NOW READING:
Professor Shankur Pratyabartan Chapter One (ফেরা- The Return)
November 6, 2024

Professor Shankur Pratyabartan Chapter One (ফেরা- The Return)

Listen to this article

Chapter One: ফেরা (The Return)

গিরিডির আকাশে তখন ছায়ার ঘনঘটা। হঠাৎ যেন এই ছোট্ট মফস্বল শহরে এক ধরনের নিস্তব্ধতার বিস্তার ঘটেছে। সেই নিস্তব্ধতা ভেদ করে এগিয়ে আসছেন একজন ভদ্রলোক। তার চোখে মুখে কিছুটা ক্লান্তি, কিছুটা বিস্ময়, আর সেই পুরোনো দিনের প্রজ্ঞার আভাস। দীর্ঘ প্রবাস শেষে তিনি ফিরেছেন—এই পথ, এই মাটি, আর এই বাড়ি তার জন্য অপেক্ষা করছিল দীর্ঘদিন ধরে। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং অধ্যাপক ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।

দীর্ঘ এক সময় পার করে গিরিডিতে ফিরছেন তিনি, আর মনের মধ্যে যেন এক অদ্ভুত শূন্যতা। যেন কিছুতেই কিছু মনে করতে পারছেন না। বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তার চোখে সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি ভেসে উঠছে, যখন প্রতিদিন নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মাতোয়ারা ছিলেন তিনি। সেই দিনগুলো এখন অতীতের ছায়া হয়ে পড়ে রয়েছে, আর তার মাঝে সেই শঙ্কু এখন যেন এক স্মৃতি।

গেট খুলে বাড়ির সামনে দাঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ থমকে গেলেন। বাড়ির চারপাশে ঘাস ও আগাছা বেড়ে উঠেছে। এক সময়ে যে ঘর ছিল সাজানো-গোছানো, সেটি এখন যেন এক অচেনা স্থান। মনের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি—এই বাড়ির প্রতিটি ইট, প্রতিটি দরজা, প্রতিটি জানালা যেন তার ফেরার অপেক্ষায় ছিল।

দরজার সামনে এসে কড়া নাড়লেন। কোনো সাড়া নেই। নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজাটি খুললেন। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তার চোখে মুখে ভাসতে লাগল স্মৃতির তরঙ্গ। প্রতিটি দেয়ালে যেন এককালের অধ্যাপক শঙ্কুর ছোঁয়া লেগে রয়েছে। ঘরে ঢুকেই দেখলেন—এক টেবিলের ওপরে রাখা আছে কিছু পুরোনো খাতা, আর এক অদ্ভুত ধাতব গোলক।

গোলকটির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য শঙ্কুর চোখ স্থির হয়ে রইল। এই গোলকটি আগে কখনও দেখেননি, কিংবা দেখলেও মনে করতে পারছেন না। গোলকটির গায়ে খোদাই করা কিছু চিহ্ন আর প্রতীক, যা আলোর সামান্য স্পর্শে যেন মৃদু ঝলমল করে উঠে। গোলকটি হাতে নিয়ে গভীরভাবে পরীক্ষা করতে লাগলেন।

“কোথা থেকে এল এই জিনিস?” তার মনে প্রশ্ন ভর করতে থাকল। কিন্তু কোনো উত্তর আসছে না। যেন স্মৃতির কোনো ফাঁক থেকে বেরিয়ে এসেছে এই বস্তুটি।

ঠিক সেই মুহূর্তে, ঘরের এক কোণে মিউ মিউ শব্দ করে তার প্রিয় বিড়াল নিউটন দৌড়ে এসে তার পায়ে ঘষা দিতে লাগল। নিউটন তার সেই পুরোনো বিড়াল, যাকে সে ছোটবেলা থেকেই লালন করে এসেছে। শঙ্কু মৃদু হাসলেন এবং নিউটনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

“নিউটন, তুইও বেঁচে আছিস!” শঙ্কুর মনে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভূত হলো। যেন এই বিড়ালটি তাকে তার জীবনের সেই হারানো দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে।

ঘরের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে একে একে পুরোনো বইগুলো তুলে দেখতে লাগলেন। প্রতিটি বইয়ের পাতা খুলতেই তার মনে পড়ছে বিভিন্ন গবেষণার স্মৃতি। সেইসব অদ্ভুত আর ভয়ানক পরীক্ষাগুলি, যেখানে তিনি সৃষ্টির সীমারেখা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আজ সেসব স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আছে।

