনৈতিকগুলির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তাঁরা। শাসক-বিরোধী প্রত্যেকেই সমবেদনা রয়েছে বলছেন, কিন্তু ন্যায় দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা কী করছেন, প্রশ্ন তুললেন চাকরিহারারা। (SSC Scam)

রবিবার রামনবমীতে উৎসবের আমেজ শহর থেকে জেলায়। কিন্তু চাকরিহারাদের মধ্যে হাহাকার। সেই নিয়ে শহিদ মিনার থেকে মুখ খুললেন তাঁরা। জানালেন, আগামী কাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দেখা করতে যাবেন অবশ্যই। তবে সমবেদনা কুড়োতে নয়, সান্ত্বনা পেতে নয়, তাঁদের বাঁচানোর দায় যে রাজ্য সরকারের, সেই বার্তাই দেবেন মুখ্যমন্ত্রীকে। (SSC Case)

কলমের এক আঁচড়ে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিহারারা। তাঁদের বক্তব্য, “দু’টো ক্যাটেগরি আছে বলে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে উঠে এল। বুঝতে পারল দু’টো ক্যাটেগরি আছে। কিন্তু তার পর কী কর? গোটা প্যানেল বাতিলের রায় দিল। চাকরি বাতিলের শেষ কারণ হিসেবে বলা হল, নিয়োগ প্রক্রিয়াই অবৈধ। অথচ আদালতে যখন সওয়াল-জবাব চলছিল, নিয়োগ কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা পৃথকীকরণ চান, আমরা জানাই পৃথকীকর চাই বলে। যাঁরা ঘুষ দিয়েছেন, তাঁদের বের করে আমাদের রাখতে বলি। নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি বলে দুই পক্ষ দাবি করেছিলেন, Not Call For Verification-এর আইনজীবী এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। প্রধান বিচারপতি তাঁদের থামিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে না। নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক আছে।’ অর্থাৎ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে দিলেন না, অথরিটিকে বলতে দিলেন না, ঠিক মতো বলতে দিলেন না আমাদেরও। কাউকে বলতে না দিয়ে এমন বিষয়ে রায় দিলেন, যা নিয়ে আলোচনাই হল না আদালত কক্ষে।”

চাকরি বাতিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা মানতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন চাকরিহারারা। তাঁদের বক্তব্য, “২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের প্যানেল সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দিলেন। তার মধ্যে যোগ্য থাকা সত্ত্বেও, যোগ্যের অবজার্ভেশন থাকা সত্ত্বেও, প্রতিষ্ঠিত সত্য থাকা সত্ত্বেও শেষ করে দিলেন। এটা কোনও রায় হতে পারে না। এই রায় প্রত্যাখ্যান করছি আমরা। মানছি না এই রায়। কেন মানব এই রায়? দীর্ঘদিন ধরে সমাজে এটা প্রতিষ্ঠিত যে আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, আইনের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। কোন আইন? যে আইন মানুষকে রক্ষা করতে, জীবন-জীবিকা বাঁচানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেই আইন আমাকে ধ্বংস করল। পারলাম না মানতে। এই আইন মানার উপায় নেই আমাদের। কারণ মৃত্যুর চেয়ে ভয়ের কিছু হতে পারে না। চাকরি শেষ হওয়া আমাদের কাছে মৃত্যু। এবার যা করার করব আমরা।”

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল, প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং সিপিএম-এর দিকেও আঙুল তুলেছেন চাকরিহারারা। তাঁদের কথায়, “এই রায়ের পর সব রাজনৈতিক দল মরাকান্না কাঁদছে। আমার লাশের উপর দাঁড়িয়ে সিমপ্যাথির মার্কেটিং করছে। রায়ের দিন রাজ্য সরকার বিবৃতি দিল। বলা হল, নেতাজি ইন্ডোরে যেতে। আমরা যাব, অবশ্যই যাব। রাজ্যের প্রধান, মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছেন, যাব। কারণ আমার যে মৃত্যু প্রতিষ্ঠিত হল, তার জন্য রাজ্য সরকার কম দায়ী নয়। কারণ প্রথম যে দুর্নীতি হয়, সেটা প্রতিষ্ঠান থেকেই হয়। আমাকে খুনের ষড়যন্ত্র হয় প্রতিষ্ঠান থেকেই। তাই কী ভাবে বাঁচাবেন, কোন ফাঁক দিয়ে বাঁচাবেন, তা আপনি এবং আপনারা বুঝুন।। আমাদের বোঝার দরকার নেই। আমরা যারা যোগ্য, যাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব আপনাদের। এটাই বলতে যাব আমরা।”

