‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় টাকা চাননি, আমরা দিয়েছি, মনের পরিবর্তন জরুরি’, প্রসঙ্গ RG কর

Estimated read time 1 min read
0 0
Listen to this article
Read Time:9 Minute, 3 Second


কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সব মহলে। এই নারকীয় ঘটনার সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা অনিয়ম, অব্যবস্থা এবং দুর্নীতিচক্রের পর্দাফাঁস হয়ে চলেছে নিত্যদিন। নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবিতে, অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে তই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই রাস্তায় নেমেছেন সমাজের সব শ্রেণির মানুষ। রাত জেগে নিজেদের অধিকারের দাবি জানিয়েছেন সকলে। কিন্তু এতেই দুর্নীতি, ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি চিরকালের জন্য নির্মূল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন না বিশিষ্টজনেরা। বরং সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য সবার আগে মনের পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা। (RG Kar Protests)

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত গণ-কনভেনশনের মঞ্চ থেকে এমনই বার্তা দিলেন বিশিষ্টজনেরা, যাঁদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার এবং অভিজিৎ চৌধুরীও। তাঁরা জানান, পরিবর্তন মানে শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়। সার্বিক অর্থে পরিবর্তন তখনই সম্ভব, যখন ঘরে বসে নিজেদের মনের পরিবর্তন ঘটাতে পারবেন প্রত্য়েকে। (Kolkata News)

গণ-কনভেনশনের মঞ্চ থেকে দীপ্তেন্দ্র বলেন, “যতটুকু পড়েছি, যতটুকু উপলব্ধি হয়েছে জীবনে, চার্লস ডিকেন্সের লেখা একটি লাইনের কথe মনে পড়ে, ইট ওয়াজ দ্য বেস্ট অফ টাইমস, ইট ওয়াজ দ্য ওয়র্স্ট অফ টাইমস। আমরা বেস্ট অফ টাইমস দেখার চেষ্টা করছি। ধরে নিয়েছি, ওয়র্স্ট অফ টাইমসে রয়েছি। তাহলে এই ওয়র্স্ট থেকে বেস্ট অফ টাইমসের যাত্রাটা কী হবে! প্রথম ধাপ হল, ক্ষোভ, সেই থেকে বিদ্রোহ হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপ হল, মানুষের হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাওয়া।”

আর জি করের ঘটনায় যে আন্দোলনে গণজোয়ার দেখা গিয়েছে, তাতে শহর বনাম গ্রামের সীমারেখার কথা স্মরণ করিয়ে দেন দীপ্তেন্দ্র। তিনি বলেন, “তিলোত্তমার মৃত্যুর সঙ্গে গ্রামের প্রান্তিক মানুষের হতাশা কি এই মুহূর্তে মিলছে? মিললে কোথায় মিলছে, কতটা মিলছে, বুঝতে হবে। পুরোটা মিলছে বলাটা সুপারফিশিয়াল হবে। তাই আন্দোলনের সব জায়গাতে থেকেও কিছু জায়গায় মনে হয়েছে, এই আন্দোলন ডাক্তারদের আন্দোলন না হয়ে সামাজিক আন্দোলন হওয়া উচিত ছিল। সেটা হয়নি। পারিনি আমরা। আমাদের মূল দাবি, তিলোত্তমার বিচার চাই, তার পর তিন জনের অপসারণ এবং শৌচালয়। এর বাইরেও সামাজিক সমস্যার কথা থাকা উচিত ছিল। আমরা সেগুলিকে আনতে পারিনি।”

সামাজিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বিপ্লবের চেহারা নেয় এবং সেখান থেকে পরিবর্তন আসে। কিন্তু এই পরিবর্তন যে এক এক জনের কাছে এক এক রকম, তাও জানান দীপ্তেন্দ্র। তাঁর কথায়, “কেউ রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখছেন, আবার অরাজনৈতিকরাও পরিবর্তন দেখছেন। এই পরিবর্তন কীভাবে আনা সম্ভব। একজনের সঙ্গে আলোচনায় আমি বলেছিলাম, হঠাৎই একদিন নবজাগরণ ঘটবে, সব পাল্টে যাবে। তিনি বলেছিলেন, সবকিছু ধ্বংস না হয়ে গেলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর পর এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হল। তিনি জানালেন, যে সমাজের ৯০-৯৫ শতাংশ দুর্নীতির সুবিধাভোগী, সই সমাজে পরিবর্তন আনা বিরাট কঠিন কাজ।”

