দীপক ঘোষ, রাজীব চৌধুরী, বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা : RSS সক্রিয় হয়ে না নামাতেই কি ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার ম্য়াজিক ফিগারের নীচে নেমে থমকে যেতে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদিকে? আবার RSS তেড়েফুঁড়ে নামাতেই কি সম্প্রতি মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা নির্বাচনে কার্যত অসম্ভবকে সম্ভব করে, ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি? পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্য়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পদ্ম ফোটাতেও কি নিচুতলায় RSS-নেটওয়ার্ক-কে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব? এই প্রশ্নগুলোই আরও একবার উস্কে দিল, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথমবার নাগপুরে আরএসএস-এর সদর দফতরে মোদির পা-রাখা। বাংলায় ভোটের অনেক আগে থেকেই আড়াল থেকে বিজেপির জমি তৈরি করে দিচ্ছে আরএসএস? একদিকে যখন ১২ বছর পর সঙ্ঘের সদর দফতরে পা রাখলেন নরেন্দ্র মোদি, তখন নাগপুর থেকে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার দূরে বাংলায় এই নিয়ে চর্চা কম হচ্ছে না। কারণ বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন।
বিধানসভার ভোটের বহু আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বহু দলের তর্জন – গর্জন। স্বাভাবিক ভাবেই পুরোদমে গ্রাউন্ডওয়ার্ক যে শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি, তা নিয়ে সংশয় নেই। তাহলে কি বঙ্গবিজেপির জন্য জমি দখলের কাজ শুরু করে দিয়েছে RSS? প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ নিজেরা ভোটে লড়ে না ঠিকই। কিন্তু নির্বাচনে বিজেপিকে ভাল ফল করতে সাহায্য করে আরএসএস-ই। এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাহলে কি বাংলাতেও ভোটের বছর খানেক আগে থেকে বিজেপির জন্য় জমি তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে? রাজ্য় বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতেই কি ঝাঁপাচ্ছে RSS? রাজ্যে দ্রুত বেড়ে ওঠা আরএসএস-এর শাখার সংখ্যা দেখে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ রাজ্যের ৩টি প্রান্ত – উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য মিলিয়ে রাজ্যে মোট ৩ হাজার ৫০০ শাখা তৈরি হয়েছে RSS-র। গত ১৩ বছরে অর্থাৎ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের আমলে RSS-এর শাখা বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় পৌনে ৩ হাজার। শুধুমাত্র গত ১ বছরেই এ রাজ্য়ে সঙ্ঘের শাখা বেড়েছে ৫৮৩টি।
সম্প্রতি বাংলায় এসে ১১ দিন থেকে গেছেন সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। তারপরই হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়, দু-দিন ব্যাপী বিশেষ সমন্বয় বৈঠক করে RSS. যেখানে সুকান্ত মজুমদার থেকে শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্য়ায়, অগ্নিমিত্রা পাল – রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্তরের প্রায় সমস্ত নেতানেত্রী হাজির ছিলেন। কিন্তু, বিজেপির অন্দরেই একাংশ প্রশ্ন তুলছে, জমি RSS তৈরি করে দিলেন, সেই জমিতে কি ফসল ফলাতে পারবে বিজেপি?
বর্তমান সরকারের আমলে যথেষ্ট সংখ্য়ায় সঙ্ঘের নতুন স্কুল অনুমোদন পেয়েছে। এই মুহূর্তে এরাজ্যে ৩৩৬টি স্কুল পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা RSS। যেখানে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্য়া ৮৮ হাজার। প্রসঙ্গত, রাজ্যে ২ ভাগে এই স্কুলগুলি পরিচালনা করে RSS. দক্ষিণবঙ্গে পরিচালনকারী সংস্থার নাম বিবেকানন্দ বিদ্য়া পরিষদ। উত্তরবঙ্গে এর নাম বিদ্য়াভারতী উত্তরবঙ্গ।
২০০৩ সালে দিল্লিতে RSS-এর মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য়’র তৎকালীন সম্পাদক তরুণ বিজয়ের ‘কমিউনিস্ট টেরররিজম’ নামে একটি বইয়ের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির তৎকালীন শরিক মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। সেই অনুষ্ঠানে RSS-এর একঝাঁক শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছিলেন ‘আপনারা (RSS) সত্য়িকারের দেশপ্রেমী। আমি জানি আপনারা (RSS) দেশের প্রত্য়ন্ত কোণাকেও যত্ন করেন’। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজেপির তৎকালীন সাংসদ বলবীর পুঞ্জ বলেছিলেন ‘আমাদের প্রিয় বোন মমতা সাক্ষাৎ মা দুর্গা’। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে।
আর এরাজ্যে সঙ্ঘের বৃদ্ধি নিয়ে RSS-এর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পুরনো সম্পর্ককে হাতিয়ার করে আক্রমণে নেমেছে সিপিএম-কংগ্রেস। এখন রাজ্যে আরএসএস-এর সক্রিয়তা স্পষ্ট। কিন্তু, এর প্রভাব বিজেপি ভোটবাক্সে পেল কিনা সেটাই এখন দেখার।
আরও দেখুন