চাকরিহারাদের বক্তব্য, “বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলগুলিকেও দেখেছি। দিলীপ ঘোষ আজই বলেছেন, রায় পুনর্বিবেচনা হওয়া উচিত। নেতা হওয়ার আগে মামলায় যুক্ত ছিলেন যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, তিনি বলেছেন বাঁচানোর রাস্তা আছে। সিপিএম-ও বলেছে অন্যায় হয়েছে। অন্যায় হয়েছে বলেছে শাসকদলও। অন্যায় হয়েছে বলছেন যখন, তার মানে রায়ের বিরুদ্ধেই বলছেন। আদালতের বিরুদ্ধে নয়, রায়ের বিরুদ্ধে বলছি। কারণ যে বিষয় নিয়ে আলোচনাই হল না, তা নিয়ে রায় হয় কী করে? আমাদের রাজ্যের কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (সুকান্ত মজুমদার)-কে পাশে নিয়ে বিজেপি-র সম্বিত পাত্র সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, রাজ্যে রাজ্যে নাকি সিবিআই ঢুকতে দেওয়া হয়নি! সিবিআই এখানে তদন্ত করেছিল, রিপোর্ট দিয়েছিল। তাদের চারটি চার্জশিটের প্রত্যেকটিতে কারা দুর্নীতিবাজ, কারা টাকা দিয়েছে, কাকে টাকা দিয়েছে, কার কোথায় বাড়ি, সব আছে। সিবিআই-এর সেই নথি আদালত জানল, কিন্তু মানল না। আশ্চর্য ব্যাপার! তাহলে সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন কী? যে সংস্থাকে মান্যতা দেওয়া হয় না, তার প্রয়োজন কী? আমাদের রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে বলা হল, নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ, ঠিক ভাবে হয়নি। যা নিয়ে চর্চাই হল না আদালতে, তার জন্য আমাকে ফাঁসি দেওয়া হল।”

আদালতের রায়ের সমালোচনা করে চাকরিহারারা বলেন, “সম্ভাবনার কথা বলছেন। কখনও বলছেন, মনে হয় এরা জড়িত, কখনও বলছেন এরা বোধহয় জড়িত নয়। এই সম্ভাবনা, মনে হওয়ার উপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া যায় না। OMR শিট পাওয়া যায়নি, মিরর ইমেজ নেই বলা হল। না থাকলে তার দায় আমার নয়। যারা অবৈধ কাজ করল, তারা শাস্তি পেল না, শাস্তি পেলাম আমরা। আমাদের বলি দেওয়ার অধিকার কোন আইনের আছে? আমরা যখন প্রমাণিত অবৈধ নেই, আমাদের বিরুদ্ধে যখন কোনও প্রমাণ নেই, সেক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে, তাদের সঙ্গে আমাদের বাদ দেওয়া হল কেন? এই অপ্রমাণিত, অসত্যের জায়গায় সুপ্রিম কোর্টের মতো কোনও বেঞ্চ রায় দিতে পারে কি? দেশের মানুষের কাছে এই প্রশ্ন পাঠালাম আমরা। যাঁরা মনে করেন আদালত শেষ ভরসা, আমরাও তা-ই মনে করি, কিন্তু ন্যায় বিচার পেলাম না। আমাদের ধ্বংস করা হল। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সমবেদনা আছে। সমবেদনা আছে বলছেন বাকিরাও। বিরোধী দলনেতা, সিপিএম-ও বলেছে। এঁদের মধ্য়ে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও, এব্যাপারে না কি সবাই এক, সবার সমবেদনা আছে! তাহলে চাকরি বহাল রাখতে হবে।”



Source link