জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বয়স মাত্র দিন তিনকে হবে। রাস্তার পাশে পড়ে ছিল ফুটফুটে বাচ্চা। সেই দুধের বাচ্চাকে তুলে এনেছিলেন রাজলক্ষ্মী কর। তারপর পরম আদরে ওই বাচ্চা মেয়েকেই বড় করে তুলেছিলেন। ভাগ্যের এমন পরিহাস যে সেই মেয়ের হাতেই প্রাণ হারাতে হল রাজলক্ষ্মীকে। এই খবরে চমকে উঠেছে গোটা ওড়িশা।
দত্তকে নেওয়া সেই বাচ্চার বয়স এখন ১৩। ক্লাস এইটের ছাত্রী। পুলিসের দাবি সেই কিশোরী তার দুই পুরুষ বন্ধুকে নিয়ে খুন করে রাজলক্ষ্মীকে(৫৪)। ঘটনা গত ২৯ এপ্রিলের। রাজলক্ষ্মী থাকতেন গজপতি জেলার পারালাখেমুন্ডিতে। পুলিস মনে করছে ওই দুই যুবকের সঙ্গে পালিত মেয়ের সম্পর্ক মেনে নেননি রাজলক্ষ্মী। পাশাপাশি তার সম্পত্তি লিখে দেওয়ারও প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।
তদন্তে উঠে এসেছে রাজলক্ষ্মীকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে খুন করার আগে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেল রাজলক্ষ্মীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকেরা। রাজলক্ষ্মীর দেহ ময়না তদন্তের পর তা ভুবনেশ্বরে দাহ করে দেওয়া হয়। তার আত্মীয়দের বলে দেওয়া হয় হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে রাজলক্ষ্মীর।
এদিকে, রাজলক্ষ্মীর মৃত্যুর পর প্রায় দুসপ্তাহ বিষয়টি ধামাচাপাই ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই ওই কিশোরীর মোবাইল ফোনটি হাতে আসে রাজলক্ষ্মীর ভাই শিব প্রসাদ মিশ্রর। সেই মোবাইল ফোনে ইনস্টগ্রাম অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে উঠে এসে খুনের গোটা পরিকল্পনার কথা। কিশোরীর সঙ্গে তার দুই বন্ধুর কথপোকথনে উঠে এসেছে কীভাবে রাজলক্ষ্মীকে খুন করতে হবে, কীভাবে তার গহনা হাতাতে হবে। ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৪ মে পুলিসে অভিযোগ করেন শিব প্রসাদ। এরপরই গ্রেফতার করা হয় ওই কিশোরী, তার বন্ধু গণেশ রথ(২১) ও দীনেশ সাহুকে(২০)।
আরও পড়ুন-‘আমাদের উপর সরকার যদি স্টিম রোলার চালায়, এখানে আগুন জ্বলবে!’ উত্তাল শিক্ষক আন্দোলন…
আরও পড়ুন-জঙ্গিদেশ পাকিস্তানের বন্ধু তুর্কিয়ে আর আজারবাইজান কি খুব ধনী? ভারতের ১০০ ওখানে কত?
গজপতি জেলার পুলিস সুপার জিতেন্দ্র কুমার পন্ডা জানিয়েছেন, প্রায় ১৪ বছর আগে ভুবনেশ্বরের রাস্তার পাশ থেকে প্রায় তিন দিনের এক শিশুকে কুড়িয়ে পান রাজলক্ষ্মী ও তার স্বামী। তারা শিশুটিকে বাড়িতে আনেন ও মেয়ের মতো আদর যত্নে বড় করে তোলেন। শিশুটিকে কুড়িয়ে পাওয়ার পরের বছরই মৃত্য়ু হয় রাজলক্ষ্মীর স্বামীর। মেয়েকে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য রাজলক্ষ্মী পারালাখেমুন্ডিতে চলে আসেন। সেখানে একটি ঘর ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন।
এদিকে কৈশোরে পা দিতেই ওই কিশোরী গণেশ ও দীনেশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। রাজলক্ষ্মী প্রতিবাদ করতেই তাদের মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকে। পুলিসের দাবি, গণেশ রথের প্ররোচনাতেই মাকে খুন করার পরিকল্পনা করে কিশোরী। গণেশ কিশোরীকে বোঝায় রাজলক্ষ্মী তাদের জীবন থেকে সরে গেলেই তারা নিশ্চিন্তে সম্পর্কে চালিয়ে যেতে পারবে। চাকা পয়সাও তাদের হাতে চলে আসবে। পরিকল্পনা মতো ২৯ এপ্রিল রাতে রাজলক্ষ্মীর খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় ওই কিশোরী। রাজলক্ষ্মী অচেতন হয়ে গেল গণেশ ও দীনেশকে ফোন করে ডাকে ওই কিশোরী। এরপর বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে রাজলক্ষ্মীকে। রাজলক্ষ্মীর হার্চের সমস্যা ছিল। তাই হার্ট ফেল বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিশোরী। কিন্তু শেষপর্যন্ত শেষরক্ষা হল না।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)