কলকাতা: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (RG Kar News) মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। সমাজমাধ্যম (Social Media) ভরেছে প্রতিবাদী ভাষায়। এই আবহে ভুয়ো খবরও যে ভাইরাল হচ্ছে না, তা হলফ করে বলা যায় না। তাই সমাজমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলি আমরা সকলেই। কিন্তু তার মধ্যেও কিছু ভাইরাল (Viral Video) জিনিস দেখে মন ভাল হয়। মনে হয় যে আমাদের সমাজে সত্যিই সবকিছু এখনও বোধ হয় পচে গলে যায়নি। যেমন প্রতিবাদে সামিল হওয়া তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের (Tarasundari Balika Vidyabhaban) ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতির (Monalisa Maity) কিছু বক্তব্য। যা হঠাৎই ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোনও রকম প্রচার মাধ্যম ছাড়া শুধুমাত্র সমাজ মাধ্যমেই ভাইরাল হয়ে যায়। হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর বলা কথাগুলি, যা অন্তর থেকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে প্রত্যেক প্রতিবাদী মনকে। আরজি করের ঘটনার এক মাস পর, ৯ সেপ্টেম্বর, আজ এবিপি আনন্দের ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন’ অনুষ্ঠানের স্টুডিওয় উপস্থিত হন প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতি। মুখ্যমন্ত্রীর ‘উৎসবে ফিরুন’ প্রসঙ্গে কী বললেন তিনি?
‘আজ যে সমাজ শোধনের উৎসব চলছে…’, এবিপি আনন্দের স্টুডিওয় উপস্থিত তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা
দিকে দিকে যখন চলছে প্রতিবাদ, সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠছে আন্দোলনের ঝড়, তার মাঝে হঠাৎই ভাইরাল শান্ত অথচ দৃপ্ত কণ্ঠে তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতির বলা কথাগুলো। ‘দেশ যখন বিপন্ন হয় তখন বয়সের দোহাই দিয়ে আটকে রাখা যায় না। আটকে রাখা উচিতও নয়। পথে যদি নামার সময় আসে আমাদের নামতে হবে। নিজেদের অধিকারের জন্য অন্য যে কোনও ভিক্টিমের পাশে দাঁড়াও, নয়তো তুমি তোমার অধিকার কোনওদিনও খুঁজে পাবে না…’, প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ছোট ছাত্রীদের এভাবেই শিরদাঁড়া সোজা রাখার পাঠ দিচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ‘উৎসবে ফেরা’ প্রসঙ্গে মোনালিসা মাইতি বলেন, ‘আমরা সবাই ভীষণ কষ্টের মধ্যেই ছিলাম। সেই কারণেই আমাদের পথে পা ফেলা। এখনও পর্যন্ত এর মধ্যে অন্যায় কিছু দেখি না এবং আগামী দিনেও যদি এরকম বেরোতে হয়, আমরা বেরবো। এই যে উৎসবের প্রসঙ্গ উঠছে, আমি মনে করি আমরা উৎসবের মধ্যেই রয়েছি। আজ যে সমাজ শোধনের উৎসব চলছে, আমি মনে করি, দিদিমণি হিসেবে এবং একজন মা ও মানুষ হিসেবে, এই উৎসবে আমাদের প্রত্যেকদিন স্নান করা উচিত। মেতে ওঠা উচিত। তাই আমি এই কথাটাকে অন্যভাবে নিচ্ছি না।’
আরও পড়ুন: RG Kar News: ‘আমার ঘরেও মেয়ে দুর্গাপুজো করত, সেই প্রদীপ আর কখনও জ্বলবে না’, মুখ্যমন্ত্রীর ‘উৎসবে ফেরা’ প্রসঙ্গে মন্তব্য নির্যাতিতার মায়ের
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই গণআন্দোলনের স্পন্দনটা, রাজনীতির লোকজনেরা নিতে পারেননি বা বুঝতে পারেননি। তাই তাঁরা আত্মঘাতী কথা বলছেন যা একইসঙ্গে জনবিরোধী। আমি এটার তীব্র নিন্দা করি, যদিও আমি রাজনীতির লোক নই। আমি একেবারে সাধারণ একজন মানুষ, যার কাজই হল ছোট ছোট ঘরের মধ্যে বাচ্চাদের গড়ে তোলা। সেখান থেকে আমি আরও একটা কথা বলতে চাই, অসামান্য যাঁরা, তাঁরা যদি সামান্যের কাছে নেমে আসেন, তাতে তাঁদের গরিমা কখনও কালিমালিপ্ত হয় না, তাঁরা বড় হন। তাঁদের উচ্চতা আরও বাড়ে। এক্ষেত্রে, যাঁরা শাসক হয়ে রয়েছেন, আমরা ভেবেছিলাম তাঁরা নেমে আসবেন। কিন্তু ‘রক্তকরবী’র রাজার মতো তাঁরা একাই থাকতে ভালবাসেন। পর্বতের শৃঙ্গের মতো উচ্চতায় তাঁরা আনন্দ পান, কিন্তু নিঃসঙ্গতাকে তাঁরা অনুভব করতে পারেন না। আমার মনে হয় যাঁদের কাছে আমরা আমাদেক কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম তাঁরা এই মুহূর্তে সেই জায়গাটাই খুব আনন্দের সঙ্গে হয়তো অনুভব করছেন।’
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও দেখুন