NOW READING:
শুভেন্দু ‘হিন্দুত্ববাদী’, ‘শমীক বহুত্ববাদী’, বাজপেয়ী-আডবাণীর কৌশলে চলছে রাজ্য বিজেপি?
July 8, 2025

শুভেন্দু ‘হিন্দুত্ববাদী’, ‘শমীক বহুত্ববাদী’, বাজপেয়ী-আডবাণীর কৌশলে চলছে রাজ্য বিজেপি?

শুভেন্দু ‘হিন্দুত্ববাদী’, ‘শমীক বহুত্ববাদী’, বাজপেয়ী-আডবাণীর কৌশলে চলছে রাজ্য বিজেপি?
Listen to this article


কলকাতা: পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে বাকি মাত্র কয়েক মাস। আর তার আগেই রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য। রাজ্য বিজেপি-র দায়িত্ব হাতে নিয়েই সংখ্যালঘুদের কাছে টানার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অথচ তাঁরই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, হিন্দুভোটেক একত্রিত করা জোর দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। মুসলিম ভোটে বিজেপি জেতেনি, এমন বলতেও শোনা গিয়েছে শুভেন্দুকে। দলের দুই নেতার এই ভিন্ন অবস্থান কি তাহলে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ? অটল বিহারি বাজপেয়ী যেমন ‘নরম’ অবস্থানে থাকতেন এবং লালকৃষ্ণ আডবাণী যেমন ‘চরম’ অবস্থানে থাকতেন, সেই নীতি কি বাংলায় কার্যকর করতে চাইছেন শমীক? তিন কি শিক্ষিত, ভদ্রলোককে ভোটব্যাঙ্ক করতে চাইছেন, আর শুভেন্দু কি ‘চরম হিন্দুত্ববাদী’দের? এবিপি আনন্দের নিউজ অ্যান্ড প্রোগ্রামিং-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের উত্তর দিলেন শমীক। (West Bengal BJP)

প্রশ্ন: রাজ্য সভাপতি হয়ে শমীক ভট্টাচার্য ইতিহাস সংশোধনে আগে মন দেবে, না বর্তমান, ১০ মাসের মধ্যে এ রাজ্যে ভোট। তাহলে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে তাকাবে, না ইতিহাস সংশোধনের দিকে যাবে? কোনটা প্রায়োরিটি। (Samik Bhattacharya)

শমীক: প্রায়োরিটি একটাই,তৃণমূলের বিসর্জন। এখানে বিজেপি-র কিছু করার নেই খুব একটা। গণতন্ত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। ২০১১ সালে সিপিএম-এর ব্রিগেড দেখে বোঝা যায়নি দলটা হারতে চলেছে। দলের একমাত্র পরিচ্ছন্ন মুখ, ব্র্যান্ড, তিনি এমন একজনের কাছে হারছেন, যিনি ২১ জুলাই গুলি চালানোর অর্ডার দিয়েছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হেরে গিয়েছিলেন, কারণ মানুষ।

প্রশ্ন: তুমি মুখের কথা বললে, ১০ মাস পর বিজেপি-র এ রাজ্যে মুখ কে?

শমীক: সে তো স্টুডিও-র ফ্লোরে ঠিক হবে না। আমার এতগুলো রাজ্যে মুখ ছাড়া নির্বাচন লড়ছে। ভারতবর্ষকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি, পৃথিবীর জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আধুনিক প্রজন্মের কাছে আইকন। 

প্রশ্ন: কিন্তু গত সপ্তাহে  অসমে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে ভোটের মুখ ঘোষণা করেছেন অমিত শাহ স্বয়ং। পশ্চিমবঙ্গ তেমন মুখ পাবে না? শুভেন্দু অধিকারী এখনও মুখ নয়?

শমীক: দেখুন মুখ দল যদি ঘোষণা করে, সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ব্যাপার।

প্রশ্ন: তাহলে বলছো পশ্চিমবঙ্গে মুখ ঘোষণার প্রয়োজন নেই?

