‘দায় কাঁধে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এখনই পদত্যাগ করা উচিত’, বিস্ফোরক দাবি R G Kar-এ নির্যাতিতার বাবার
উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সমীরণ পাল, কলকাতা : আর জি কর-কাণ্ডে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করলেন নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা। মেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী, সঙ্গে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। তাঁর মৃত্যুর জন্য রাজ্য সরকারই পুরো দায়ী। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার কোনও যুক্তি নেই, বললেন আর জি কর মেডিক্যালে নিহত চিকিৎসকের বাবা। পাশাপাশি তড়িঘড়ি মেয়ের শেষকৃত্য় কেন করা হয়েছিল তা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন নিহত চিকিৎসকের মা। তাঁর অভিযোগ, মেয়ের দেহ চুল্লিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার পরে পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের পিঠে হাত দিয়ে বলেছিলেন, ‘ওয়েলডান বয়’। তাঁর দাবি, তথ্য প্রমাণ লোপাটে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নিহত চিকিৎসকের মা বলছেন, তিনি মনে করেন মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই সেটা করা হয়েছিল। যদিও এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল। তারা বলছে, তৃণমূল বিরোধীদের মতো কথা বলছে নিহত চিকিৎসকের পরিবার।
আর জির কর কাণ্ডে নিহত চিকিৎসকের পরিবার এবার সরাসরি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের পদত্য়াগ দাবি করল। নিহত চিকিৎসকের বাবা বলছেন, “আমার মেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী ছিল এবং একজন ছাত্রী ছিল কলেজের। সুতরাং রাজ্য সরকার এই দায় এড়িয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য, আমি সরাসরি বলছি রাজ্য সরকার পুরো দায়ী। এই অবস্থাতে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার কোনও যুক্তি নেই। ওঁর এই দায় পুরো কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করা এখনই উচিত।”
কেন রাজ্য় সরকার তড়িঘড়ি সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে গেল, তা নিয়েও ফের একবার চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ করলেন নিহতর মা-বাবা। নিহত চিকিৎসকের বাবার কথায়, “আজকে সঞ্জয়কে যেহেতু উনি যাবজ্জীবন দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা করতে আবার হাইকোর্টে দৌড়চ্ছেন। তাহলে কী হচ্ছে, উনি যে দোষী, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন আমাদের বিচারক। সেটা বুঝতে পেরে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য হাইকোর্টে গেলেন।” নিহত চিকিৎসকের মায়ের বক্তব্য, “শেষ প্রমাণটুকুও যাতে নষ্ট করা যায়, কোনও প্রমাণই তো উনি রাখেননি। যাতে শেষ প্রমাণটুকুও লোপাট করা যায়, তার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন উনি।”
তড়িঘড়ি কেন নিহত চিকিৎসকের শেষকৃত্য় করা হয়েছিল ? কী লুকোতে ? শুরু থেকে ওঠা এই প্রশ্ন নিয়েও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা। নিহত চিকিৎসকের মা বলেন, “আমার মেয়ের দেহটাকে চুল্লিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হল, তখন আমাদের এখানকার এমএলএ নির্মল ঘোষ সন্দীপ মুখার্জির পিঠ চাপড়ে ওয়েলডান বয়, ওয়েলডান বয় বলছিলেন। এই নির্দেশ আমি মনে করি মুখ্যমন্ত্রীর পুরো হস্তক্ষেপেই এটা হয়েছে।” নিহত চিকিৎসকের বাবার অভিযোগ, এরা সমপূর্ণভাবে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে যুক্ত। এদের কেন পুলিশ সিবিআই গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিচ্ছে না, এটাই সমস্ত সরকারের কাছে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার দু’জনের কাছেই প্রশ্ন।
নিহত চিকিৎসকের মা-বাবার অভিযোগ প্রসঙ্গে পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও, তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মুখ্য়মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ প্রসঙ্গে নিহত চিকিৎসকের মা-বাবার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “যে মুখ্যমন্ত্রী-যে পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর মেয়ের ধর্ষক এবং খুনিকে ধরে আনল, তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর বদলে যদি অন্য কোনও ধরনের বিরূপ মন্তব্য হয়, আদালতের সব প্রক্রিয়া দেখেও…তাহলে ধরে নিতে হবে, অন্ধ তৃণমূল-বিরোধী কিছু অশুভ শক্তির হাতে তাঁরা পরিচালিত হচ্ছেন।”
আর জি কর কাণ্ডে নিম্ন আদালত রায় ঘোষণা করেছে। এবার আইনি যুদ্ধ হাইকোর্টে। অজস্র অধরা প্রশ্নের উত্তর কি কোনওদিন পাওয়া যাবে ?
আরও দেখুন