‘স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ও লোকাল কমিশনারের সঙ্গে…’, সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি
<p><strong>সন্দীপ সরকার, কলকাতা :</strong> আর জি কর-কাণ্ডে শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে হাসপাতাল ও তৎকালীন অধ্য়ক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা। সন্দীপের বিরুদ্ধে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মৃতদেহ দ্রুত মর্গে পাঠানোর অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনই নিহত চিকিৎসকের ময়নাতদন্তও যে কতটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হয়েছিল তাও, রায়ের কপিতে সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। এই প্রেক্ষাপটে এবার সন্দীপ ঘোষ সম্পর্কে আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন নিহত চিকিৎসকের মা। তাঁর দাবি, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছিলেন আর জি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। অথচ তাঁদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি।</p>
<p>কলকাতায় আর জি কর মেডিক্য়ালের মতো প্রথিতযশা কলেজে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন ! অসংখ্য় প্রশ্ন ও অভিযোগে বিদ্ধ কলেজেরই তৎকালীন অধ্য়ক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করলেও, তথ্য় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে চার্জশিট দিতে না পারায় এই মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। তাঁর ভূমিকা নিয়ে ওঠা অজস্র প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। শিয়ালদা আদালতের নির্দেশনামাতেও সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। রায়ের ৩২ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে, RG মেডিক্য়াল কলেজের রেসপিরেটরি মেডিসিনের অ্য়াসোসিয়েট প্রফেসর সুমিত তপাদার সাক্ষ্য়দানের সময় বলেন, দেহ উদ্ধার হওয়ার পর তিনি সন্দীপ ঘোষকে তড়িঘড়ি ফোন করেন। সন্দীপ ঘোষ ফোন না তোলায় তিনি মেসেজে লেখেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফোন করুন। এরপর কলব্য়াক করেন সন্দীপ ঘোষ। ওই সাক্ষী তাঁর বয়ানে বলেন, ঝামেলা এড়াতে দ্রুত মৃতদেহ মর্গে পাঠাতে বলেন সন্দীপ ঘোষ। তখন ওই সাক্ষী বলেন, ইতিমধ্যেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। তদন্ত ছাড়া দেহ মর্গে পাঠানো যাবে না। </p>
<p>এখানেই প্রশ্ন উঠছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আগেই, কেন তড়িঘড়ি মৃতদেহ মর্গে পাঠাতে চেয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ? কী লুকোতে?</p>
<p>এ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়া বলেন, "কোন মোটিভে, কোন উদ্দেশ্যে তিনি এরকম তাড়াহুড়ো করেছিলেন। কিন্তু, এটা সন্দীপ ঘোষ নন। পুরো সন্দীপ বাহিনী। যাঁরা তাড়াহুড়ো করে কী করে বডিটাকে পোস্ট মর্টেম করিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার একটা চেষ্টা। ব্যাপারগুলো চার্জশিটে এখনও পর্যন্ত আসেনি। তদন্ত হয়ে উঠে আসুক। সন্দীপ ঘোষ আবার কার থেকে পেয়েছিলেন নির্দেশ। আমরা মনে করি এই ঘটনার শিকড় অনেক দূর।"</p>
<p>নিহত চিকিৎসকের মায়ের বক্তব্য, "আমাদের এখানকার লোকাল এমএলএ, লোকাল কমিশনার তাঁদের সঙ্গে সন্দীপ ঘোষ বসে দেড় ঘণ্টা মিটিং করেছেন, অবশ্য আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলার একবারও প্রয়োজন মনে করেননি। আমার মেয়ের মৃতদেহ আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করেননি।"</p>
<p>হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর ময়নাতদন্ত কীভাবে হয়েছিল তাও, রায়ের কপিতে উল্লেখ করেছেন শিয়ালদা আদালতের বিচারক। তিনি লিখেছেন, তিনি ময়নাতদন্তের ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন। সেখানে দেখা গেছে, অন্য় মহিলাদের মৃতদেহ মেঝেতে শোওয়ানো ছিল। যে ট্রে-তে ময়নাতদন্ত হয়, তা জীবাণুমুক্ত করা হয়নি। দেখা গেছে, নমুনা সংগ্রহের আগে ডোম গ্লাভস বা অ্য়াপ্রন পাল্টাননি। ভিডিওতে এটা পরিষ্কার যে, ময়নাতদন্তে ব্য়বহৃত ছুরি-কাঁচি জীবাণুমুক্ত করা হয়নি। এটাই দেখিয়ে দিচ্ছে, আদর্শ পরিকাঠামো না থাকায়, ময়নাতদন্তের যথাযথ প্রোটোকলই মানা হয়নি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ময়নাতদন্তের ঘরে নমুনা দূষিত হওয়ার সবরকম সম্ভাবনা রয়েছে। </p>
<p>এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যাতে নমুনা দূষিত হয়ে যায়, যথাযথ তথ্য়প্রমাণ না মেলে, সুবিচার না পাওয়ায় যায়, সেজন্য় কি ইচ্ছাকৃতভাবেই এরকম একটা পরিবেশে ময়নাতদন্ত হয়েছিল ?</p>
<p>তথ্য়প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ নিয়ে কি সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেবে ? দিলে কবে ? </p>
Source link