শমীক: স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভোটকুশলী অমিত শাহ। একবার ২০০ পার হয়নি বলে…

প্রশ্ন: কিন্তু আমাদের রাজ্যে ৭৭-এ আটকে গেল কেন?

শমীক: গাড়িটা আটকে গিয়েছে। কিন্তু একেবারে পরপারে পাঠানোর জন্য আটকে গিয়েছে। তৃণমূল হারবে, হারতে চলেছে। স্বাভাবিক রাজনৈতিক মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে তৃণমূল। নইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের রাজনৈতিক বোধ মিথ্যে হয়ে যাবে। সেটা হবে না।

প্রশ্ন: রাজ্য সভাপতি হিসেবে পর পর শমীক ভট্টাচার্য যা বলছে, তা তো বিরোধী দলনেতার চেয়ে একেবারে আলাদা! নাকি আসেল এটা কৌশল যে, শুভেন্দু হিন্দুত্ববাদী, আর শমীক বহুত্ববাদী। শ্যামও রাখলাম, কূলও রাখলাম। আর যদি কৌশল না হয়, তাহলে শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সংঘাত অনিবার্য। আর সেই সংঘাত লাগলে তো ঝগড়ায় কাকচিলও বসতে পারবে না দু’দিন পর?

শমীক: প্রথম কথা হল, হিন্দুত্ব কোনও বাদ নয়, এটা জীবন শৈলী। বহুত্ববাদটাই হিন্দু। আর শুভেন্দু অধিকারী যে কথা বলছেন, শমীক ভট্টাচার্য যে কথা বলছেন, তাতে খুব একটা পার্থক্য নয়।

প্রশ্ন: শমীক ফারাক না থাকার কথা বললেও, শুভেন্দু একাধিক বার হিন্দুভোট একত্রিত করার কথা বলেছেন। সংখ্যালঘু মোর্চাও তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন, ‘জো হমারে সাথ, হম উনকে সাথ। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, বন্ধ করো। নো নিড ফর সংখ্যালঘু মোর্চা’। শমীক ভট্টাচার্য এটা মানেন?

শমীক: শুভেন্দু অধিকারী একজন স্বাভাবিক নেতা। ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি করেন। তাঁর মবিলিটি নিয়ে মানুষের কোনও প্রশ্ন নেই। প্রত্যেকে দিনের শেষে তো মানুষ! তাঁর অভিমান আছে, আবেগ আছে। একজন মানুষ যিনি মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়েছেন, যিনি বিরোধী দলনেতা, সংসদীয় রাজীনতিতে মুখ্যমন্ত্রীর পরই যাঁর জায়গা, এ রাজ্যে ২০১১ সালে তথাকথিত পালাবদলের অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিলেন। সংখ্যালঘু এলাকায় ঢুকতে গেলে তাঁর গাড়িতে পাথর পড়ে, সেখান থেকে লোক এনে হিন্দুদের উপর অত্যাচার করা হয়, সেখান থেকে তিনি উত্তেজক ভাষণ দিয়েছেন।

প্রশ্ন: উত্তেজক ভাষণ, সারসত্য নয়?

শমীক: আমার বক্তব্য হচ্ছে, শুভেন্দু যেটা বলছেন…অসমের জনবিন্যাস দেখুন। সেই অর্থে অসমে বেশি অসুবিধায় আছে বিজেপি। অসমে সংখ্যালঘুর সংখ্যা অনেক বেশি পশ্চিমবঙ্গের থেকে। তার পরও অসমে ক্ষমতায় আছে বিজেপি। তাই বলে আমাদের এখানে যদি কেউ মনে করে থাকেন, সংখ্যালঘু ভোটেই তৃণমূল ক্ষমতায় আসবে এবং সংখ্যালঘুদের হাতেই পরিবর্তনের চাবিকাঠি থাকবে, ভুল করছেন। তারা ভোট না দিলেও ক্ষমতায় আসব আমরা। আমরা বলছি, একসঙ্গে থাকতে হবে।

