জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল এবং সেনাপ্রধান অসিম মুনির কিছুদিন আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার ঠিক কয়েকদিন পরেই, ইরানে মার্কিন হামলা। শনিবার,মধ্যরাতে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রাগারে আচমকা আমেরিকার আক্রমণের পর, এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। সম্পুর্ণ ভৌগলিক অবস্থান অগ্রাহ্য করে, শুধু নিজেকে বিশ্ব দরবারে সেরা পর্মাণ করার জন্য ট্রাম্পের এই হামলাকে বর্বরোচিত বলেই ব্যাখ্যা করেছে পাকিস্তান।
ইরানের পাশে পাকিস্তান:
ইসরায়েলের সঙ্গে গত সপ্তাহে সংঘাত যখন শুরু হয়, তখন পাকিস্তানের উপর নিজেদের ভরসার কথা প্রকাশ করেছিল ইরান। জানিয়েছিল, ইসরায়েল যদি তেহরানে পারমাণবিক হামলা চালায়, তবে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশে পারমাণবিক বোমা ফেলবে পাকিস্তান।
কিন্তু সংঘাতের আবহে পাকিস্তান আচমকাই জানায়, ট্রাম্পকে নোবেল দেওয়া উচিত। সেনাপ্রধান অসিম মুনির আমেরিকা সফরেও যান। তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তেহরান। নাম না করে পাকিস্তানকে বার্তা দেয়। তার পরেই কি ভোলবদল ঘটল পাকিস্তানের?
Chinese mysterious flight in Iran: নিঃশব্দে চিন থেকে ইরানের আকাশে একাধিক বিমান! ফ্লাইটরাডারের ছবিতে ভয়ংকর রহস্য…
আমেরিকার নিন্দায় পাকিস্তান:
রবিবার ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান বলেছে যে, এই আক্রমণ সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং ইরানের আত্মরক্ষার অধিকারও নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক এক্সে নিজেদের বিবৃতি পোস্ট করেছে। সেই বিবৃতি পোস্ট করেছেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কেন্ত্রগুলোতে মার্কিন হামলার নিন্দা জানাচ্ছে পাকিস্তান। ওই দেশে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন,’ এক সরকারি বিবৃতিতে বলেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার।
এর পরেই বিদেশ মন্ত্রক বলে, ‘আমরা মনে করি, নাগরিকদের জীবন এবং সম্পত্তির মান রাখা প্রয়োজন। এই সংঘাতে এখনই ইতি টানা দরকার। সব পক্ষকেই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা প্রয়োজন। বিশেষত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা প্রয়োজন।’ পাকিস্তান এ-ও জানিয়েছে যে, আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমেই এই সংঘাতে ইতি টানা সম্ভব। তা করতে হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ মেনেই।
Iran’s Ex President Mahmoud Ahmadinejad: ইরানের জনপ্রিয় Ex-প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ আচমকাই খবরে! যুদ্ধের আগুনে বড় ঘটনা ঘটল…
পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি:
ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য তথা ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)-র সিনিয়র জেনারেল মোহসেন রেজ়াই সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদি ইজ়রায়েল, ইরানের উপর পারমাণবিক বোমা ফেলে, তা হলে তারাও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলকে আক্রমণ করবে।’
যদিও গত ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে ইসরায়েল সরাসরি হামলা চালানোর পরে পাকিস্তান সরকারের কোনও শীর্ষ আধিকারিককে জনসমক্ষে এ ধরনের বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতের মধ্যে ইসলামাবাদের এই ভূমিকা একটি বড় ট্যুইস্ট।
এমনকি, দুই দেশের যুদ্ধে সরাসরি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে নিশানা করেছেন পাকিস্তানের শীর্ষকর্তারা। এ বিষয়ে পাক বিদেশমন্ত্রী দার বলেন, ‘ইরানের উপর ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ইরানের জনগণের পাশে রয়েছে।’
ইরান ও পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ মিত্র:
এতদিন, ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করলেও আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলছিল পাকিস্তান।
ইরান ও পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ মিত্র, কারণ দুই দেশই সীমান্ত, ইসলামী ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক বাণিজ্যের পথ শেয়ার করে। ইরানের মতো, পাকিস্তানও ইসরায়েলের স্পষ্ট সমালোচক এবং গাজা উপত্যকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানের বিরোধিতা করে। সন্ত্রাসীদের আস্তানা বলে দাবি করা সীমান্ত পারস্পরিক হামলা বিনিময়ের পর উভয় দেশ উচ্চ পর্যায়ের সফর এবং নিরাপত্তা আলোচনায় বসে।
পাকিস্তান দাবি করেছে যে ভারতের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধির সাথে সাথে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের নেপথ্য কূটনীতি এবং কৌশলগত দূরদর্শিতাই ১০ মে যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সহজতর করেছিল, যার ফলে একটি বৃহত্তর যুদ্ধ রোধ করা সম্ভব হয়েছিল। পাকিস্তান সরকার ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে আঞ্চলিক শান্তির জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে প্রশংসা করেছে, একজন প্রকৃত শান্তিরক্ষী হিসেবে তার ভূমিকা তুলে ধরেছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)