হুইলচেয়ারে চেপে মাঠে, সৌরভ ভক্ত বিক্রমের স্বপ্ন লর্ডসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার
সন্দীপ সরকার, কল্যাণী: শুক্রবার কল্যাণীতে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির (Bengal Cricket Academy) মাঠে ঢুকতেই নজর আটকে গেল হুইলচেয়ারে বসা চেহারায়। ছিপছিপে গড়ন। পরনে বাংলা (Bengal Ranji Trophy) দলের ট্র্যাক শ্যুট। বাংলার উইকেট পড়লেই হাহুতাশ করছেন। পরে বঙ্গ বোলাররা যখন উইকেট তুলছেন, হাততালি দিয়ে উঠছেন।
বিক্রম ঘটক। ঠিকানা কল্যাণীর বি সিক্স বাই টেন, বাণী কো অপারেটিভ সোশ্যাইটি। ২৭ বছরের তরুণ স্নায়ুর বিরল রোগে আক্রান্ত। মাঠে নেমে খেলা তো দূর অস্ত, নিজের পায়ে দাঁড়াতেই পারেন না ঠিক মতো। এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়া হোক বা খাওয়াদাওয়া, সবেতেই বাবা-মায়ের সাহায্য নিতে হয়।
খেলা অন্ত প্রাণ বিক্রম। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, বারবার মাঠে পৌঁছে যান। ইডেন (Eden Gardens) হোক বা যুবভারতী স্টেডিয়াম, সর্বত্রই ম্যাচ দেখেছেন। কল্যাণীতে বাংলা বনাম হরিয়ানা রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ হচ্ছে, আর তিনি ঘরে বসে থাকবেন, তাও আবার হয় নাকি!
বিক্রম হুইলচেয়ারে বসেই হাজির হয়ে গিয়েছেন বিসিএ মাঠে। এবিপি আনন্দকে বলছিলেন, ‘কল্যাণীর মাঠে এটা নিয়ে ৯ নম্বর ক্রিকেট ম্যাচ দেখছি। খেলা দেখতে আমার ভীষণ ভাল লাগে।’
বিক্রমের বাবা বিপ্লব ঘটক বাগদার স্কুল শিক্ষক। বলছিলেন, ‘জন্ম থেকেই ওর স্নায়ুর রোগ। কাঁদতেও পারত না। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। ভেলোরে নিয়ে গিয়েছি ১৪ বার। অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। দেহের ৬ জায়গায় কেটে স্নায়ুর চিকিৎসা হয়েছিল। সাময়িক উন্নতি হলেও পরে আবার সেই পুরনো সমস্যা।’
বিক্রম বলছিলেন, ‘ইডেনে ২৪টি ম্যাচ দেখেছি। ১২টি দেশের ১৪টি ম্যাচ দেখেছি। আইপিএলে দেখেছি ৯টি ম্যাচ। ঘরোয়া ক্রিকেটেরও ৩টি ম্যাচ দেখেছি। কল্যাণীতে ক্লাবের ম্যাচ হোক বা মহিলাদের ক্রিকেট, দেখতে হাজির হয়ে যাই। ভারতের পাঁচটি টেস্ট ও একটি টি-২০ দেখেছি। সব ম্যাচ আমার মনে রয়েছে।’
পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মা রচনা ঘটক। বললেন, ‘ওর ওয়ান ডে ম্যাচ দেখার খুব শখ। তবে এখনও কোনও ওয়ান ডে ম্যাচ দেখতে পারেনি।’ যোগ করলেন, ‘ওর বাবার সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। হুইলচেয়ারে বসেই বল করে। বাংলার ক্রিকেটার কৌশিক ঘোষ ওকে এই ট্র্যাক শ্যুটটা উপহার দিয়েছিল। ক্রিকেট অন্ত প্রাণ।’
বিপ্লব-রচনার এক সন্তান। ২০১৫ সালে রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। বাগদা স্কুলেই পড়াশোনা। পরে বনগাঁ কলেজে কলা বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন। কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। সারা বছর ধরে বিভিন্ন দলের জার্সি কেনেন। অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে আইএসএল, আইপিএল, ম্যাচ থাকলেই পৌঁছে যান মাঠে।
তবে কলকাতায় গেলে হুইলচেয়ার নিয়ে যেতে পারেন না। বাবার কাঁধে চেপে ট্রেনে করে যাতায়াত করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সচিন তেন্ডুলকরের ১৯৯তম টেস্ট ম্যাচ দেখতে ইডেনে গিয়েছিলেন।
প্রিয় ক্রিকেটার? বিক্রম বলছেন, ‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। একবার দাদার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ যোগ করলেন, ‘এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে শুভমন গিল ও যশস্বী জয়সওয়ালকে ভাল লাগে। আর স্বপ্ন দেখি, একদিন লর্ডসে বসে খেলা দেখছি। যে মাঠে দাদা জার্সি খুলে উড়িয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন: বিয়ের ২১ বছর পর ঘর ভাঙছে বীরেন্দ্র সহবাগের! স্ত্রী আরতির সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে জোর জল্পনা
আরও দেখুন