‘ও ডাক্তার হতে চেয়েছিল…’, বুকফাটা কান্না মায়ের; গুলেন বেরি সিনড্রোমে মৃত্যু কিশোরের
সন্দীপ সরকার, আমডাঙা (উত্তর ২৪ পরগনা) : গুলেন বেরি সিনড্রোমে NRS মেডিক্যালে মৃত্যু হল এক কিশোরের। উঃ ২৪ পরগনার আমডাঙার বাসিন্দা অরিত্র মণ্ডল । ২১ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। গতকাল কিশোরের মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে সেপটিক শক, GB সিনড্রোমের উল্লেখ করা হয়েছে। বারাসাত গর্ভনমেন্ট স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল অরিত্র।
চিকিৎসক ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার হাত এবং শরীরের বেশ কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় ওই হাসপাতাল থেকে NRS-এ স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। ২৩ তারিখে সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। পরিবারের অভিযোগ, NRS-এ তাদের প্রথমে ভর্তি নিতে অস্বীকার করা হয়। জোর করা হলে তাকে ভর্তি নেওয়া হয়। এর দু’দিন পরে কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত জিবি সিনড্রোম শনাক্ত হয়। কিন্তু, এই সিনড্রোম শনাক্ত হলেও, সেই সময় যে বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল বা ইঞ্জেকশন দেওয়ার দরকার ছিল, সেটা সেই সময় দেওয়া হয়নি। সেই ওষুধ সেই সময় ছিল না বলে পরিবারকে জানানো হয়। এমনই অভিযোগ উঠছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, প্লাজমা থেরাপি হবে। প্লাজমা থেরাপি হয়ও। কিন্তু, ওই কিশোরকে বাঁচানো যায়নি। গতকাল ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে জিবি সিনড্রোমের উল্লেখ করা হয়েছে।
এনিয়ে অরিত্রর মা মালবিকা মণ্ডল বলেন, “সকালে উঠেই বলছে, হাতগুলো ব্যথা করছে। তার আগের দিন রাতে বলছে, গলায় ব্যথা করছে। আমরা নীলরতনে নিয়ে গেলাম। ওখানে নিয়ে যেতেই, সেভাবে চিকিৎসা করেনি। ছুটি দিয়ে দিচ্ছিল। জোর করে ভর্তি করি। অন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ায় ওকে ভর্তি নিল। আস্তে আস্তে কথা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাস নিতে পারছে না। ২৫ তারিখে আমাদের বলা হল, ওর জিবিএস। জিবিএসের ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে। বললাম, তাহলে আপনারা দেন। বললেন, ওখানে নেই। আমরা বলি, বাইরে থেকে এনে দিই। বলে, সরকারি হাসপাতালে বাইরে থেকে অনুমতি নেই। তারপরে আমাদের বলা হল, ওকে ডায়ালিসিস করা হবে। ডায়ালিসিসের পরিবর্তে বলা হল, প্লাজমা থেরাপি হবে। বলা হল, বিপদ থেকে মুক্ত আছে। ২৭ তারিখ ৯টা ১৫র সময় আমাদের ফোন করে বলা হল, শিশু রুমের এই বেডের অরিত্র মণ্ডল ওর কন্ডিশন খারাপ। ও ডাক্তার হতে চেয়েছিল আমার ছেলে। ও পড়াশোনায় এতটাই ভালো। আজ গর্ব করে বলছি।”
কী এই গুলেন বেরি সিনড্রোম ? GB সিনড্রোম আসলে অটোইমিউন ডিসঅর্ডার। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই রোগীর স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এক কথায় স্নায়ুর এক বিরল রোগ, কিছু দিনের মধ্যেই যা শরীরকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দিতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে পা বা কোমর অবশ হয়ে যায়। একে একে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অসাড় হয়ে পড়ে। কথা বলার শক্তি চলে যায়। দুর্বল হয়ে যায় স্নায়ু এবং ফুসফুসের পেশি। শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয় এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়।
আরও দেখুন