প্রশ্ন: তুমি যদি বল, দু’টোর মধ্যে কোনও সংঘাত নেই, আমি বলব এটা রাজনৈতিক কৌশল। মুখ আর মুখোশের লড়াই। বিরোধীরা বলবে নাটক। বাজপেয়ীর ভূমিকায় শমীক, আডবাণীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। শমীক শিক্ষিত, বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণিকে টানবে, আর শুভেন্দু কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের। এটা কৌশল।

শমীক: কট্টর হিন্দুত্ববাদ বলে কিছু হয় না, হয়নি। এবারে যে নির্বাচন হতে চলেছে, তার রাশ কোনও দলের হাতে থাকবে না। বাঙালি, হিন্দুর অস্তিত্বরক্ষার প্রশ্ন এটা। এটা জাতীয়তাবাদী, শিক্ষিত, মুক্ত মনের মুসলিমদের রক্ষার প্রশ্ন। এবার চতুর্থবার যদি তৃণমূল জয়ী হয়, তাহলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভার যে চেহারা, তা পশ্চিমবঙ্গের চেহারা হবে, যা কারও কাছেই কাঙ্খিত নয়।

প্রশ্ন: অস্তিত্ব রক্ষায় সবাই বিজেপি-কে কেন চাইবেন? কেউ কংগ্রেসকে চাইবেন, কেউ বিজেপি-কে চাইবেন, কেউ বামেদের চাইবেন?

শমীক: মানুষকে অচেতন মনে করার কোনও কারণ নেই। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ২০১৯ সালে একটা বাইনারি বেঁধে দেন। কালীগঞ্জের উপনির্বাচন পর্যন্ত সেটা অটুট রয়েছে। ২০১৬ সালে কংগ্রেস এবং সিপিএম-এর জোটে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যান। তৃণমূলের কাছে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে জোটের দিকে ঝুঁকেছিলেন।

প্রশ্ন: ২০২১ সালের পর ১১টি উপনির্বাচন হয়েছে। কোন উপনির্বাচনে চোখে পড়ার মতো ফল করতে পেরেছে বিজেপি? প্রত্যেকটাতে হেরেছে বিজেপি। তৃণমূল জিতেছে, ভোটের হারও বেড়েছে।

শমীক: এখানে ভোট কী ভাবে হয়, প্রত্যেকের জানা। সিপিএম নির্বাচনের দু’দিন আগে রাতে গ্রামের মানুষকে বোঝাত। তৃণমূলও তাই করছে।

প্রশ্ন: তাহলে তো ২০২৬ সালেও এক হবে। এই ছবি পাল্টাবে কী করে? 

শমীক: ২০২৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূল থাকুক, বুথে এজেন্ট দেওয়ার শক্তি দেখাক। 

প্রশ্ন: কী বলছো? কী হবে তার মধ্যে?

শমীক: তৃণমূলের মধ্যেই ধ্বংসের বীজ তৈরি হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের এক মন্ত্রীই অন্য মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তথ্য সাপ্লাই করছে। 

প্রশ্ন: এটা কি শিন্ডে মডেল? 

শমীক: পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আয়ারাম, গয়ারামের রাজনীতিকে সমর্থন করবেন না।

রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি হওয়ার পর প্রথম ভাষণেই ‘মহাজোটে’র বার্তা দেন শমীক। সিপিএম-কংগ্রেসকে পতাকা তুলে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে একজোট হয়ে তৃণমূলকে হারানোর বার্তা দিয়েছিলেন। আলোচনায় সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের মতো মেরুকৃত হয়ে আছে এমন রাজ্যে পতাকা সরিয়ে রেখে কেন বিজেপি-কে ভোট দেবে? তাঁরা যতটা তৃণমূল বিরোধী, হয়ত ততটাই বিজেপি বিরোধী? পতাকা সরিয়ে রেখে, মতাদর্শ সরিয়ে রেখে সবাই তোমার পাশে দাঁড়াবে, এটা রূপকথার মতো শোনাচ্ছে না কি?

শমীক: ওটা একটা উত্তেজক বক্তৃতা, (আবেগে) ব্যবহার করেছি। প্রত্যেক দলের পতাকার প্রতি আমার সম্মান আছে। বহুত্ববাদের প্রতি সম্মান না থাকলে, অন্তত আর যাই হোক বিজেপি-টা নিষ্ঠার সঙ্গে করা যায় না বলে বিশ্বাস করি আমি। আমার দলের পতাকার প্রতিও শ্রদ্ধা আছে, পথ চলার পথে অন্য পতাকাও তুলে রেখে দিই।

প্রশ্ন: কিন্তু তৃণমূলকে সরাতে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি একসঙ্গে আসতে পারবে?

শমীক: বাম-কংগ্রেস-বিজেপি নয়, তৃণমূলও আসবে। সিপিএম-এর ভোট না পেলে ২০১১ সালে পরিবর্তন হতো না কি? সিপিএম-এর ট্র্যাডিশাল ভোটাররা যদি তৃমণূলকে ভোট না করত, ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবর্তন আনতে পারতেন? সম্ভব ছিল না। তৃণমূলের এখনও যাঁকা ক্ষমতার অমৃতরস পান করেননি, যাঁরা আক্রান্ত, যাঁদের টিকিটগুলো, অ্যাপিব়্যান্ট ছিল অন্য লোক কিনে নিয়েছে, টাকা নিয়েও যাদের ছেলের চাকরি হয়নি, তারা কাকে ভোট দেবে? তৃণমূলকে ভোট দেবে? তৃণমূলের মধ্যেও পরিবর্তন চাওয়ার বিরাট সংখ্যা আছে, জাতীয়বাদী মানুষ আছেন। সব তৃণমূলকে এক পঙক্তিতে দাঁড় করালে চলবে না। তারা বিজেপি-কে ভোট দেবে। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কাঁথি উপনির্বাচনে জিতেছিলেন। সেই গ্রাম থেকে একটি বাস ও দু’টি গাড়ি সিপিএম-এর প্রোগ্রামে গিয়েছিল। ফলাফল বেরোতে দেখা যায়, ওই গ্রামে সিপিএম ভোট পেয়েছে ৩৬টি, বিজেপি পেয়েছে ১৭৩। সেটা কী করে সম্ভব হল? সিপিএম-এর শক্তি তো আমাদের চেয়ে বেশি, তারা ভিজিবল, মানুষ তো মিটিংয়ে গিয়েছেন! মানুষ তৃণমূলকে হারানোর জন্য ভোট দেবেন। ২০১১-র পুনরাবৃত্তি ২০২৬-এ হতে চলেছে। বাংলা বাঁচতে চায়, পরিত্রাণ চায়, মুক্তি চায়।

প্রশ্ন: তাহলে তো আমার বটম লাইন এই যে, শমীক ভট্টাচার্য ভরসা রাখছেন নেগেটিভ ভোটের উপর?

শমীক: নেগেটিভ ভোট তো ভারতের রাজনীতির একটা বাস্তবতা। এ থেকে দূরে সরা যায় না। মানুষ তো বিরুদ্ধে ভোট দেন! তবে কোনও কাজ করলেন না, ভাল কোনও কাজ নেই, শুধুমাত্র অ্যান্টি ইনকামবেন্সির উপর নির্ভর করে তো নির্বাচনে জেতা যায় না! বার বার মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচন হয় না। 

প্রশ্ন: এই মুদ্রার উল্টো পিঠটা বলছে যে, বিজেপি একার শক্তিতে পারছে না বলে সমস্ত দলকে আহ্বান করে তৃণমূলকে সরাতে চাইছে।

শমীক: যত বুথ হবে, এবার তো আরও ২০ হাজার বাড়ছে। সমস্ত বুথে এজেন্ট দিতে পারব, সংখ্যালঘু বুথে এজেন্ট দিতে পারব, এ ধরনের অবাস্তব দাবি তো বিজেপি করেনি! সম্ভব নয়। একটা বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রত্যেকেই কিছু ভোট পাবে। কিন্তু কী দেখা যাচ্ছে! নো বোট টু বিজেপি-তে যাঁরা অংশ নিচ্ছেন, আমরা বলছি সামনে এসে করুন। সিপিএম-কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ নিয়ে মহম্মদ সেলিম পদযাত্রা করুন। আমার বন্ধু শুভঙ্কর আছেন, শুভঙ্করও বেরিয়ে পড়ুন। তিনি তো বলেই দিয়েছেন, তৃণমূলকে ছাড়া ভুল ছিল। অধীররঞ্জন চৌধুরীকে সরিয়ে কংগ্রেস তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে যে আমরা আছি। 