বর্তমান সমাজের প্রত্যেকেই সুবিধাভোগী বলে বলে মন্তব্য করেন দীপ্তেন্দ্র। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষা দুর্নীতির প্রসঙ্গ টানেন তিনি। বলেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায় টাকা চাননি। আমরা গিয়ে দিয়ে এসেছি। যে লবির কথা হচ্ছে এখন, তার ঘরে দিয়ে আমার প্রশ্নপত্র দিয়ে আসিনি। আমাদের ছাত্ররাই বলেছে, পাশ করিয়ে দিলে যা দেওয়ার দেবে। সুতরাং পরিবর্তন যদি আনতে হয়, তাহলে ঘরে বসে থাকা প্রত্যেকের মনের পরিবর্তনের প্রয়োজন। আজ থেকে দুর্নীতি নয় বলে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করতে হবে। রাতারাতি হয়ত হবে না। কিন্তু যে মুহূর্তে এটা পারব আমরা, বৃহত্তর দুর্নীতির কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে। এই ধরনের আন্দোলন থেকেই তার সূচনা হয়। আমার বিশ্বাস, মোড়ে মোড়ে সামাজিক তর্ক-বিতর্ক থেকে এটা হতে পারে। বাংলায় নবজাগরণ ঘরে বসে হয়নি। কাটাছেঁড়া থেকেই হয়।”

চিকিৎসক অভিজিতের কথায়, “প্রাতিষ্ঠানিক নিগ্রহ যখন চলতেই থাকে সমাজে, মাঝে মধ্যে কোথাও থেকে স্ফূলিঙ্গ বেরিয়ে আসে। আমার কেউ কেউ তা হাতে নিয়ে ছুটতে শুরু করি। এখন তা-ই হচ্ছে। কিন্তু আগামীর জন্য কী করতে পারি, তা ভাবতে হবে। উত্তরবঙ্গ লবির কথা হচ্ছে এখন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এখন শিহরিত। তাঁরাও কিন্তু জানতেন, দমবন্ধ পরিস্থিতি, চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। কয়েক জন দুর্বৃত্ত ঠিক করে দেবে, কে কোথায় কাজ করবেন, কীভাবে কাজ করবেন, পরীক্ষায় কে কত নম্বর পাবেন, কাকে বেশি নম্বর দেওয়া হবে, তা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বলে দেবেন তাঁরাই। কোন ক্ষমতার বলে এই ধরনের কাজ করতে পারছে ওরা? আমার যদি তা না করি, তাহলে এই জমায়েত এখানে থেমে যাবে হবে মনে হয় না। কেউ কেউ আন্দোলনকে ডিস্কোনাচ বলছেন, সেটা ওঁদের সংস্কৃতি, যআ আমাদের বুকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।ল এতে অবাক হওয়ার কিছু নেইয আজ এই লড়াইকে যদি সূচনা হিসেবে ধরি, তাহলে সামনের দিনগুলির কথা ভাবতে হবে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যক্ষেত্র ন., শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিচক্রের আস্ফালন দেখেছি। যে সূত্রে এই দুর্নীতিচক্র গাঁথা, তা নির্মূল করতে জেগে উঠতে হবে সকলকে। মানববন্ধনে এই মনের সুরই জেগে উঠেছে। অনেকে ভাবছেন, শহরে আন্দোলন হচ্ছে। এর আঁচ গ্রামে পৌঁঁছতে কিন্তু দেরি হবে না।”

অভিজিতের কথায়, “বাঁ হাতে কিছু ছুঁড়ে দিয়ে যদি গ্রামকে কিনে নিয়েছেন ভাবেন কেউ, তাহলে নিজের ভাষায় গ্রামও একদিন বলবে, ‘যদি ভাবো কিনছো আমায়, ভুল ভেবেছো’। শুধুমাত্র যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে নয়, সামগ্রিক ভাবে সব ধরনের নিগ্রহের বিরুদ্ঘধে জেগে উঠতে হবে। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চলবে। ছোট্ট ঘচনা বলে আর জি করের এই ঘটনাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে শাসকের নির্বুদ্ধিতার জেরেই। জয়ের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে বার বার এভাবে পার পাওয়া যাবে ভেবেছিল। তাই টাকা দেওয়ার চেষ্টা হয়। সেই নিয়ে থুতু গিলতে হয়েছে। আর জি করকে আবর্জনার স্তূপে পরিণত করা হয়েছিল, আরও আর জি কর আছে। আজ এখানে দাঁড়িয়ে তাই আগামীর অঙ্কগুলিকে পরিষ্কার করে নিতে পারলে বিচার হবে।”

আরও দেখুন



Source link

About Post Author

JagoronBarta

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
JagoronBarta http://www.jagoronbarta.com

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

You May Also Like

More From Author

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *