জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: দেশের সর্বকালের সেরা অ্যাথলিট হিসেবে নিজের নামটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন নীরজ চোপড়া (Neeraj Chopra)। টোকিও অলিম্পিক্সে দেশের স্টার জ্য়াভলিন থ্রোয়ার সোনা জেতার পর প্যারিস অলিম্পিক্সে জিতেছেন রুপো। অভিনব বিন্দ্রার পর ব্যক্তিগত দক্ষতায় অলিম্পিক্স সোনা জয়ী দ্বিতীয় ভারতীয় তিনি। প্যারিস অলিম্পিক্সের আগেও এশিয়াড ডায়মন্ড লিগ, বিশ্ব চ্য়াম্পিয়নশপিও দেখেছে নীরজের কামাল। জাতীয় সোনাও জিতেছেন তিনি। নীরজের সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক নরেন্দ্র মোদীর (PM Modi)। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নক্ষত্র অ্যাথলিটের একাধিকবার দেখাও হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে নীরজের কাছে একটা আবদার করেছিলেন মোদী। মোদী বলেছিলেন যে, তিনি নীরজের মা সরোজ দেবীর (Saroj Devi) হাতে বানানো চুরমা (Choorma) খেতে চান!
আরও পড়ুন: লখনউয়ে সরফরাজের নবাবিয়ানা, বোলারদের কাবাব বানিয়ে ২২১*! সচিন-রাহুলের সঙ্গে ইতিহাসে
হরিয়ানা ও রাজস্থানের অত্য়ন্ত জনপ্রিয় খাবার চুরমা। চুরমার অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। এটি বাজরা বা গম দিয়ে মূলত তৈরি হয়। ঘি এবং ডাল দিয়ে খাওয়া হয়। ঘটনাচক্রে মোদীর আবদার রেখেছেন নীরজ। জামাইকার প্রধানমন্ত্রী ডঃ অ্যান্ড্রু হোলনেস এসেছেন ভারত সফরে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তিনি দেখা করেছেন। ডিজিটাল পরিকাঠামো, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ভারত-জামাইকার মধ্যে সমঝোতা স্মারক পত্র-মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে ছিলেন নীরজও। তিনি মায়ের হাতের বানানো চুরমা নিয়ে এসেছিলেন মোদীর সঙ্গে দেখা করতে। মোদী চুরমা খেয়ে রীতিমতো আপ্লুত হয়ে গিয়েছেন। আর এখানেই শেষ নয়, তিনি নীরজের মাকে কৃতজ্ঞতায় চিঠিও লিখেছেন।
মোদী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় সরোজ দেবীজি, আমার শুভেচ্ছা নেবেন! আশা করি আপনি সুস্থ, নিরাপদ এবং সুখী আছেন। গতকাল জামাইকার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে, আয়োজিত একটি ভোজসভায় আমি নীরজের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। আমার আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেল আপনার হাতে বানানো সুস্বাদু চুরমা খেয়ে। আমি আপনাকে চিঠি লেখা থেকে বিরত রাখতে পারলাম না। কিন্তু আজকে এই চুরমা খেয়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। মায়েরা শক্তি, স্নেহ এবং উত্সর্গের মূর্ত প্রতীক। এটা কাকতালীয় যে আমি এই প্রসাদটি নবরাত্রি শুরু হওয়ার একদিন আগে পেলাম। আমি নবরাত্রির এই ন’দিন উপবাস করি। আপনার বানানো এই চুরমা আমার উপোস রাখার আগে প্রধান খাবার হয়ে উঠেছে। আপনার তৈরি খাবার যেমন, নীরজকে দেশের জন্য পদক জেতার শক্তি জোগায়, ঠিক তেমনি এই চুরমা আমাকে আগামী ৯ দিন জাতির সেবা করার শক্তি জোগাবে। নবরাত্রির এই উৎসবে আমি আপনাকে এবং মহিলাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে, একটি উন্নত ভারতের সংকল্পকে বাস্তবে রূপায়িত করতে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব।’
কখনও কুঁচকি তো কখনও হাত! নীরজের জীবন ওষ্ঠাগত করে দিয়েছে চোট-আঘাত। আর কুঁচকির চোট নিয়েই প্যারিস অলিম্পিক্সের ফাইনালে পেয়েছিলেন রুপো। এমনকী ডায়মন্ড লিগের ফাইনালেও গত সেপ্টেম্বরে রুপো পেয়েছেন তিনি। তবে সেখানেও তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি চোট। বাঁ হাতের হাড়ে চিড় ধরা সত্ত্বেও নীরজের বর্শা ৮৭.৮৬ মিটার। মাত্র এক সেন্টিমিটারের জন্য গ্রেনাডার অ্যান্ডারসন পিটার্সের কাছে সোনা হারান তিনি। গ্রেনাডার তারকা জ্য়াভলিন থ্রোয়ার ৮৭.৮৭ মিটার জ্য়াভলিন ছুড়েছিলেন। নীরজ হাতের এক্স-রে রিপোর্ট পোস্ট করেছিলেন নিজের এক্স হ্য়ান্ডেলে। যা দেখে সকলে চমকে গিয়েছিল।
‘২০২৪ মরসুম শেষ হল। আমি সারা বছর ধরে যা যা শিখেছি তা পিছন ফিরে দেখলাম। রয়েছে উন্নতি, সেটব্য়াক, মানসিকতা ও আরও অনেক কিছু। আমি অনুশীলন করতে গিয়ে আহত হয়েছিলাম। এক্স-রে রিপোর্ট বলছে যে, আমার বাঁ-হাতের চতুর্থ মেটাকার্পাল হাড়ে চিড় ধরেছে। আমার জন্য আরও একটি বেদনাদায়ক চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমার দলের সাহায্য়ে আমি ব্রাসেলসে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। এটাই ছিল আমার বছরের শেষ প্রতিযোগিতা। আমি ট্র্যাকেই আমার মরসুম শেষ করতে চেয়েছিলাম। যদিও আমি আমার নিজের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। আমি মনে করি, এটি এমন এক মরসুম যেখানে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি এখন ফিরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, পুরোপুরি ফিট হয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। আপনাদের এই উৎসাহের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ২০২৪ আমাকে একজন ভালো অ্যাথলিট এবং ব্যক্তি বানিয়েছে। ২০২৫ সালে আবার দেখা হবে।’ নীরজের চোট লেগেছে মেটাকার্পাল হাড়ে। যা থাকে তালুতে। আঙুল এবং কব্জির সংযোগকারী হাড়ের নামই মেটাকার্পাল। মানব শরীরে প্রত্যেক হাতে পাঁচটি করে মেটাকার্পাল হাড় রয়েছে। যার কাজই হচ্ছে আঙুলের সঙ্গে কব্জির সংযোগসাধন। নীরজ দ্রুত ফিরে আসুক। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সকলে।
আরও পড়ুন: সিট বেল্ট বেঁধে নিন, ক’টা দিন অপেক্ষা করুন, সচিন ফিরছেন স্বমহিমায়
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)