কলকাতা: ফেডারেশন ও পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বে এবার নয়া মোড়। সকাল থেকে একে একে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন অভিনেতা-পরিচালকরা। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর থেকে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরও টেকনিশিয়ানরা কেউ ফ্লোরে হাজির হননি, ফলে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়দের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। সোমবার পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেন রাজ চক্রবর্তী। সেই আবহে এবার নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরলেন টেকনিশিয়ানরা। তাঁদের দাবি, আসল ঘটনা লুকিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। (Rahool Mukherjee-Federation Conflict)
শনিবার বিকেলে টলিপাড়ার টেকনিশিয়ানরা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট স্বরূপ বিশ্বাস। সেখানে টেকনিশিয়ানদের মধ্যে একজন নিজেদের অবস্থান জানাতে এগিয়ে আসেন। তিনি জানান, যে ছবিকে ঘিরে এত বিতর্ক, তার নাম ‘লহু’। কলকাতায় ছবিটির শ্যুটিং শুরু হয়েছিল। যা একেবারেই সামনে আসছে না, তা হল, IMPPA-য় ছবিটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর। কাহিনীকার হিসেবে নাম ছিল চিরন্তন মুখোপাধ্য়ায়। গায়ত্রী ফিল্মসের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। কলকাতায় শ্যুটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন অরিন্দম দে অর্থাৎ মামদো। (Tollywood Updates)
টেকনিশিয়ানরা জানিয়েছেন, কলকাতায় ছবিটির শ্যুটিং শুরু হয়েছিল। কলাকুশলীদের কারও কোনও অসুবিধা ছিল না। তাঁরা ফ্রিল্যান্স করেন, অর্থাৎ নো ওয়র্ক নো পে। কাজ করলে টাকা, নইলে নে। ফলে ১০-১২ দিনের কাজের শিডিউল পেলে, সেই মতো প্রস্তুতি নেন। হাতে অন্য কোনও কাজ নেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে অদ্ভুত ভাবে চার দিন কলকাতায় শ্যুটিং হওয়ার পর শ্যুটিং চলে গেল বাংলাদেশে। নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে প্রোডাকশন ম্যানেজারকে পাঠানো প্রযোজকের একটি নথিও তুলে ধরেন টেকনিশিয়ানরা, যাতে কাঁচাবাড়ি, হাওড়া হাউজ, চায়না টাউন, তালতলা, গোয়াবাগান, খেয়াদহ, বানতলা, টিটাগড় জুটমিল, নিউ আলিপুর বাড়িতে শ্যুটিংয়ের শিডিউল রয়েছে।
আরও পড়ুন: Rahool Mukherjee-Federation Conflict: সকাল থেকে দাঁড়িয়ে প্রসেনজিৎ-অনির্বাণরা, আজও শ্যুটিং হল না টলিপাড়ায়, ফেডারেশনকে দু’দিন সময় দিলেন রাজ
টেকনিশিয়ানদের দাবি, সেই মতো কাজের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কলাকুশলীরা। অন্য কোনও কাজ হাতে নেননি কেউ। এক-একটি ইউনিটের সঙ্গে যেখানে ৪০ থেকে ৫৫ জন করে জড়িয়ে, সেখানে কাউকে কিছু না জানিয়ে, চার দিন শ্যুটিং করে বাংলাদেশ চলে যাওয়া হল। বেশ কিছু দিন পরে অন্য লোকের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, বাংলাদেশে ছবির কাজ সম্পূর্ণ করে চলে এসেছেন রাহুল। সেই নিয়ে গিল্ডের কাছে গেলে চিঠি ধরানো হয় ছবির পরিচালককে। ১০ জুলাই চিঠিতে ‘অপরাধ’ করেছেন বলে স্বীকারও করেন রাহুল। তাই টেকনিশিয়ানদের প্রশ্ন, “অন্যায় না করলে অপরাধ স্বীকার করলেন কী করে? বার বার বলা হচ্ছে কোনও অন্যায় করেননি। বিভ্রান্ত করা হচ্ছে সকলকে।”
এর আগে, শনিবার সকালে অভিনেতা পরমব্রত ফেডারেশনকে নিশানা করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, “বিচারবিভাগ, এগজিকিউটিভ আইন তৈরি করে। এর বাইরে কোনও সংস্থা, ব্যক্তির আইন তৈরির ক্ষমতা নেই।” পরমব্রতর সেই মন্তব্য টেনে টেকনিশিয়ানরা জানান, নির্দিষ্ট আইন নেই ঠিকই। কিন্তু যেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার টেকনিশিয়ানের রুটি রোজগারের প্রশ্ন জড়িয়ে, সেখানে কাজের কিছু নিয়ম থাকে। তাঁরা কাউকে নিষিদ্ধ করতে বলেননি, বরং সাময়িক কর্মবিরতির কথা বলেছিলেন। বিনা কাজে একটি পয়সাও নেন না তাঁরা। তাই নিজেদের রুটি-রোজগার বাঁচানোর জন্য এই অসহযোগিতার অধিকার রয়েছে তাঁদের। সেই মতো গিল্ডের কাছে যান, গিল্ডের এগজিকিউটিভ কমিটি সেই মতো সিদ্ধান্ত নেন।
টেকনিশিয়ানরা জানিয়েছেন, এর পর SVF-এর তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ছবিটি এবার পরিচালনা করবেন সৌমিক হালদার, যিনি আগে সিনেম্যাটোগ্রাফার ছিলেন। সেই চিঠিও রয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছিল, রাহুল ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার থাকবেন বলে। সেই নিয়ে ২৬ জুলাই মাননীয় মন্ত্রী অরূপ তথা টেলি অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস, ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হয়, যিনি ছবির অভিনেতাও। SVF কর্ণধারও বৈঠকে ছিলেন। রাহুলকে নিয়ে অনুরোধ করেন তাঁরা। এর পর টেকনিশিয়ানদের ২৬টি ইউনিয়নের সদস্যদের নিয়ে নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠক হয়। কিন্তু ফ্লোরে রাহুলের উপস্থিতি চাননি কেউ।
আরও দেখুন