জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে ঢুকে পড়ল বিদ্রোহীরা। আর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর হল শনিবার দামাস্কাস ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিজেন্ট বাশার আল আসাদ। বিদ্রোহীরা বলছেন এক যুগের অবসান হল। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারনা, সহজে হার মানার পাত্র নন আসাদ। তিনি পাল্টা আঘাতও হানতে পারেন।
আরও পড়ুন-ভারতের গোলাপি রহস্যের সমাধান অধরাই! আতঙ্কের অ্যাডিলেডে এবারও ভরাডুবি…
কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে আসাদ রাশিয়া গিয়ে লুকিয়েছেন। কিংবা জর্ডনেও পালাতে পারেন। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে আসাদ রাজধানী দামাস্কাসেই রয়েছেন। তার পরেও তিনি প্রকাশ্যে না আসায় তার পালিয়ে যাওয়ার জল্পনা বাড়ছে।
তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীরা ইতিমধ্যেই অ্যালেপ্পো, হোমস দখল করে নিয়েছে। বাকী ছিল দামাস্কাস, লাকাটিয়া ও টারটিয়ার মতো জায়গা। শেষপর্যন্ত রাজধানী দামাস্কাসের রিং অব স্টিল-ও ভেঙে পড়ল। রাজধানীতে ঢুকে পড়ল বিদ্রোহীরা। সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস দখল করার কথা ঘোষণা করেছে তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীরা। আর এর মাধ্যমে বাশার আল আসাদ সরকারের পতন হল বলেও তারা ঘোষণা করেছে। বিদ্রোহীরা সরকারি টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশন দখল করার দাবি করেছে।
দামাস্কাসে লোকজন তাদের সরবরাহ জমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। হাজার হাজার লোক দেশ ত্যাগের উদ্দেশে লেবাননের সাথে সিরিয়িার সীমান্তের দিকে চলে গেছেন। সেখানকার একজন বাশিন্দা এপিকে জানান যে রাজধানীর বহু দোকান বন্ধ ছিল এবং যেগুলো এখনো খোলা রয়েছে।
এদিকে, মাত্র তিন দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সরকারি বাহিনীর পতন ঘটে। এরপর সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে বিদ্রোহী যোদ্ধারা। এই গোষ্ঠীটির প্রধান আবু মোহাম্মদ আল জুলানি। এই জুলানিকেই বাশার আল-আসাদ সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সিরিয়ায় ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায় গত কয়েক বছরে বেশ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা ঝড়ের গতিতে তছনছ হয়ে গেল। গত সোমবার রাশিয়ার হামলায় আল-জুলানি নিহত হয়েছেন বলে একটি খবর অনলাইনে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বোঝা যায়, সেটি ছিল মিথ্যা খবর। আন্দোলন দমানোর একটি কৌশল।
আবু মোহাম্মদ আল-জুলানির আসল নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। ১৯৮২ সালে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী। ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে এসে দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে।
এরপর জুলানি কী করতেন, তা জানা যায়নি। ২০০৩ সালে সিরিয়া থেকে ইরাকে এসে তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন। ওই বছরই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। ২০০৬ সালে জুলানিকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ছাড়া পান। এরপর তার নেতৃত্বে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত।
প্রথম দিকের কয়েক বছর জুলানি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে কাজ করেন। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বাগদাদি আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এরপর জুলানি সিরিয়ায় নিজেদের তৎপরতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাশার সরকার আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। ওই সময়টাতে জুলানি আল-নুসরা ফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে জাভাত ফাতেহ আল-শাম রাখেন। পরে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শাম নিয়ে এইচটিএস গঠন করেন জুলানি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)