নয়াদিল্লি: বালুচিস্তানকে হাতের মুঠোয় রাখতে, প্রতিবাদ-আন্দোলন রুখতে এবার কড়া পদক্ষেপ পাকিস্তানের। সন্ত্রাস দমনের নামে Counter Terrorism (Balochistan Amendment) Act 2025 এনেছে তারা, এর আওতায় পুরনো আইনে সংশোধন ঘটানো হয়েছে। আরও নির্মম করে তোলা হয়েছে নয়া আইনকে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, চার্জগঠন না করে, আদালতে পেশ না করেও যাকে ইচ্ছে ৯০ দিন পর্যন্ত বন্দি করে রাখা যেতে পারে। (Balochistan News)
গত ৪ জুন বালুচিস্তান বিধানসভায় সংশোধিত নতুন আইনটি পাস হয়। নতুন আইনে দেশের পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রভূত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সেনা হোক বা গোয়েন্দা সংস্থা, বিনা বিচারে, চার্জ গঠন না করেই কাউকে ৯০ দিন বন্দি করে রাখতে পারে। শুধুমাত্র সন্দেহের বশেও এই পদক্ষেপ করা যেতে পারে, বিচারবিভাগের তদারকির কোনও প্রয়োজনই পড়বে না। (Rowlatt Act of Balochistan)
পাক সরকার জানিয়েছে, পুলিশ ও গুপ্তচর সংস্থার আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত যৌথ তদন্তকারী দল কাউকে বন্দি করার নির্দেশ দিতে পারবে, যে কাউকে শনাক্ত করতে পারবে, যখন ইচ্ছে তল্লাশি অভিযান চালাতে পারবে এবং বিচারবিভাগের অনুমোদন ছাড়াই জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে পারবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করতে পারবে। নাগরিকদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানোর যে কমিটি রয়েছে, তাতে এখন থেকে সেনা আধিকারিকদেরও উপস্থিতি থাকবে।
এই আইন পাস হতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশের সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, বালুচিস্তানের প্রতিবাদীরা একযোগে সরব হয়েছেন। তাঁদের মতে, নাগরিক শৃঙ্খলা এবং সামরিক অভিযান যে রেখার দ্বারা এতদিন বিভাজিত ছিল, তা মুছে দেওয়া হল। নাগরিকদের উপর নজরদারি চালানো, দমননীতি প্রয়োগ, বিশেষ করে বালুচিস্তানের মানুষের উপর শোষণ চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হল পুলিশ, সেনা ও গোয়েন্দাদের।
পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্য়াশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংশোধিত এই আইনের তীব্র নিন্দা করেছেন। তাঁদের মতে, সংশোধিত আইন দেশের সংবিধান তথা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। কেউ কেউ সংশোধিত এই আইনকে স্বাধীনতা-পূর্ব, ব্রিটিশ আমলের রাওলাট আইনের সঙ্গে তুলনা করছেন। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনে সেই সময় রাওলাট আইনের দ্বারা বিনা বিচারে গ্রেফতারের অনুমোদন দেওয়া হয়, যা থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা ঘটে।
যে সময় পাক সরকার বালুচিস্তানের জন্য এই আইন আনল, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ গত কয়েক মাস ধরে বালুচিস্তানের স্বাধীনতা লড়াই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। দেশের একাধিক বিচ্ছিন্নতাকামী সংগঠন ইতিমধ্যেই স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ঘোষণা করে দিয়েছে। লাগাতার সেনাকে লক্ষ্য় করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র সংগঠনগুলি। বালুচিস্তানের লাগাম ক্রমশ পাকিস্তানের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহলও। আর সেই আবহেই নয়া আইন চালু করে আন্দোলন ঠেকানোর চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে, যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।