ঘরের কোণ থেকে একটি পুরোনো খাম পাওয়া গেল। খামের গায়ে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়া কিছু লেখা রয়েছে। তিনি ধীরে ধীরে সেটি খুলে দেখলেন। খামের ভেতরে রয়েছে একটি ছোট্ট চিরকুট, আর সেই চিরকুটে লেখা, “শঙ্কু স্যার, আপনি যদি ফিরে আসেন, তবে আপনার এই চিঠি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গোলকটি আপনি নিজেই তৈরি করেছিলেন, তবে মনে রাখবেন, এই যন্ত্রটি বিপজ্জনক।”

চিরকুটটি পড়ে শঙ্কুর মনে নানা প্রশ্ন ভর করতে থাকল। এই গোলকটি সত্যিই তার হাতে তৈরি? তাহলে কেন তিনি কিছুই মনে করতে পারছেন না? আর এই “বিপজ্জনক” কথাটি কেন লেখা?

গোলকটি হাতে নিয়ে একটু দূরে টেবিলের ওপর রাখলেন। গোলকের গায়ে থাকা প্রতীকগুলি মৃদু আলোর ঝিলিক ছড়াতে থাকল। হঠাৎ করেই মনে হলো, গোলকটি যেন কিছু বলতে চায়।

একটা অদ্ভুত আকর্ষণ বোধ করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন, তারপর সেটিকে আরো ভালো করে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

“কী রহস্য লুকিয়ে আছে এই যন্ত্রের মধ্যে?” তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করলেন। হঠাৎ গোলকটির গায়ে হাত রাখতেই সেটা সামান্য গরম হতে শুরু করল। শঙ্কুর হাত যেন এক মুহূর্তের জন্য বিদ্যুৎ ঝলকের মতো হয়ে গেল। তার মধ্যে তীব্র শিহরণ সৃষ্টি হলো, কিন্তু সেটি যেন তার গবেষণার প্রতি তীব্র আকর্ষণ তৈরি করল।

রাতের বেলা যখন ঘরটি নিঃশব্দ, অধ্যাপক শঙ্কু সেই গোলকের সামনে বসে নিজের গবেষণার নোটগুলি খুলে পরীক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু সব কিছুই যেন ধোঁয়াটে মনে হচ্ছে। কিছুতেই সেই নোটগুলির স্পষ্ট চিত্র তার মনে পড়ছে না।

হঠাৎ করেই নিউটন ছুটে এল তার সামনে। তার চোখে কেমন যেন এক ধরনের ভয়। শঙ্কুর মনেও অস্বস্তি ভর করল। এই যন্ত্রটি কি কোনো অজানা বিপদের সংকেত বহন করছে? তা সত্ত্বেও, এক অদ্ভুত কৌতূহল তাকে চেপে ধরছে।

“কিন্তু এই গোলকের ক্ষমতা কী?” শঙ্কু নিজেকে বললেন।

তবে এই যন্ত্রের দিকে তাকাতে তাকাতে তিনি ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু সেই ঘুমের মাঝেও যেন এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। এক অন্য জগতে প্রবেশ করছেন, যেখানে সব কিছুই অপরিচিত। এই যন্ত্রটি যেন তার সামনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে তার মনে পড়ল সেই অদ্ভুত স্বপ্নের কথা। আর সেই স্বপ্ন তাকে আরও কৌতূহলী করে তুলল। গোলকটির রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠলেন।

এইভাবে শুরু হলো অধ্যাপক শঙ্কুর রহস্যময় ফেরার গল্প। একদিকে হারানো স্মৃতির টান, অন্যদিকে অজানা যন্ত্রের রহস্য—এই দুইয়ের মাঝখানে তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার মন জানে, এই যন্ত্রের রহস্য উদ্ঘাটন করলেই তার হারানো দিনগুলির স্মৃতি ফিরিয়ে আসবে।

কিন্তু তার সাথেই রয়েছে অজানা বিপদের ছায়া, যা তাকে প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক করতে বাধ্য করছে। এই যন্ত্রের রহস্য কি তাকে তার হারানো অতীতের দিকে নিয়ে যাবে? নাকি তাকে নিয়ে যাবে এক নতুন বিপদের অন্ধকার পথে?

To Be Continued …………

TAGS: