NOW READING:
‘তাড়াতাড়ি বডি তুলে মর্গে পাঠাও, বলেছিলেন সন্দীপ ঘোষ’, RG কর কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য
January 23, 2025

‘তাড়াতাড়ি বডি তুলে মর্গে পাঠাও, বলেছিলেন সন্দীপ ঘোষ’, RG কর কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য

‘তাড়াতাড়ি বডি তুলে মর্গে পাঠাও, বলেছিলেন সন্দীপ ঘোষ’, RG কর কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য
Listen to this article


কলকাতা: আর জি কর মেডিক্য়ালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সঞ্জয় রায় দোষী সাব্য়স্ত হয়েছে। তাকে আমৃত্য়ু যাবজ্জীবনের সাজা দিয়েছেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই নিহত চিকিৎসকের পরিবার থেকে সতীর্থ, সবাই জোরালভাবে একটাই দাবি করে আসছেন যে, তথ্য় প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। শিয়ালদা আদালতের বিচারকের নির্দেশনামার নানা অংশ থেকে সেই সন্দেহ আরও জোরাল হচ্ছে। (RG Kar Case)

দেখা গিয়েছে, ৩২ নম্বর পাতায় RG মেডিক্য়াল কলেজের রেসপিরেটরি মেডিসিনের অ্য়াসোসিয়েট প্রফেসর সুমিত তপাদার সাক্ষ্য়দানের সময় জানিয়েছেন, দেহ উদ্ধার হওয়ার পর তিনি তড়িঘড়ি ফোন করেন আর জি কর মেডিক্য়াল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। সন্দীপ ঘোষ ফোন না তোলায় তিনি মেসেজে লেখেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফোন করুন’। (RG Kar Verdict)

এর পর সুমিতকে কলব্য়াক করেন সন্দীপ। ওই সাক্ষী তাঁর বয়ানে বলেছেন, ঝামেলা এড়াতে দ্রুত মৃতদেহ মর্গে পাঠাতে বলেন সন্দীপ। সেই সময় তিনি জানান, ইতিমধ্যেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। তদন্ত ছাড়া দেহ মর্গে পাঠানো যাবে না।

এ নিয়ে আইনজীবী সাবির আহমেদ বলেন, “পুলিশ যতক্ষণ না তদন্ত করছে, ততক্ষ ডেডবডি মর্গে পাঠানো যাবে না। এটা প্রমাণ হিসেবে রয়েছে। জজসাহেব এটা রেকর্ডও করেছেন।” চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক প্রধানের প্রথম প্রতিক্রিয়া যা হওয়া উচিত ছিল, তার সঙ্গে এটা মানানসই নয়। মেয়েটি বেঁচে আছে কি না, বাঁচানোর সুযোগ আছে কি না, সেই চেষ্টা করা উচিত ছিল। এর পর পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত। পুলিশই ঠিক করবে মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে কি না। এটা পুলিশের কাজ। হাসপাতালের প্রশাসনিক প্রধান এটা বলতে পারেন না।”

নিহত চিকিৎসকের পরিবারের তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে, ৯ অগাস্ট সকালে আর জি কর মেডিক্য়ালের এক অ্য়াস্টিস্টান্ট সুপার (নন মেডিক্য়াল) ফোন করে তাঁদের জানিয়েছিলেন মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ফোনের কথোপকথনের যে রেকর্ড সামনে আসে তা হল এমন-

কণ্ঠ ১- আপনাকে তখন বার বার বলছিলাম, ব্যাপারটা হচ্ছে যে, আপনার মেয়ে…. উনি সুইসাইড করেছেন হয়তো। মারা গেছেন। পুলিশ রয়েছে, আমরা হাসপাতালের সবাই সামনেই রয়েছি, ফোন করছি। আপনারা যতটা তাড়াতাড়ি পারবেন চলে আসুন।


বিচারকের নির্দেশনামার ৩৩ নম্বর পাতা অনুযায়ী এক সাক্ষী তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, কেন নিহত চিকিৎসকের বাবাকে বলা হল, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, তার প্রতিবাদ করেন তিনি। আইনজীবী সাবির আহমেদ বলেন, “সেই মুহূর্তে যাঁরা ওখানে ছিলেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিল। হঠাৎ করে আত্মহত্যা বলে দেওয়ার নেপথ্যে কিছু প্রচেষ্টা ছিল না, এটাও বলা যাচ্ছে না। আঘাতের চিহ্ন ছিল গলায়, নাকে, মুখে, তাই হয়ত আত্মহত্যাও বলতে চাননি।”

অ্য়ানাটমি বিশেষজ্ঞ অপূর্ব বিশ্বাস তাঁর সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, মৃতদেহ বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে মর্গে পৌঁছয়। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও, টালা থানার বিশেষ অনুমতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়। বিচারকের নির্দেশনামার ২৩ নম্বর পাতায় নিহত তরুণী চিকিৎসকের পারিবারিক বন্ধুর বয়ানে বলা হয়েছে, তড়িঘড়ি শেষকৃত্য খুবই সন্দেহজনক। এবং মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন। যা প্রত্য়াখ্য়ান করে পরিবার। 

সেই সময়ই এ নিয়ে মুখ খোলেন নিহতের মা-বাবা। তাঁরা জানান, মেয়ের দেহ কার্যত হাইজ্যাক করা হয়। শেষকৃত্য করে দেওয়া হয় তড়িঘড়ি। তাঁদের মেয়েকে দেখতেও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন। নিহতের মা জানান, মুখ্যমন্ত্রী টাকার কথা বলেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, মেয়ে বিচার পেলে, দোষীদের সাজা হলে তাঁরা নিজেরা গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ক্ষতিপূরণ নেবেন। নিহতের চিকিৎসকের বন্ধুও জানান, তড়িঘড়ি শেষকৃত্য করে দেওয়া হয়। একা সঞ্জয়ের পক্ষে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয় বলে এখনও মনে করছেন তাঁরা। আসল সত্য় যাতে বেরিয়ে আসে, এখনও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে তাঁরা।

আরও দেখুন



Source link