কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টে আবারও পিছিয়ে গেল আর জি কর মামলার শুনানি। আগামী কাল, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে শুনানি হতে পারে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, কাল CBI-এর স্টেটাস রিপোর্ট দেখবেন তিনি। এর আগে, মঙ্গলবার আর জি কর মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু একাধিক মামলার শুনানি করতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। দুপুরে আবার রাষ্ট্রপতি ভবনে দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের। তাই যথেষ্ট সময় না থাকার জন্য গতকাল শুনানি হয়নি। বুধবার শুনানি হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু আজও শুনানি হল না। (RG Kar Case Hearing)
গতকাল মামলার শুনানি না হওয়ায় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, বুধবার আদালত খোলার পর প্রথমেই আর জি কর মামলার শুনানি হবে। সেই মর্মে নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত। সকাল ১০.৩০টায় আদালত খোলার পর ১১টা নাগাদ শুনানি হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু আজ আদালত খোলার পর জানা যায়, প্রথমেই আর জি কর মামলার শুনানি হবে না, দুপুর ৩টে নাগাদ হতে পারে শুনানি। কিন্তু বিকেল ৪টে নাগাদ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, আজও আর জি কর মামলার শুনানি করতে পারছেন না তিনি। অন্যান্য মামলাগুলি যেমন দীর্ঘায়িত হয়েছে, তাই এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া সংগঠিত করা যায়নি। পাশাপাশি, আজও কিছু কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। তাই বৃহস্পতিবার শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার কখন মামলার শুনানি হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। প্রথমে দুপুর ২টোর সময় শুনানি হবে বলে জানানো হলেও, নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। CBI তদন্তের রিপোর্টে যা তুলে ধরবে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলে জানা গিয়েছে। (Supreme Court)
আজ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় মামলা ফের স্থগিত করলে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবল জানান, দিল্লিতে আধিকারিকরা রয়েছেন। দ্রুত শুনানি করা হোক। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে যে চার্জগঠন হয়েছে, তাতে স্থগিতাদেশ চান অন্য আর এক পক্ষের আইনজীবী। আদালত যদিও CBI-এর তদন্ত রিপোর্ট দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানায়। বৃহস্পতিবার শুনানি দুপুর ২টোয় হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও তাতে রাজি হন। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে সিবল সকালে ১০.৩০টায় শুনানি চান। সেই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি এখনও।
সঞ্জয় ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া গিয়েছে কি না, দুর্নীতির প্রশ্নে কী কী হাতে এসেছে, সেই নিয়ে কাল রিপোর্ট জমা দেবে CBI. এর আগে আর জি কর মামলার শুনানি চলাকালীন সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। রাজ্যকে সেই নিয়ে বিশদ হলফনামা দিতে বলা হয়েছিল। আগামী কাল শুনানি হলে রাজ্য সেই হলফনামা জমা দিতে পারে। সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে আদালতের প্রশ্ন ছিল, ১. কোন আইনের ক্ষমতাবলে পশ্চিমবঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে? ২. কী পদ্ধতিতে রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ হয়? ৩. সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের যোগ্যতামান কী? ৪. সিভিক ভলান্টিয়ারদের আগে কোনও অপরাধের ইতিহাস রয়েছে কি না, তা কী প্রক্রিয়ায় যাচাই করা হয়? ৫. কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে? ৬. সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতন কী ভাবে দেওয়া হয় ও তার জন্য কত অর্থ বরাদ্দ করা হয়? শুধু তাই নয়,সিভিক নিয়োগ নিয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বক্তব্য ছিল, ”এটা একটা সুন্দর ব্যবস্থা,যেখানে, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিযুক্ত করা হচ্ছে!”
কিন্তু বার বার যেভাবে মামলার শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে, তাতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর জি কর হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “সত্যিই, ক্ষুব্ধ ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে, আজ বলে কাল, আবার কাল বলা হচ্ছে। একটা ধর্ষণ, খুনের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়েছিল পরিস্থিতি। রাতের পর রাত রাস্তায় কাটিয়েছি আমরা। তার পরও এমন ঢিলেমি কেন? সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে কি? আমরাও উত্তর খুঁজছি। বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে, বিতৃষ্ণা জন্মাচ্ছে।” আর এক জুনিয়র চিকিৎসা হলেন, “রোগীর অস্ত্রোপচার যদি বার বার এভাবে পিছিয়ে দিতাম, তাতে রোগীর পরিবারের ক্ষোভ আছড়ে পড়ত। তাহলে যাঁরা বিচারব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে আছেন, তাঁদেরও ক্ষোভের কারম রয়েছে। জাস্টিস ডিলেড ইজ জাস্টিস ডিনায়েড।”
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, বিচার ব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখার পরও দেখেছি, বিচার ব্যবস্থা কিন্তু সবসময় সঠিক ভূমিকা পালন করছে না। গতকাল ২১ নম্বরে মামলা ছিল, আজ ছিল এক নম্বরে। আজ সকালে প্রথমেই শুনানির কথা ছিল, তার পর বলা হল বেলা ৩টে, এখন জানছি কাল। শুনানির পর শুনানি হচ্ছে, বিচার কিন্তু এগোচ্ছে না। মুখবন্ধ যে রিপোর্ট CBI-এর তা-ও প্রকাশ্যে আসছে না। রাজপথে যে লড়াই যত তীব্র হবে, বিচারব্যবস্থা থেকে বাকি সব জায়গা সঠিক থাকবে। তবেই গুরুত্ব পাবে। লড়াই স্তিমিত হলে কিন্তু হবে না। “
আরও দেখুন