প্রশ্ন: আমি যদি দলের জন্য ভোট চাই, তাহলে বুঝে নিতে হবে আমি বিজেপি-র ভোট কাটছি এবং তৃণমূলকে ক্ষমতায় থাকতে সুবিধা করে দিচ্ছি? প্রত্যেকটা দলের নিজস্ব অ্যাসপিরেশন থাকা দরকার, আছে এবং থাকা অপরাধ নয়? 

শমীক: আমরাও তো ২ থেকে ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে, পরাজয় নিশ্চিত জেনে, জামানত বাজেয়াপ্ত হবে জেনেও দল করেছি। আর একটা দিক মনে রাখতে হবে, জরুরি অবস্থার সময় বহু রাজনৈতিক দল নিজেদের পতাকা ভুলে, আমাদের দলও, ৯৯ জন সাংসদ জনতা পার্টির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। আমরা কিন্তু বিলীন হয়ে গিয়েছিলাম দেশের প্রয়োজনে!

প্রশ্ন: কিন্তু একটা দল চারটে দল মিলে তৈরি করেছিল! এখানে তো শমীক ভট্টাচার্যের ডাক একমাত্র ঝান্ডা?

শমীক: আমি বলছি, ভোটার কারও পুরাতন ভৃত্য নয়। ভোটারের নিজস্ব রাজনৈতিক বোধ আছে, দিনের শেষে সেই বোধ থেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। আমাদের দাবি তাদের কাছে, ফেন্স সিটারদের কাছে, সিলেক্টিভ প্রতিবাদীদের কাছে, যাঁরা বিভিন্ন সময় বিজেপি-র সমালোচনা করেন, বিজেপি-কে ঘৃণা করেন, তাঁদেরও বলছি। বাংলাদেশে ইন্দিরা গাঁধী যে দেশের জন্ম দিয়েছেন, তাঁর নামাঙ্কিত লাইব্রেরিতে যে আগুন লাগাল, তাতে আবুল বাশারের ‘ফুল বউ’ও পুড়ে গিয়েছে। যিনি কবি, ত্রিশূলে কন্ডোম লাগিয়েছিলেন, তাঁর কবিতার বইও পুড়ে গিয়েছে। সুতরাং বহুত্ববাদকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, মত প্রকাশের অধিকার যদি প্রতিষ্ঠা হয়, নিজ নিজ দলের ঝান্ডা নিয়ে যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে যে পরিস্থিতি এখন তৈরি হয়েছে, তা ‘৪৬-এর থেকে আলাদা কিছু নয়। এই ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, ইসলামি ফ্যাসিবাদ মানব সভ্য়তার ক্যান্সার। সেই সমাজ থেকে প্রতিবাদ বেরিয়ে আসা উচিত। তাঁরা কী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করছেন? একজন সংখ্যালঘু নেতার নাম বলুন, যাঁরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, যাঁদের ছেলেমেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। ছেলেমেয়ে প্রত্যেকের দু’টো, খুব বেশি হলে তিন। আর যাঁদের আবেগকে কাজে লাগাচ্ছে, তাঁদের পরিবারের দিকে তাকান। আমরা তো বলছি, মুসলিমরা আপনারা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। গুজরাতের মুসলিমরা কী অবস্থায় আছেন? 

প্রশ্ন: এ তো শমীক ভট্টাচার্য এবং নৌশাদ সিদ্দিকি হুবহু এক কথা বলছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন মানে মুসলমান মুসলমানকে মারবে। আপনারা নেতাদের কথায় যাবেন না। নিজেরা শিক্ষিত হোন এবং পরের প্রজন্মকে শিক্ষিত করুন!

