‘ওই বাবা-মায়ের কথা ভেবে বুকটা ফেটে যাচ্ছে’, লাইভে এসে অরিজিৎ বললেন, ‘আর কবে?’

নয়াদিল্লি: অরিজিৎ সিংহ (Arijit Singh)। দেশের প্রথম সারির সঙ্গীতশিল্পী। তিনি বাংলার জিয়াগঞ্জের ছেলে। বিশেষ করে বাঙালিরা তাঁকে খুবই নিজের ভাবেন। তাঁর জীবনযাত্রায় মানুষ আল্পুত। তাঁর কণ্ঠে তো দেশবাসী নিমজ্জিত। কিন্তু যে আরজি কর কাণ্ড (RG Kar News) নিয়ে দেশ, রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, সেই আবহে তাঁর বক্তব্য না দেওয়া, বা পথে না নামা নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একেবারেই সক্রিয় নন অরিজিৎ, তা সত্ত্বেও এবার নিজের বক্তব্য রাখতে লাইভে এলেন গায়ক। নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করলেন, শোনালেন নির্যাতিতার বিচার চেয়ে তৈরি গান, ‘আর কবে’ (Ar Kobe?)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এলেন অরিজিৎ সিংহ, বললেন, ‘আর কবে?’
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি সক্রিয় নন। অরিজিৎ সিংহের নামে যে সমস্ত হ্যান্ডল আছে, সবেতেই কেবল তাঁর কাজ সংক্রান্ত পোস্ট। কোনও ব্যক্তিগত আপডেট তিনি কখনওই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন না। তবে ট্যুইটারে একটি নন-ভেরিফায়েড হ্যান্ডল আছে যেখানে তিনি আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। এবার লাইভে এসে নানা কথা বললেন। অসহায়তার কথা তুলে বললেন, ‘প্রশ্ন অনেক। যে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে তাতে কেউই সন্তুষ্ট নয়। স্বাভাবিক। সবাই দেখতে পাচ্ছে। সবার বুদ্ধি আছে। আমি কোথায় কী নামব না নামব নিয়ে তাই নিয়ে রাজনীতি করার কোনও মানে হয় না। এটা খুবই তুচ্ছ বিষয়। যারা বলছে বলুক। যেন তেন প্রকারে একটা এনগেজমেন্ট নিয়ে দরকার সকলের, সেটা যদি বিতর্ক নিয়েই হয় তাহলেও অসুবিধা নেই।’ তিনি বলে চলেন, ‘আমার শুধু ভয় হচ্ছে যে আমরা হয়তো আবারও কোনও উত্তরই পাব না। কিন্তু তাও খুব আশা করছি, চোখ রেখে আছি খবরে। এই বিষয়টা ভাবাচ্ছে। ভয় ধরাচ্ছে। নানারকম কাজের মধ্যেও ঘুরে ফিরে এই ভাবনাই আসছে।’
কিছুদিন আগে তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে লিখেছিলেন কনসার্ট বাতিলের কথা। এদিনের লাইভেও তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘গলা আগের থেকে বেটার। গোটা গান এখনও গাইতে পারছি না। তবে অন্য কাজ হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে গেলেই তো হল না। নেমে গণ্ডগোল না হলেই হল। হিতে বিপরীত না হয়ে যায়। কেউ যদি চায় সুযোগ নেবে, তাহলে নিতেই পারে। কারও কথায় রেগে যেও না। সকলেই রাগ বা ক্ষোভ থেকেই বলছে।’ তাঁর পথে নেমে আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন অনেক ভেবে কাজ করতে হয়। ১০-১৫ বছর আগে হলে এত ভাবতে হত না। কিন্তু তোমরা যেভাবে রোজ রাস্তায় নামতে পারো, আমি তো পারি না। তোমরা তো স্বাধীন। আমার সেই স্বাধীনতা নেই। বেরোতে হয় কিন্তু তোমাদের মতো বিচরণ করতে পারি না। করতে দেওয়া হয় না বলা যায়। আমি রাস্তায় নামলে সেলফি তোলার ভিড় বেশি হবে। কনসার্টেও সেরকমই দেখেছি।’
এদিন সামনে রাখা ডিভাইস যেটা থেকে লাইভ করছেন তা দেখিয়ে বলেন, ‘এই ডিভাইসটা আমার কাছে গেমের মতো। কোনওদিন আমি এটাকে এত সিরিয়াসলি নিইনি। অনেকটা কাজের পর ফাঁকা সময় পেলে ব্যবহার করি বিনোদনের জন্য। এখন এটাই আমার একমাত্র রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি কোনওদিনই অভিব্যক্তিপূর্ণ নই, এই প্রথমবার এক্সপ্রেস করতে বাধ্য হচ্ছি কারণ একটু ভয় পেয়ে গিয়েছি। ভিতর থেকে কেঁপে গিয়েছি। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা দেখে কেঁপেছি, কিন্তু কোনও বিষয়ে পুরো না জেনে কিছু বলতে চাই না।’ তিনি বলে চলেন, ‘কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বা সরকারের বিরুদ্ধে নয় এই প্রতিবাদ। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ, এটা শুনেছি। আমাদের প্রশ্নের উত্তর কেউ দিক বা না দিক, আমরা যে আওয়াজটা তোলা শুরু করেছি সেটা থাকুক। বিশ্বাস ভেঙে গেলে মানুষ এভাবে রিঅ্যাক্ট করে, সেটা বুঝতে হবে সকলকে। খুব অসহায় অবস্থা। এখন একজন নেতাজি এলে সত্যিই ভাল হত বা একজন স্বামী বিবেকানন্দ। যিনি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আমি আশাবাদী। শুধু ওই বাবা-মায়ের কথা ভেবে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এরকম কত বাবা-মা আছেন। কত ঘটনা এরকম।’
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি গানও বেঁধেছেন। ভাঙা গলাতেই শোনালেন, ‘আর কবে, আর কবে, আর কবে… চিত্ত স্বাধীন হবে?’ সবশেষে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘সাবধানে থেকো। আমাদের সবকিছু মাথা ঠান্ডা করে করতে হবে। একদিন দুদিনের বিষয় তো নয়। ভুলে গেলে চলবে না এটা। দেবীপক্ষে দেবীর বিচার চাই।’ নিজের নন-ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডলে এই গান পোস্ট করেছেন অরিজিৎ।
আরও পড়ুন: RG Kar News: ‘যাঁদের কোনওদিন মেরুদণ্ড ছিল না, তাঁদের মেরুদণ্ড অবশেষে দেখা যাচ্ছে’, মন্তব্য মীরের
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও দেখুন