শমীক: আমাদের যে লড়াই, তা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়, তাঁদের দারিদ্র, অশিক্ষার বিরুদ্ধে। আমরা চাই, তাদের সমাজের সমাজ থেকে বেশি মানুষ সরকারি চাকরি করুন। সংরক্ষণের মধ্যে থেকে নয়, সরকারি চাকরি করুন। সার্বিক আর্থ-সামাজিক উত্তরণ ঘটুক, আরও বেশি ঋণ পান, স্টার্টআপ খুলুন, আরও শিক্ষিত হোন, মেনস্ট্রিমে আসুন। সৈয়দ মুস্তাফা আলি, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, কাজি নজরুল ইসলামের পঙক্তিতে দাঁড়ান। কিন্তু আফজল গুরুর রাস্তায় কেন দাঁড়াচ্ছেন?

প্রশ্ন: কিন্তু যখন শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আমরা মুসলিম ভোটেজিতে আসিনি, বা সরাসরি সংখ্য়ালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার কথা বলেন, এই বক্তব্যের সঙ্গে, তা তো মিলছে না? বরং ২০০৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তালকোটরা স্টেডিয়ান থেকে অটল বিহারি বাজপেয়ী সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে যা বলেছিলেন, ইতিহাস হয়ে আছে যে, ‘আমাদের মধ্যে যদি পাঁচিলটা নাও ভাঙা যায়, একটা জানলা তো অন্তত খুলে রাখা যায়!’ ২১ বছর পর শমীক ভট্টাচার্য মুসলিম ছেলেদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কথা বলছে, তলোয়ার কেড়ে নিয়ে কলম তুলে দেওয়ার কথা বলছে। তোমার বক্তৃতায় অনেক দিন পর অটল বিহারি বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, তপন শিকদার, জুলুবাবুদের নাম শুনলাম। এই পুরনো নেতানেত্রীদের যাঁরা বসে গিয়েছেন, তাঁদের শমীক ভট্টাচার্য ‘২৬-এরআগে ময়দানে ফেরাতে পারবে? রাস্তায় নামাতে পারবে?

শমীক: পরাজয় নিশ্চিত জেনেও, জামানত বাজেয়াপ্ত জেনেও যাঁরা দলের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকে ‘২৬-এর নির্বাচনে সামনের সারিতে নতুনদের সঙ্গে থাকবেন। নতুন-পুরনো বলে কিছু নেই। যার হাতে বিজেপি-র পতাকা, সে-ই বিজেপি, যে অতি সক্রিয়, সে এলাকায় নেতৃত্ব দেবে। নতুন-পুরনো কিছু নেই। বিতর্কের কোনও জায়গা নেই।

প্রশ্ন: আছে তো বটেই, তুমি বলছো থাকবে না?

শমীক: নতুন না এলে কী করে বাড়বে? মানুষ কি অর্ডার দিয়ে তৈরি করানো যায়? পুরনোদের বোধা উচিত যে, তাঁরাই যদি থেকে যান, আমার সময় থেকে যাঁরা রাজনীতি করছেন, আমরা কি পশ্চিমবঙ্গের একটি বিধানসভা জিতিয়ে দিতে পারব সংখ্যা দিয়ে? নতুনদেরও বুঝতে হবে, পুরনোরা ছিলেন বলেই আজ রাজননৈতিক সমীকরণ এখানে এসেছে। নতুনদেরও প্রয়োজন রয়েছে, পুরনোরও রয়েছে। আমাদের দলের গণতন্ত্রে প্রতি তিন বছর অন্তর নতুন মানুষদের নিয়ে আসা হয়, এজ গ্রুপ রয়েছে। 

প্রশ্ন: গঠনতন্ত্র বুঝলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে বিজেপি-র একটা বড় সমস্যা হচ্ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! এত গোষ্ঠী এবং এত দ্বন্দ্ব, শোনা যায়, সায়েন্স সিটিতে সম্বর্ধনার আগে শমীক ভট্টাচার্য নাকি ব্যক্তিগত ভাবে দিলীপ ঘোষকে ফোন করেছিলেন! কিন্তু দিলীপ ঘোষ পরের দিন প্রকাশ্যে বসেছেন, অফিসিয়াল কোনও আমন্ত্রণ পাঠানো হয়নি তাঁকে! শমীক ভট্টাচার্যের হাতে তো ফেভিকল বা ডেনড্রাইট নেই যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমস্ত ফাঁকফোকর সব সে জুড়ে দিতে পারবে?

শমীক: এখানে একটা ভুল তথ্য রয়েছে। সায়েন্স সিটির মঞ্চে আমিও আমন্ত্রিত ছিলাম। আমার জানা ছিল না, মঞ্চ কেমন হয়েছে। দুপুর ১২টায় জেপি নাড্ডা বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তুমি গিয়ে মনোনয়ন দাও। এর পর রবিশঙ্কর প্রসাদ যখন আসেন, তাঁর সঙ্গে আমার ৩৫ বছরের বেশি সময় সম্পর্ক, আমি তাঁকে রিসিভ করতে যাই। দলই যেতে বলেছিল। কারা আমন্ত্রিত, আমার জানা ছিল না। মনোনয়ন যখন দিতে যাচ্ছি বাড়ি থেকে বেরিয়ে, সেই সময় আমাদের যতজন জীবিত সভাপতি আছেন, তথাগত রায়, অসীম ঘোষ, রাহুল সিনদা এবং দিলীপ ঘোষ, চারজনকেই ফোন করি আমরা। দেখলাম, রাহুলদা, অসীমদা ওখানেই বসেছিলেন। আমার সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত সমস্যা কারও নেই। আমার সঙ্গে সকলের সম্পর্ক ভাল। তৃণমূলের অনেক নেতা-মন্ত্রী আমাকে ফোন করেছেন, সিপিএম-এর অনেকে ফোন করেছেন। সভাপতি হওয়া আর কী ব্যাপার! 

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত সম্পর্ক তো ভালই। ২০১৬ সালে রটে গেল শমীক ভট্টাচার্য তৃণমূলে যোগ দিচ্ছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা সকলের সঙ্গে সম্পর্ক এত ভাল বলেই হয়ত! এতে বিজেপি-তে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়নি?

শমীক: না হয়নি, কারণ বিজেপি কর্মী, যাঁরা বিজেপি-কে চেনেন, তাঁরা জানেন শমীক ভট্টাচার্য দল বদল করবেন না। কিছু মানুষ আলোচনা করবেনই।পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা, তাঁর পরিবার, তাঁর অন্য ভাইয়েরা, তাঁর পরিবারের বড় অংশ জনসঙ্ঘের সময় থেকে বিজেপি করেন। পার্থর মাসি সবিতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ‘জনবার্তা’ পত্রিকা বিক্রি করতেন। সিপিএম তাঁর মাথায় গরম ও নোংরা জল ঢেলে দিয়েছিল। তার পরও সরেননি তিনি। আমার সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক সম্পর্ক আছে। এটা লুকনোর কী? মুখ্যমন্ত্রী আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: নতুন পদ পাওয়ার পর, মুখ্যমন্ত্রীর ফোন এসেছিল?

শমীক: ফোন এসেছে অনেক, তবে মুখ্যমন্ত্রীর ফোন আসেনি। যেগুলো এসেছে নাম বলব না।

প্রশ্ন: কতটা কঠিন চ্যালেঞ্জ? হাতে সময় কম। তুমি সবাই মিলে একসঙ্গে লড়াইয়ের আবেদন করেছো, তা কংগ্রেস-বাম পর মুহূর্তে নস্যাৎ করে দিয়েছে। অর্থাৎ বিজেপি-কে বিরোধী ভোট ভাগাভাগির বাস্তবতা মেনে কংগ্রেস এবং বামেদের সঙ্গে লড়ে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ দিতে হবে। সম্ভব ১০ মাসের মধ্যে?

শমীক: আমরা তৃণমূলকে হারাব। তৃণমূল হারতে চলেছে। তৃণমূল হারবে। এবং আমরা নবান্ন থেকে নয়, ২০২৬ সালের মুখ্যমন্ত্রী রাইটার্স থেকে সরকার পরিচালনা করবেন।



Source link